• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আলিয়া এখন স্কুলে যায়

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০১৮  

আলিয়াকে শহরে রেখে এখানকার স্কুলে ভর্তি করানো সম্ভব হয়নি। ওর মা বাবা এদিক ওদিক অনেক স্কুল খুঁজেছে, স্কুল পেয়েছে কিন্তু ভর্তি করাতে পারেনি।

এখানকার সরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়, লটারি হয়। আলিয়ার যে বয়স সে বয়সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার কথা, কিন্তু ও যে লেখাপড়া দেরিতে শুরু করেছে। ও যেটুকু লেখাপড়া পারে সে হিসাবে ওকে প্লে ক্লাসের পড়তে হবে।

তেজগাঁও ফার্মগেট এলাকার হলিক্রস স্কুল গেইটের ভিতরে আলাদা একটা স্কুল আছে, সে স্কুলে গরিব বাচ্চারা পড়ালেখা করে। আলিয়াকে নিয়ে সেখানে যাই। স্কুলের বড় আপার সাথে কথাও হয় আমার। যেদিন প্রথম ক্লাস শুরু হয় সেদিন ওকে নিয়ে আমি যাই। বড় আপা অন্য বাচ্চাদের সাথে ওকেও পিটি ক্লাসে (এসেম্বলি) দাঁড় করায়, আমি ছবি তুলি। আলিয়ার মা সালমা সে ছবি দেখে খুব খুশি।

আফা মাইয়াডা এই ইসকুলে হড়ালেয়া কইত্তে হাইরব তো।

পারবে পারবে, সালমা তুমি একটুও চিন্তা করিও না।

সালমাকে সান্তনা দিলাম, ভর্তি করালাম, অবশ্য ভর্তি করতে টাকা লাগেনি। দুপুর ১২ টায় ক্লাস শুরু বিকেল তিনটায় ছুটি। আলিয়া কয়েকদিন ক্লাসে যায়, মাঝে মাঝে ওকে সামান্য টিফিন কিনে দিই। হঠাৎ একদিন সালমা এসে বলে-

আফা মাইয়াডারে বাড়ি হাডাই দিবো।

কেনো? কি হয়েছে?

ওর আব্বায় কয় ইয়ানো হড়ালেয়া অইবো না। ইসকুলে নাকি কিছুই হড়ায় না।

দেখি জামাইয়ের সাথে আমি কথা বলবো আসতে বলিস।

আন্নের কতা কইলে আইতো নো, হেতে ঠিক বুঝবো আঁই কিছু কইছি আন্নেরে।

কথাটা শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। আলিয়াকে স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ ১-৫০ ABC সবই শিখিয়ে দিলাম, স্কুলেও ভর্তি দিলাম কিন্তু ওকে শহরে রাখা আমার জন্যে সম্ভব নয়।

রৌদ্র অভ্র বলে আলিয়াকে আমার কাছেই রেখে দিতে কিন্তু এটা সম্ভব নয়। চারদিন পর আলিয়াকে ওর বাবা গ্রামে নিয়ে যায়। আলিয়ার মা বাবা শহরে কাজ করে, গ্রামে থাকে ওর দাদা দাদী। বছরের তিনমাস চলে গেলেও সমস্যা হয়নি স্কুলে ভর্তি করতে। কিন্তু গ্রামে ওর মন টিকে না, বারবার শহরে আসতে চায়। সালমা এসে আমায় বলে এসব।

আচ্ছা সালমা তোমার শ্বশুর শাশুড়ির কাছে কি মোবাইল আছে।

আছে আফা।

নাম্বারটা নিয়ে এসো আমি কথা বলবো আলিয়ার সাথে।

সালমা নাম্বার নিয়ে আসলে কথা বলি আলিয়ার সাথে। ওর অনেক কথা শুনি। ছোট ভাইবোন কে ছেড়ে ওর থাকতে খুব কষ্ট হয়। মা যখন কাজে যায় বাবু দুটা একা থাকে এটা আলিয়াকে খুব কষ্ট দেয়। আর গ্রামের স্কুল অনেক দুরে, ওকে হেঁটে হেঁটে যেতে হয়। তাই ও গ্রামে থাকতে চায় না।

কথা বলতে গিয়ে বুঝতে পারি আরো বুঝতে পারি, থাকতে না চাওয়ার আরো বিষয় আছে। এখানকার স্কুলে স্কুল ড্রেস ছিলো ওকে বানিয়ে দিব বলেছিলাম। গ্রামের স্কুলে ড্রেস থাকলেও পরা বাধ্যতামূলক নয়। তাই ওকে ড্রেস বানিয়ে দেয় নি, তাই ওর মন বেশি খারাপ। সালমার সাথে আলাপ করে আলিয়ার স্কুলের ড্রেস বানিয়ে দিতে বলি। আর আলিয়াকে বলি বাবুদের জন্যে চিন্তা করিস না, ওরা গ্যারেজে খেলা করে।

স্কুল ড্রেসের সাথে আলিয়ার জন্যে একটা ব্যাগ কিনে পাঠাই। এসব দেখে ও খুব খুশি হয়। প্রতিদিন ড্রেস পরে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যায় ও। মজার বিষয় হলো সালমা আমাকে আফা ডাকে, আলিয়াও আফা ডাকে। মাঝে মাঝেই মোবাইলে কথা হয় আলিয়ার সাথে। ও নিজেই স্কুলের গল্প বলে। আরো বলে ও অনেক কিছু শিখছে। এখন বর্ণ মিলিয়ে মিলিয়ে ও শব্দ বানাতে পারে। আমায় বলে-

আপা আমি কিন্তু বানান করে পড়তে পারি।

আচ্ছা বলতো আপা কি করে হয়?

হাহাহাহা করে হেসে উঠে বলে--

স রে আ প আ কার পা আপা।

কিরে আগে যে আফা বলে ডাক দিতি।

আমি এখন শিখে গেছি আপা, আমি এখন প্রত্যেকদিন স্কুলে যাই।

ঠিক আছে, কয়েক ক্লাস পাশ দে, পরে ঢাকায় আসিস।

ঠিক আছে আপা।