• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

‘চরিত্র’ এক রুপি!

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০১৮  

বলিউড তারকা নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী। অনেক জনপ্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে একজন তিনি। সিনেমায় তার দাপটে অভিনয় এরই মধ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। সেই সঙ্গে তার পারিশ্রমিকের অঙ্কটাও বেড়েছে।

কিন্তু ভালো গল্প পেলে অনেকটা ফ্রিও কাজ করেন নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী। তারই প্রমাণ মিলেছে কয়েক মাস আগে মুক্তি পাওয়া নিজের অভিনীত মান্টো সিনেমায়।

এতে নওয়াজউদ্দীন সিদ্দিকীর ‘এক রুপি’ পারিশ্রমিক নেয়ার বিষয়টা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। কিছুদিন আগে এক সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকারে মান্টো সিনেমার পরিচালক নন্দিতা দাস নিজেই এই তথ্য জানিয়েছেন। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্যে নওয়াজ পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়েছেন মাত্র এক রুপী!

জানা গেছে, এই সিনেমার গল্পটা তার প্রচণ্ড ভালো লেগে গিয়েছিল। তাছাড়া এই চরিত্রটাকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পেরে মানসিকভাবে দারুণ তৃপ্ত ছিলেন নাওয়াজ। তাই নাকি এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্যে পারিশ্রমিক নেয়াটা প্রয়োজন মনে করেননি তিনি।

মান্টো সিনেমাটা মূলত উর্দুভাষী লেখক সাদাত হাসান মান্টোর বায়োপিক। বৃটিশ ইন্ডিয়ায় জন্ম নেয়া এই মুসলিম সাহিত্যিক বরাবরই প্রথা ভাঙার ডাক দিয়েছেন, স্রোতের বিপরীতে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন। হাতে কলম তুলে নিয়ে লিখেছেন বঞ্চিত আর অসহায়ের পক্ষে। সমাজ আর সিস্টেমের নানা অনিময়ের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার, আর এ কারণে অজস্র বিড়ম্বনাতেও পড়তে হয়েছে মান্টোকে।

মোট ছয়বার তার বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ আনা হয়েছে। এরমধ্যে একবার দেশভাগের পরে যখন তিনি পাকিস্তানের অধিবাসী ছিলেন। কিন্তু কোনবারই আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তবে বারবার সন্দেহের তীর তার দিকে ছোড়া হয়েছিল। আনা হয়েছিল হেনস্তার নানা অভিযোগ।

এদিকে নন্দিতাও জানিয়েছেন, গল্পটা লেখার সময় মান্টো হিসেবে তিনি শুধু নওয়াজকেই দেখতে পান। তার মতে, উর্দুভাষী লেখক সাদাত হাসান মান্টোকে যে নির্মমতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তার চরিত্রে অবশ্য অনেক আবেগ থাকবেই। আমরা তার সম্পর্কে যা পড়েছি, বা যে ধরণের ডার্ক হিউমার তার মধ্যে ছিল, সেটাকে আমি যখন আঁকতে বসেছি তখনই নওয়াজ ছাড়া অন্য কাউকে আমার মনে ধরেনি।

গল্পটা নিয়ে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলেছি, চরিত্রটার ভেতরে কীভাবে ঢুকতে হবে সে সব নিয়ে নওয়াজের সঙ্গে বসেছি অনেকবার। এতে আমার কখনো মনে হয়নি আমি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

নন্দিতা আরো বলেছেন, অভিনেতা বা অভিনেত্রীরা সবসময়ই কিছু ব্যতিক্রমী চরিত্রে নিজেকে ফুটিয়ে তোলার জন্যে ব্যাকুল হয়ে থাকেন। আমি নিজেও একজন অভিনেত্রী, তাই এই জিনিসটা আমি অনুভব করতে পারি। মান্টোও তেমন একটা চরিত্র, যেখানে অভিনয়ের স্বাধীনতাটা অনেক বেশি।

শেকল ভেঙে নিজের সামর্থকে আবিস্কার করার বিশাল একটা সম্ভাবনা ছিল এই ছবিতে। অনেকেই হয়তো এই চরিত্রটা করতে চাইতেন, কিন্ত পারিশ্রমিকের জায়গাটা থেকে অনেককেই আমি হয়তো সন্তুষ্ট করতে পারতাম না। নওয়াজ আমাকে সেই চাপটা থেকে পুরোপুরি মুক্তি দিয়েছেন।

ও বলেছিল, এই চরিত্রটার মধ্যে অন্যরকম একটা জীবন আছে। তাই এতে তার কাছে পারিশ্রমিক কোন ফ্যাক্ট নয়। ‘মান্টো’ সিনেমায় নওয়াজের সঙ্গে আরো অভিনয় করেছেন ঋষি কাপুর, পরেশ রাওয়াল, জাভেদ আখতার, রাজশ্রী দেশপাণ্ডে এবং ঋষিকা দুজ্ঞাল।

ঋষি কাপুরও নাকি এই সিনেমার গল্প শুনেই হ্যাঁ বলে দিয়েছিলেন। নন্দিতা যেদিন স্ক্রিপ্টটা নিয়ে তার বাসায় গেলেন, এক বসায় তার মুখে গল্পটা শুনেই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পারিশ্রমিক বা শিডিউল নিয়ে কথাবার্তা বলার আগেই ঋষি কাপুর জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি থাকছেন এই প্রোজেক্টে। বিখ্যাত গীতিকার জাভেদ আখতারকেও এই সিনেমায় সম্পূর্ণ আলাদা একটা অবতারে দেখা গেছে। এক রুপি পারিশ্রমিক নেয়ার ব্যাপারটা নওয়াজের জন্যে একদম নতুন কিছু নয়, এর আগে ‘হারামখোর’ সিনেমাতেও মাত্র এক রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন এই অভিনেতা।

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে মুক্তি পাওয়ার পরে ভারতের বাইরে বেশ কয়েকটা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে ‘মান্টো’। দর্শক-সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে সিনেমাটা। আর ভারতে ‘মান্টো’ মুক্তি পেয়েছে গত ২১ সেপ্টেম্বর।