• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

নিউটন সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৮  

বিজ্ঞান নিয়ে আমাদের আলোচনার শেষ নেই। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আমরা আজকের এই বিশ্বের অত্যাধুনিক তথ্য সামগ্রি পেয়েছি। তবে এই বিজ্ঞানের পেছনে রয়েছে অনেক গুণীজন। যারা না থাকলে হয়ত আমরা এই সব কিছু সম্পর্কে জানতেই পারতাম না। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক বিশেষ ব্যাক্তি আছেন যারা বিজ্ঞানের উন্নতি সাধন করেছিলেন। তেমন এক জনকে নিয়ে ডেইলি বাংলাদেশের আজকের আয়োজন। আজ থাকছে স্যার আইজ্যাক নিউটন সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য।

বিজ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখায় তিনি গবেষণা করে গেছেন। তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই যেন রত্ন ফলেছে। তার বিভিন্ন গবেষনাকে ক্রেন্দ্র করে এক কালে বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়েছিল বিশাল আলোড়ন।

মধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা আসলেই সবার আগে যে নামটি মনে পড়ে তিনি হলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। শিক্ষিত মানুষ মাত্রই আইজ্যাক নিউটন এর নাম শুনেছেন। তিনি একাধারে পদার্থবিদ, রসায়নবিদ, দার্শনিক, জ্যোতির্বিদ, ধর্মতত্ত্ববিদ, গণিতবিদ ও অর্থনীতিবিদ ছিলেন। নিউটনের জীবন কাহিনী খুবই ঘটনাবহুল অদ্ভুত এবং রহস্যময়। এই মহান বিজ্ঞানীর জীবনের কিছু মজার গল্প তুলে ধরছি আজকে আপনাদের জন্য।

স্যার আইজ্যাক নিউটনের জন্ম তারিখ নিয়ে একটি মজার কনফিউশন আছে, তার জন্ম তারিখ গণনা করা হয় ৪ জানুয়ারি ১৬৪২ সালে। তিনি জন্মে ছিলেন বড় দিনে। কিন্তু বড় দিন তো ২৫ ডিসেম্বর। তাহলে রহস্য টা হল তার জন্মের সময় ১৬৪২ সালে ইংল্যান্ডের জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে সাল গণনা করা হতো তখন। তখনও গ্র্যাগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু হয়নি। জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে নিউটনের জন্ম ২৫ ডিসেম্বর যখন থেকে ১৭৫২ সাল ইংল্যান্ডে গ্র্যাগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু হয় তখন থেকে এর সাথে মিলিয়ে ১১ দিন পিছিয়ে নিউটনের জন্ম তারিখ হিসাব করা হয় ৪ জানুয়ারি।

নির্দিষ্ট সময়ের ১০ থেকে ১২ দিন আগে জন্মে ছিলেন নিউটন। আর যে কারণেই জন্মের সময় তিনি ছিলেন খুবই দূর্বল। তিনি বেঁচে থাকবেন কি না সেটাই ছিল দুশ্চিন্তার কারণ। তিনি জন্মের সময় কতটা ছোট ছিলেন এর বর্ণনা দিতে যেয়ে তার মা বলেছিলেন একটা কাপ এর মধ্যে নিউটনকে রাখা যেত। সৃষ্টিকর্তার তাকে নিয়ে অনেক বড় পরিকল্পনা ছিল বলেই হয়তো সে যাত্রায় তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। মজার ব্যাপার হল আইজ্যাক নিউটনের বাবার নাম ও আইজ্যাক নিউটন ছিল।

নিউটনের জন্মের কয়েক মাস আগেই তার পিতা মারা যান। তার মা হেনা নিউটন স্বামীর স্মৃতি হিসেবে পুত্রের নাম ও রেখেছিলেন আইজ্যাক নিউটন। নিউটনের ছোট বেলাতেই তার মা আর একটি বিয়ে করেন। অবাঞ্চিত অবস্তাতেই এক রকম নিউটনের ছোটবেলা কাটে তার দিদার কাছে। বিধবা মায়ের সাথে তার ছোটবেলা কেটেছে মাত্র ৩ বছর।

নিউটন ব্যাক্তি জীবনে খুব নিঃসঙ্গ ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তিনি অযথাই মানুষের সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে পরতেন। কোনো কোনো ইতিহাসবিদদের মতে তিনি প্রতিবন্ধি ছিলেন। অথবা তার মধ্যে দ্বৈত সত্ত্বা কাজ করত। নিউটন ছিলেন তোতলা। কথা বলার সময় তিনি আটকে যেতেন। বিখ্যাত মানুষদের মধ্যেও একই ধরনের সমস্যা ছিল।

ভীষণ বদমেজাজি আর জেদি ছিলেন আইজ্যাক নিউটন। তিনি নিজের সব কাজের তালিকা তৈরি করতে পছন্দ করতেন। তার তৈরি একটি তালিকা ১৯ বছর পর্যন্ত ৪৮টি অপরাধের স্বীকারোক্তি ছিল। এর তালিকাই ছিল তার মা এবং সৎ বাবাকে বাড়িসহ জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার হুমকি। বোনকে ঘুষি মারা মা ও বোনের সাথে খিটমিট এরকম আরো অনেক কিছু।

স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন নিউটন ছাত্র হিসেবে খুবই অমনোযোগী ছিলেন কিন্তু সে সময় তিনি একটি সূর্যঘড়ি পানি দ্বারা চালিত একটি ঘড়ি যান্ত্রিক ঘোড়ার গাড়ি এমন আরো অনেক কিছু তৈরি করেছিলেন। যেগুলো ছিল তার প্রতিভার প্রথম প্রকাশ। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সাইজার হিসেবে কাজ করতেন। সাইজার বলতে সেই সব ছাত্রদের বোঝায় যারা অন্য ছাত্রদের ফুট ফরমায়েশ খাটার বিনিময়ে সামান্য কিছু আর্থিক সাহায্য পেয়ে থাকে।

নিউটনের মাথায় আপেল পড়ার যে ঘটনাটি বহুলভাবে প্রচলিত আছে, সে রকম কোনো ঘটনা কখনো ঘটেনি বলে ইতিহাসবিদদের ধারণা। অন্তত পক্ষে, যেভাবে ঘটনাটির ব্যাখ্যা আছে সেভাবে তো নয়। নিউটনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী তিনি যখন লাইব্রেরীর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলেন তখন একটি গাছ থেকে অ্যাপেল পরতে দেখে মধ্যাকর্ষণ চিন্তা তার মাথায় আসে। নিউটনের ল্যাবরেটরিতে একবার আগুন লেগে তার বিশ বছরের গবেষণার কাজ নষ্ট হয়ে যায়। আগুন লাগার কারণ হিসেবে তিনি তার পোষা কুকুরকে দায়ি করেন কিন্তু বাস্তবে তার পোষা কুকুর ছিল এরকম কোন প্রমাণ ইতিহাসবিদদের কাছে নেই।

তাদের ধারণা ল্যাবরেটরির খোলা জানালা দিয়ে আসা দমকা বাতাসে মোমবাতি উল্টে সেখানে আগুন লেগে থাকতে পারে। নিউটনের কখনোই কুকুর ছিল না। তারপরও তার কুকুরের কাহিনী যুগ যুগ ধরে মানুষের মুখে মুখে রয়ে গেছে। নিউটন সম্পর্কে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় সম্ভবত এটি, অপরসায়ন শাস্ত্রের প্রতি তার ভীষণ অনুরাগ ছিল। বিভিন্ন ধাতুকে কিভাবে সনাই রূপান্তর করা যায় তা এই শাস্ত্রের আলোচ্য বিষয়। নিউটন এই বিষয়ে ১৬৯টি বই লিখে ছিলেন। কিন্তু তার জীবন দশায় এর কোনোটাই প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। কেননা সে সময়ে আইন অনুযায়ী সোনা ও রূপা তৈরি করা গুরুতর অপরাধ বলে গণ্য করা হতো।

নিউটনের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল পরশ পাথরের সন্ধান করা। যেটা দ্বারা সব ধাতুকে সোনায় রুপান্তরিত করা যাবে। নিউটন ইংল্যান্ডের রাজ কোষাগারে প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিল। সে সময় তিনি ব্রিটিশ পাউন্ডের মানদণ্ড হিসেবে রূপার পরিবর্তে সোনার ব্যবহারের প্রচলন শুরু করেন। যা পৃথিবীতে মুদ্রার ইতিহাসে আমূল পরিবর্তন বয়ে আনে।

জীবনের এক পর্যায়ে নিউটন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ১৬৮৯ সালে এক বছরের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিজ্ঞানী হিসেবে পৃথিবীজোড়া সুখ্যাতি অর্জন করলেও রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি খুব একটা ভালো ছিলেন না। প্রচলিত আছে তিনি এক বছর পার্লামেন্টের সদস্য থাকাকালে মাত্র একবার কথা বলেছিলেন। সেটা আবার একজনকে শুধুমাত্র জানালা লাগানোর জন্য।

নিউটন অবিবাহিত ছিলেন। তিনি চিরকুমার ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। কোন নারীর সাথে তার প্রনয়ের সম্পর্ক ছিল এরকম কোনো প্রমাণও কখনো পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানি হয়েও তিনি ছিলেন ধর্মানুরাগী। আবার ধর্মানুরাগী হয়েও নিউটন গাওরা ছিলেন না। তিনি বাইবেল'র গ্রন্থগত ভুলের সমালোচনা করে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। শুধুমাত্র বাইবেল ভালো মতো বোঝার জন্য তিনি হিব্রু ভাষা শিখেছিলেন। তিনি জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় বিজ্ঞান চর্চা বাদ দিয়ে বাইবেলের গ্রন্থগত ভুল খুঁজে বের করার কাজে ব্যয় করেন। অদ্ভুত হলো খুব ধার্মিক হওয়া সত্ত্বেও তিনি ভূত প্রেতাত্মা শয়তান এইসবে বিশ্বাস করতেন না।

জীবনে শেষভাগে এসে নিউটন দুইবার মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তার অদ্ভুত আচরণের কারণে সারা ফেলেছিলেন। মানসিক অসুস্থতার জন্য তিনি নিজে তার ঘুমের অভাবকে দায়ি করেছিলেন কিন্তু ইতিসাহবিদদের ধারণা, তার অপরসায়ন চর্চার কারণে রাসায়নিক বিষক্রিয়া এবং দীর্ঘকালীন বিষণ্ণতাই তার অসুস্থতার কারণ ছিল। নিউটন মারা গিয়েছিলেন ১৭২৭ সালের ২০ মার্চ যেটা বর্তমানের গ্র্যাগরিয়ান ক্যালেন্ডারে গণনা করা হয় ৩১ শে মার্চ। তাকে সমাধি করা হয় ওয়েস্ট মিস্টার আভেতে। তিনিই প্রথম বিজ্ঞানি যাকে স্যার সম্মানে ভূষিত করা হয়। তার মৃত্যুর প্রায় এক শতাব্দী পরে ১৮১৬ সালে তার দাঁত নিলামে বিক্রি হয় ৩৫০০০ ডলারে। গিনেস বুক অফ রেকর্ডে এটি এই পর্যন্ত পৃথিবীতে বিক্রি হওয়া সব থেকে দামি দাঁত।