• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

পরাজয়কে জয় করবেন যেভাবে…

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০১৮  

না’ শব্দটি কেউই শুনতে চায় না! তবুও সকলেই জীবনে প্রত্যাখ্যাত হয়। কেউ ছোট বিষয় যেমন অনেকবার ফিল্টার করা প্রোফাইল ফটোতে লাইক না পেয়েও প্রত্যাখ্যাত হন আবার কেউ হয়তো বা পছন্দের চাকরি থেকে প্যাত্যাখ্যাত হন। তবে এসবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই৷ হতে পারে প্রত্যাখ্যানগুলোই আপনার জন্য ভালো। স্টিভ জবসের মতো সফল ব্যক্তিও প্রত্যাখ্যানের শিকার হয়েছিলেন। অ্যাপল কোম্পানী থেকে চাকুরি হারানোর বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, “এটাই সম্ভবত আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে ভালো ঘটনা।”

জে.কে.রাউলিং, রিচার্ড ব্রানসন থেকে শুরু করে অপরাহ উইনফ্রে পর্যন্ত সবাই প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। তবে তারা প্রত্যাখ্যানকে সাফল্যের সিড়িতে এগিয়ে যাওয়ার ভীত হিসেবে তৈরি করেছেন। যেকোনো বিষয়ের প্রত্যাখ্যান আপনাকে শিক্ষা দেবে কীভাবে আপনি আরো দৃঢ় হয়ে সাফল্যের রাস্তায় ফিরে আসতে পারেন এবং এই দৃঢ়তা অর্জনের জন্য আপনাকে আরো কতোটা সুক্ষ্ণ, দক্ষ ও নিরলস হতে হবে। রিচার্ড ব্রানসন বলেছেন, ব্যর্থতা আর প্রত্যাখ্যান দুটোই জীবনের অংশ এবং কিভাবে আপনি সেটা নিয়ে কাজ করবেন এতেই আপনার কাজের সাফল্য নির্ভর করে।

ভুলগুলো ভুলে যান

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ কোনো কাজে ‘না’ শব্দটি শুনলে তখন সে স্বাভাবিকভাবেই কষ্ট পাবেই। মানব মস্তিষ্ক এভাবেই কাজ করে। তবে ছোট ছোট প্রত্যাখ্যান ভালো। কারণ এতে ধীরে আমাদের মধ্যে বড় ধরণের প্রত্যাখ্যান সহ্য করার ক্ষমতা আসে। কিন্তু প্রত্যাখ্যান ছোট হোক বা বড়, প্রত্যাখ্যানের শিকার হলে আপনি মানসিকভাবে কষ্ট পাবেনই এমনকি যতটুকু আপনি ভাবেন তার চেয়েও বেশি মানসিক কষ্ট পাওয়াটাই সচরাচর হয়ে থাকে। আমাদের মস্তিষ্ক এভাবেই কাজ করে।

কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক এভাবেই কেনো কাজ করে? উত্তর হিসেবে বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা দেন, প্রাচীনকালে মানুষ যখন শিকারী ছিলো এবং শিকারের মাধ্যমে জীবন-যাপন করতো, তখন থেকেই মানুষ দলবদ্ধভাবে থাকে।কারণ একা শিকার করা অনেক কঠিন এমনকি মৃত্যুর ভয়ও অনেক বেশি থাকে। আবার কেউ দল থেকে বিতাড়িত হলেও মৃত্যুর ভয় থাকে। তাই আদিমকাল থেকেই মানুষ তার মস্তিষ্কে এমন ধারণা নিয়েই চলতো যার ফলশ্রুতিতেই কারো দ্বারা প্রত্যাখ্যানের শিকার হলে মানসিক কষ্ট হয়। মনোবিজ্ঞানী গাই উইঞ্চ বলেছেন, আমরা কখনো নিজেরাই নিজদেরই কষ্ট দেই এর কারণ হচ্ছে নিজেদের ভুলগুলোকে নিয়ে মানব মস্তিষ আলাদা তালিকা করে এবং সেগুলো নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করলে নিজেকে নিজের কাছেই অসহ্য লাগতে শুরু করে। তাই তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, আগের সব ভুল ত্রুটি নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করতে এবং নিজেকে ভালোবাসতে।

প্রত্যাখ্যান ও ব্যক্তিত্ব

প্রত্যাখ্যান শব্দটি শুনলে আমাদের মাথায় যে চিন্তাটি প্রথম আসে সেটি প্রেমের প্রত্যাখ্যান। এক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যানের পরে আপনার মনে অনেকদিন এর রেশ থাকে কারণ আপনি ভাবেন অন্য ব্যক্তির দ্বারা আপনার ব্যক্তিত্বহানি হচ্ছে। অনেক সময় যিনি প্রত্যাখ্যানের শিকার হন তিনি এমনভাবে ভেঙ্গে পড়েন যেটা তার জীবনের জন্যই বড় ক্ষতিকর। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন,“সব সমস্যা আমারই”, “আমার সঙ্গেই কেন এমন হয়”, “আমি তার মতো আর কাউকে পাবো না বা এমন চাকুরি আর মিলবে না”। এসব না করে আপনি দেখুন কী কী পরিবর্তনের মাধ্যমে আরো ভালো কিছু করা যায়!

ব্যর্থকে আলিঙ্গন

সারা ব্ল্যাকলির বাবা তাকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতেন, এই সপ্তাহে কি কি করতে ব্যর্থ হলে? সারার মতে, বাবা তাকে ও ভাইকে ব্যর্থ হতে বলতেন, যাতে পরবর্তীতে সেই ভুল শুধরে সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সাফল্যের সোপানে পা বাড়াতে পারেন। তার মতে ব্যর্থতা হচ্ছে, চেষ্টা না করা বনাম সাফল্য না পাওয়া। আরেক মনোবিজ্ঞানী হ্যারিয়েট লার্নার বলেন, “কেউ যদি প্রত্যাখ্যানের শিকার হতে না চান তাহলে কোনো কোণায় গিয়ে বসুন আর চুপ করে থাকুন। যদি আপনি সাহসিকতার সহিত বাঁচতে চান তাহলে আপনাকে প্রত্যাখ্যানকে আলিঙ্গন করতেই হবে।

ব্যর্থতা বনাম শিক্ষা

ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার কারণে মানবজাতির আজ এতো উন্নত। প্রত্যাখ্যানের চিন্তায় পড়ে থাকলে এসব সম্ভব হতো না। বর্তমানে মানুষ প্রত্যাখ্যানকে স্বাভাবিকভাবে নেয়ার চিন্তা করছে। কারণ কোনো কিছুর কষ্ট নিয়ে যতই সময় যাবে সেটা নিয়ে ভাবা বন্ধ না করলে সেই কষ্ট মনের মধ্যে থেকেই যায় আর মানসিক প্রশান্তি ছিনিয়ে নেয়। প্রত্যাখ্যান হোক সেটি ব্যক্তিগত বা পেশাদারির, তা ভেবে কষ্ট পেলে কোনো লাভ নেই। হ্যাঁ, কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক, তবে যেনো সেই কষ্ট শিকড় ছড়িয়ে যেনো মানসিকভাবে আপনাকে দূর্বল না করে দেয়। সেক্ষত্রে আপনি প্রত্যাখ্যানকে নেতিবাচক হিসেবে না ভেবে এটিকে নিজেকে ঝালাইয়ের হাতিয়ার হিসেবে ভাবুন। যেতে যেতে টেইলর সুইফটের একটি অমৃত কথা বলে যাই, “আপনিই নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলুন যেন আপনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে যারা তারাই আপনাকে পেতে চায়”।