• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

শুভ জন্মদিন আসাদুজ্জামান নূর

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০১৯  

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শ্রদ্ধেয় অভিনেতা। নামটিই যার আলাদা একটি পরিচয়। নাটকে অভিনয় করে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা তার। এই বর্ণাঢ্য মানুষটির জীবনে যোগ হলো আরো একটি বসন্ত।

আজ গুণী এই অভিনেতার জন্মদিন। তিনি ৭৩ বছর বয়সে পা রাখলেন। ১৯৪৬ সালে ৩১ অক্টোবর নীলফামারী জেলায় তার জন্ম। তার এবারের জন্মদিনটা কাটছে যুক্তরাজ্যে। সাত দিনব্যাপী নাটকের এক উৎসবে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যে গেছেন আসাদুজ্জামান ‍নূর। আগামী ৪ নভেম্বর উৎসব শেষ করে তার ঢাকায় ফেরার কথা। দেশে ফিরেই ব্যস্ত হবেন অভিনয়ে।

বিগত এক দশক তিনি অভিনয়ে নিয়মিত নন। রাজনীতিতে সরব হয়ে অভিনয়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তবে আবারো একটু একটু করে অভিনয়ে ফিরছেন তিনি। আসাদুজ্জামান নূরের অভিনয় জীবন শুরু হয় মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে। দেশের অন্যতম সেরা নাট্য সংগঠন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যুক্ত রয়েছেন। মঞ্চে ‘নূরুল দীনের সারাজীবন’ নাটকে তার অভিনয় এখনো দাগ কাটে অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীদের হৃদয়ে।

মঞ্চ, আবৃত্তি- সবখানেই সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে ‘বাকের ভাই’ খ্যাত এই অভিনেতার। এক থিয়েটারকর্মী থেকে হয়ে উঠেছেন অসাধারণ এক অভিনেতা। তিনি এখনো কালজয়ী হয়ে আছেন ‘বাকের ভাই’ চরিত্রে।

আগামী ২৯ নভেম্বর নতুন একটি নাটক নিয়ে মঞ্চে হাজির হবেন এই অভিনেতা। পান্থ শাহরিয়ারের পাণ্ডুলিপি ও নির্দেশনায় নাটকটি মঞ্চে আনছে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। নাটকের সম্ভাব্য নাম ‘কালো জলের কাব্য’। এই নাটকে আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে অভিনয় করবেন অপি করিম।

তার বাবা-মা ছিলেন দুজনই স্কুলশিক্ষক। দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে আসাদুজ্জামান নূর সবার বড়। ১৯৮২ সালে ডা. শাহীন আকতারকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে সুদীপ্ত লন্ডনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে দেশে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত। মেয়ে সুপ্রভা সেও লেখাপড়া শেষ করেছে।

প্রথম জীবনে ছাত্রাবস্থায় তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়ান। ১৯৬২ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আসাদুজ্জামান নূর মুক্তিযুদ্ধে ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি।

জীবনের দ্বিতীয় ভাগে মন দিয়েছিলেন অভিনয়ে। তিনি কখনও ‘এই সব দিনরাত্রির শফিক’ কখনও ‘অয়োময়’ এর ছোট মীর্জা চরিত্রে অভিনয় করে লাখ লাখ দর্শক-শ্রোতার প্রশংসা ও ভালোবাসা পেয়েছেন। তবে কিংবদন্তি হয়ে আছেন ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বাকের ভাই চরিত্রে। নক্ষত্রের রাত নাটকে তার হাসান চরিত্রটিও মনে রেখেছে মানুষ। এসব নাটক ছিল প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের রচিত।

একই লেখকের রচনা ও পরিচালনায় ‘আগুনের পরশমনি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেও নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে কেবল অভিনয়ের ভুবনে নিজেকে সমৃদ্ধ করেই চলেছেন। সর্বশেষ গেল আগস্টে হাসান রেজাউল পরিচালিত জলছবি নামে একটি টেলিফিল্মে দেখা গিয়েছিল আসাদুজ্জামান নূরকে।

আসাদুজ্জামান নূর মূলত থিয়েটারের মানুষ। মঞ্চ থেকেই তার মতো অভিনেতার উত্থান। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে তিনি বহুকাল ধরে কাজ করে আসছেন। এই দলের জন্য বিদেশি একটি নাটকের অনুবাদ করেছিলেন নূর। জনপ্রিয় সেই প্রযোজনাটির নাম ‘দেওয়ান গাজির কিসসা’।

আসাদুজ্জামান নূর জনপ্রিয় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এশিয়াটিক সোসাইটি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, নাগরিকসহ অনেক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। অভিনেতা, আবৃত্তিকার, অ্যাড নির্মাতা, ব্যবসায়ী, সফল রাজনীতিবিদ এবং সর্বশেষ একজন আদর্শ পিতা ও একজন আদর্শ স্বামী তিনি। তবে আসাদুজ্জামান নূর নিজেকে একজন আত্মপ্রত্যয়ী মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন।