• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সম্পদ যখন আশীর্বাদ, যখন অভিশাপ

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

জীবন চলার পথে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। পরিসংখ্যান বলছে, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দারিদ্র্য ও বেকারত্ব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে যারা কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নয়, তারা অসচ্ছলতার কারণে ধীরে ধীরে অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। এ জন্য রাসুল (সা.) দরিদ্রতা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। আব্বাস (রা.) থেকে বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, হে আল্লাহ, আমার দেহে সুরক্ষা দাও; হে আল্লাহ, আমার কানে সুরক্ষা দাও; হে আল্লাহ, সুরক্ষা দাও আমার চোখে। তুমি ছাড়া কেউ উপাস্য হওয়ার যোগ্য নয়। হে আল্লাহ, কুফর ও দারিদ্র্যের মুখাপেক্ষিতা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ, তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আজাব থেকে। তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৯০)

মানুষের জীবনে অর্থ স্বাচ্ছন্দ্য সৃষ্টি করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা। আর স্থায়ী সৎকাজ তোমার রবের কাছে প্রতিদানে উত্তম এবং প্রত্যাশাতেও উত্তম।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত : ৪৬)

অর্থ মানুষের জীবনে অনর্থ সৃষ্টি করে। সম্পদ মানুষকে অন্ধ করে ছাড়ে। অর্থের লালসা মানুষকে পশুর স্তরে নামিয়ে আনে। জীবন চলার জন্য অর্থের প্রয়োজন যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনি অর্থ সম্পদের মোহ এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তাই ইসলাম অর্থ-সম্পদে মোহগ্রস্ত হতে নিষেধ করে। আল্লাহ বলেন, ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদের গাফিল রাখে তোমরা কবরস্থানে পৌঁছে যাওয়া পর্যন্ত।’ (সুরা তাকাসুর, আয়াত : ১-২)

কাব ইবনে ইয়াজ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (রা.) বলেন, প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোনো না কোনো ফিতনা আছে। আর আমার উম্মতের ফিতনা হলো ধন-সম্পদ। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩৬)

অন্যদিকে হালাল জীবিকার অনুসন্ধান করা ফরজ। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে সম্পদ আহরণকে ইসলাম নিরুৎসাহী করে না। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত লিপ্সা সমর্থন করে না। কাব ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেওয়া হলে পরে তা যতটুকু ক্ষতিসাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে, বিশেষত এই ক্ষতি ধর্মের ওপর। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৬)

সম্পদ হলো দোধারী তলোয়ার। এর সঠিক ব্যবহার না হলে তা সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ এর চাকচিক্যের মোহে পরে আমি যেন নাশ না হই। খাওলা বিনতে কাইস (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, এ পার্থিব ধন-সম্পদ হলো সবুজ-শ্যামল, মনোরম ও সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি সঠিক পন্থায় প্রয়োজন অনুসারে তা গ্রহণ করে তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয়। এমন অনেক লোক আছে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দেওয়া এই সম্পদ নিজেদের খেয়াল-খুশি অনুসারে ভোগ-ব্যবহার করে। কিয়ামত দিবসে তাদের জন্য জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নেই। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৪)

রিজিক নির্ধারিত, লোভী বঞ্চিত। নির্ধারিত রিজিক আসবেই। আমর ইবনে আউফ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের জন্য দরিদ্রতার আশঙ্কা করি না; বরং আমি আশঙ্কা করি যে তোমাদের কাছে দুনিয়ার প্রাচুর্য আসবে যেমন তোমাদের আগের লোকদের কাছে এসেছিল, তখন তোমরা সেটা পাওয়ার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতা করবে, যেভাবে তারা করেছিল। আর তা তাদের যেভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরও তেমনি ধ্বংস করে দেবে। (বুখারি, হাদিস : ৪০১৫)

মহান আল্লাহ আমাদের সম্পদের অবৈধ উপার্জন ও ব্যবহার থেকে হেফাজত করুন।