• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের ছয় বছর পূর্তি আজ

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২১  

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের ছয় বছর পূর্তি আজ ৩১ জুলাই মধ্য রাতে। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কুটনৈতিক প্রচেষ্টায় ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে ৬৮টি মোমবাতি জ্বালিয়ে দু’দেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২ টি ছিটমহল বিনিময় করা হয়। 

সেই থেকে এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশের সর্ববৃহৎ বিলুপ্ত ছিটমহল কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়া বাসীসহ বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ১১১টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মানুষরা নানা আয়োজনে ছিটমহল বিনিময় বর্ষপূর্তী পালন করছে। 

শনিবার মধ্যরাতে ৬৮টি মোমবাতি প্রজ্বলন ও বড় মশাল প্রজ্জ্বলিত করে ছিটমহল বিনিময়ের ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি ও ৭ম বর্ষে পর্দাপন অনুষ্ঠান করোনাকালীন সময়ে অল্প পরিসরে অনুষ্ঠানিকভাবে পালন করবে দাসিয়ারছড়া বাসীসহ বাংলাদেশ অভ্যন্তরের ১১১টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মানুষ। 

কর্মসূচিতে রয়েছে বাংলাদেশ-ভারত বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে দাসিয়ারছড়ার সমন্বয় পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা, ৬৮ মোমবাতি ও ৬ টি মশাল প্রজ্জ্বলন, কেককাটা ও দোয়া মাহফিল। 

বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রজ্জ্বলিত হবে ৬৮ মোমবাতি। এতে সরকার দলীয় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। 

বাংলাদেশ-ভারত বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা ছিটমহল বাসীরা দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দিত্ব জীবন যাপন করেছিলাম। এই বন্দিত্ব দশা থেকে মুক্ত হতে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির ব্যানারে তীব্র আন্দোলন করেছি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ-ভারত সরকারের কটুনৈতিক প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ছিটমহল বিনিময় হওয়ায় এখন বাংলাদেশ নামের স্বাধীন ভুখন্ড পেয়েছি। আমরা এখন গত ৬ বছর ধরে মুক্ত পাখির মতো জীবন কাটাচ্ছি। 

তিনি আরো বলেন, এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর নানা কর্মসূচী পালন করছি। এবার করোনাকালীন সময় তাই অল্প পরিসরে বাংলাদেশ-ভারত বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে কর্মসূচি পালন করা হবে। কর্মসূচীতে থাকবে শনিবার রাত সাড়ে ১১ টায় দাসিয়ারছড়ার সমন্বয় পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা, ১২ টা ১ মিনিটে ৬৮ মোমবাতি ও ৬ টি মশাল প্রজ্জ্বলন, কেককাটা ও দোয়া মাহফিল। 

দাসিয়ারছড়ার কামালপুর মইনুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, ছিটমহল বিনিময়ের ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি ও ৭ম বর্ষে পদার্পণের এই আনন্দঘন দিনে আমরা দাসিয়ারছড়ার কামালপুর মইনুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬৮ মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করবো। 

উল্লেখ্য, ৬৮ বছর ধরে বন্দিত্ব জীবন যাপন করে বাংলাদেশ-ভারতের ১৬২ ছিটমহলের বাসিন্দারা। তারা বাংলাদেশ-ভারতের ছিটমহল নামের একটি ভূ-খন্ডে বসবাস করলেও কোনো দেশেরেই সুবিধা পাননি। ছিটমহল নামের কারাগার থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করেন এসব মানুষ। ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের ছিটমহলগুলো বিনিময় করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ওই চুক্তি বাস্তবায়ন বন্ধ হয়। ফলে ১৯৯৪ সাল থেকে বাংলাদেশ-ভারতের ১৬২ ছিটমহলের বাসিন্দারা বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির ব্যানারে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির বাস্তবায়নের দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু করেন। 

ছিটমহলের বাসিন্দাদের আন্দোলন ও তাদের দুঃখ-দুর্দশার তথ্যবহুল সংবাদ গণমাধ্যম কর্মীরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ শুরু করলে সারাবিশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বত্রে ছিটমহল বিনিময়ের যৌক্তিক দাবি ছড়িয়ে পড়ে। ইন্দিরা- মুজিব চুক্তির বাস্তবায়ন অলোর মুখ দেখতে শুরু করে। পরে ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নে মানবিক দৃঢ়তা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা ও মোদি সরকার। 

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে বিনিময় হয় ভারত-বাংলাদেশের ১৬২ ছিটমহল। এতে করে ৬৮ বছরের বন্দী জীবনের অবসান ঘটে ছিটমহলবাসীর। নাগরিকত্ব মেলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের প্রায় ৩৭ হাজার মানুষের। আর ভারতের নাগরিকত্ব পায় ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের ১৪ হাজার মানুষ।

ছিটমহল বিনিময়ের পর থেকে ১৮১ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে ১১১টি ছিটমহলে উন্নয়ন কাজ শুরু করে বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে শুধু কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়ার উন্নয়নে ব্যয় করা হয় ৮১ কোটি টাকা। পাশাপাশি বিলুপ্ত ছিটমহল বাসীদের এগিয়ে নিতে কাজ করছে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।

এরই মধ্যে দেশের সর্ববৃহৎ ছিটমহল কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়ায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নির্মাণ করা হয়েছে ২২ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট, মসজিদ-মন্দির, নিশ্চিত করা হয়েছে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য সেবায কমিউনিটি ক্লিনিক, ভিজিডি, ভিজিএফসহ সরকারি সব সুযোগ সুবিধা। একই সুবিধা পাচ্ছে অন্যান্য বিলুপ্ত ছিটহলের বাসিন্দারা।