• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ঠাকুরগাঁওয়ে পানির নিচে তলিয়ে গেছে আগাম আলু চাষিদের স্বপ্ন

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২১  

ঠাকুরগাঁওয়ে পানির নিচে তলিয়ে গেছে আগাম আলু চাষিদের স্বপ্ন। টানা ২ দিন বৃষ্টির কারণে ডুবে গেছে আলু রোপণকৃত জমিগুলো। এ কারণে চাষিরা বলছেন, গত ১ সপ্তাহের মধ্যে যারা আলুর বীজ রোপণ করেছে তাদের বেশ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

সদর উপজেলার আকচা এলাকার আলু ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, আগাম রোপণকৃত আলুর সবগুলো ক্ষেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতিটি জমিতেই চাষিরা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ডুবে যাওয়া আলু তুলতে ব্যস্ত। যদিও এখনই জমি থেকে আলুর বীজ তুলে ফেলার প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

ঠাকুরগাঁও কৃষিসম্প্রসারণ অধিদফর সূত্রে জানা যায়, এবার ২৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। যার মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫শ হেক্টর জমিতে আগাম আলু রোপণ করা হয়েছে। ২ দিনে জেলায় বৃষ্টির পরিমাণ ৬৫.৬ মি.মি। জেলার প্রায় ২৫৫ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে।

তলিয়ে যাওয়া ক্ষেত থেকে আলু তুলতে থাকা আজমতকে দেখা যায়, ছেলেকে সাথে নিয়ে আলু তুলে তুলে একটি ঝুড়িতে রাখছেন। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, পানির নিচে থাকলে আলুগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। কিছুদিন আগেই রোপণ করেছিলাম। এখনই তুলতে হচ্ছে। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। জানিনা কীভাবে মহাজনের ঋণ শোধ করব।

পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মনসুর মিঞা। এবার ২ একর জমিতে আগাম আলু রোপণ করেছেন। তিনি বলেন, এবার তো আলুতে অনেক লোকসান হয়েছে। তাই আগাম আলু চাষ করে কিছুটা লোকসান কমিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু সব স্বপ্ন পনিতেই ডুবে গেল। 
কথা হয় আলু চাষি ফারুখ মোদীর সাথে। তিনি বলেন, প্রতিবছর আলুর মৌসুমে অধিক লাভের আশায় আমরা এ এলাকার চাষিরা আগাম জাতের আলুর বীজ লাগাই। গত বুধবার সকালে ৪০ শতক জমিতে রোমানা জাতের হাইব্রিড আলুর বীজ লাগিয়েছি। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। 

আকচা গ্রামের আলু চাষিদের দেওয়া তথ্যমতে, এ গ্রামের প্রায় ৩০ জন চাষির প্রত্যেকেই সর্বনিম্ন ৮/১০ বিঘা জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছেন। আলু চাষিদের মধ্যে কামাল ১৪ বিঘা, মাজেদ ১২ বিঘা, সোহেল রানা ১২ বিঘা, কমেত সাকু ১২ বিঘা, জাকের হোসেন ১১ বিঘা, আলাউদ্দিন ১০ বিঘা জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছেন। এছাড়াও জেলার অন্যান্য এলাকাতেও একই সমস্যা চোখে পড়েছে।
আলু চাষি কামাল বলেন, এবার আমি ১৪ বিঘা জমিতে ৫৬ বস্তা আলুর বীজ লাগিয়েছি। খরচ পড়েছে প্রায় ৯৮ হাজার টাকা। সার, শ্রমিক খরচ ও জমি চাষ খরচ প্রায় ৯৭ হাজার টাকাসহ সব মিলে শুধু আলুর বীজ লাগাতেই ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ২ দিনের টানা বৃষ্টিতে আমার ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেল।

ঠাকুরগাঁও কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু হাসেন জানান, বেশি লাভের আশায় প্রতিবছর এ জেলায় আগাম আলুর চাষ হয়। টানা ২ দিনের বৃষ্টিপাতের ফলে রোপণকৃত বেশ কিছু জমির বীজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানি নেমে গেলে এর পরিমাণ বের করা সম্ভব হবে। 

বৃষ্টি চলাকালীন ক্ষেত থেকে আলু না তুলে এমনিতে রেখে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মি. হাসেন বলেন, আলুগুলো তুলেও কোনো লাভ হবে না। তুলে রেখে দিলেও সেগুলো পচে যাবে। বৃষ্টি কমার পর অবস্থা অনুযায়ী ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া নাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।