• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

পদ্মাসেতু জিডিপি বাড়াবে ২১১ গুণ: আবুল বারকাত

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২২  

একটি সেতু ঘিরে এত স্বপ্ন, এত সম্ভাবনা, এত আনন্দ সম্ভবত ইতিপূর্বে হয়নি। পদ্মাসেতু নিয়ে আলোচনা বহুমুখী। এখন সবই ইতিবাচক। তবে এ পর্যায়ে সহজে আসেনি। অনেক জল ঘোলা করার চেষ্টা করেছেন নানাজন। সব পেরিয়ে সেতুটি আজ অনেক সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু। আর সব হিসেবেই আসন পাতে অর্থনীতি। সেতুটি ঘিরে কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে  কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।

পদ্মাসেতু উদ্বোধনে দেশের জিডিপিতে কেমন প্রভাব পড়বে বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত: দেশের অর্থনীতিতে ১৯৭২ সালের তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপি এখন ২১১ গুণ বড়। পদ্মাসেতু উদ্বোধন হলে আগামী পাঁচ বছরে শুধু পদ্মাসেতু থেকেই জিডিপি হবে ৯.৫ শতাংশ।

পদ্মাসেতু নির্মাণে অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন সম্ভবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পদ্মাসেতু নির্মাণের ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে, সেতুকে ঘিরে মানুষ শিল্পকলকারখানা গড়ে তোলার কথা চিন্তা করছে। বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা বেশি হবে। আগামী পাঁচ বছরে ২১ জেলার জিডিপি পাঁচগুণ বাড়বে। আগামী পাঁচ বছরে শুধু পদ্মাসেতু থেকেই জিডিপি আসবে ৯.৫ শতাংশ। 

পদ্মাসেতু হলে শুধু জিডিপি বাড়বে, তা না দেশের মানুষের জীবন মানেরও উন্নয়ন হবে। যারাই বলে পদ্মাসেতু হলে এতো পার্সেন্ট- অতো পার্সেন্ট জিডিপি বাড়বে তারা আসলে বিশ্বব্যাংকের একটা পরিসংখ্যান দেখে বলে। যারাই এখন যে পরিমাণ জিডিপির পরিসংখ্যানের কথা বলুক না কেন এরচেয়ে বহুগুণ বেশি হবে, সেটা শুধু দেখার অপেক্ষায়।

পদ্মাসেতুর অর্থায়নে যে ষড়যন্ত্রের কথা শোনা যায় সে বিষয়ে কিছু বলুন? 

অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত: বঙ্গবন্ধু আর তার সুযোগ্যকন্যা শেখ হাসিনার মতো এগিয়ে যাওয়ার এতো গতি আর কারো নেই। ১৯৭২ সালের জিডিপি থেকে বাংলাদেশের এখনকার জিডিপি ২১১গুণ বড়। সেটার প্রমাণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পরে ১৯৭২ সালের তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপি হবে দুই থেকে আড়াই গুণ বড়। তবে শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করছেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুর অর্থ না দিয়ে দুর্নীতির প্রশ্ন তোলার অন্যতম কারণ ছিল সরকার পরিবর্তন করা। যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল যেন শেখ হাসিনার সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারে এজন্য তারা পদ্মাসেতুর অর্থ না দিয়ে দুর্নীতিকে কারণ খুঁজে সরে যায়। এর সঙ্গে দেশের তথাকথিত বা দেশের মানুষ যাদেরকে সুশীল বলে তারাও জড়িত ছিলেন। 

পদ্মাসেতু চালু হলে দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনীতি কেমন হবে?

অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত: দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনীতি সাধারণত কৃষি ও জলাভিত্তিক। তাই কৃষি পণ্যে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান বেশি হবে। বিশেষ করে এসব এলাকা ঘিরে কৃষি ও জলাভিত্তিক শিল্পী ইন্ডাস্ট্রি বেশি হবে, এগোবে এগ্রোভেজ ইন্ড্রাস্টি। এই বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক চাকা আমূল পরিবর্তন হবে। কৃষি ও জলাভিত্তিক বিভিন্ন খাতে ব্যাংক বড় বড় এগ্রোভেজ প্রকল্পের প্রস্তাব করছে। এই অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে ২০২৭ সালে ২১ জেলার গ্রামীণ অর্থনীতি যে পরিমাণ পরিবর্তন হবে, তা কোনো মানুষ এখনই কল্পনা করতে পারছে না।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পদ্মাসেতু দ্রুত ভিত্তি স্থাপন করছে এটাই সত্য। গ্রামীণ অর্থনীতির পাশাপাশি গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, চিকিৎসা, শিক্ষা সব কিছু উন্নত হবে। সবকিছু মিলে নতুন একটা বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে পদ্মাসেতুর ওপর ভিত্তি করে। 

যথা সময়ে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুর অর্থায়ন করলে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাকা কি আরো সচল হতো?

অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত: যথা সময় বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুর অর্থায়ন না করে সরে যাওয়ায় দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পিছিয়ে গেছে। আমাদের দেশে নামধারী কিছু সুশীলরা আওয়ামী লীগবিরোধী কিনা তা জানি না, কিন্তু এরা এন্টি শেখ হাসিনা। এরা আসলে শেখ হাসিনার বিরোধিতা করে তার নেতৃত্বের প্রতি হিংসা করে।

বিশ্বব্যাংক কর্তৃক পদ্মাসেতু ঋণ চুক্তি বাতিল জাতির জন্য কি আশীর্বাদ?

অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত: বিশ্বব্যাংক তাদের কথিত দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মাসেতুর জন্য প্ৰতিশ্ৰুত ঋণ চুক্তি বাতিল করেছে- বিষয়টি আমি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অর্থনীতি-সমাজ-রাষ্ট্রের জন্য আশীর্বাদ মনে করি। আমি মনে করি এটা blessing in disguise। বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে আমাদের কয়েকটি বিষয় মনে রাখা জরুরি: (১) বিশ্বব্যাংক নেহায়েত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, বিশ্বব্যাংক গভীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, (২) বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)- এর ঋণ নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে; এমন দেশের নজির তেমন নেই, (৩) বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সন্দেহতীতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর গোলার্ধের ধনী দেশসমূহের (সাম্রাজ্যবাদের) স্বার্থরক্ষাকারী একনিষ্ঠ সেবক সংস্থা, (৪) একমেরুর বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় পৃথিবীর ৩টি সম্পদের ওপর একচ্ছত্র মালিকানা।

বিশ্লেষণ বহিঃআবরণ দিয়ে নয় বিশ্বব্যাংকের প্রকৃত চরিত্র নিরূপণে উল্লেখিত ৪টি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। বিশ্বব্যাংক কর্তৃক পদ্মাসেতুর ঋণ চুক্তি বাতিল আমাদের জন্য এক মহা আশীর্বাদ। কারণ, তা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কঠিন বাস্তবতার সামনে আমাদের দাঁড় করিয়েছে। আমাদের সরকার পরিচালনাকারী নেতৃত্ব এবং উন্নয়ন নীতিনির্ধারক ও বাস্তবায়নকারীরা সম্ভবত এই প্রথম এক বড় ধরনের ঝাঁকুনি খেল। এ ঝাঁকুনিটা প্রয়োজন ছিল অনেক আগেই- কারণ (১) তাদের ‘মানসকাঠামোর দারিদ্র্য (mind set poverty)’ অর্থাৎ নতজানু মানসিকতা, ভিক্ষুক মানসিকতা, অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করার মানসিকতা- এতই প্রকট যে স্ব-উদ্যোগে বড় কিছু করা সম্ভব- এ বিশ্বাস প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল- যদিও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রাম পেরিয়ে এক সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন হয়েছি, (২) আমরা আমলই দিতে চাইনি যে ১৯৭২-১৯৭৩ এর ভঙ্গুর অর্থনীতি আর এখনকার অর্থনীতি এক কথা নয়। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভীত অনেকগুণ বেশি শক্তিশালী।