• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

কাউনিয়ায় গ্রাম্য সালিসে গলায় জুতার মালা পরানোর অভিযোগ         

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২২  

কাউনিয়ায় গ্রাম্য সালিসে গলায় জুতার মালা পরানোর অভিযোগ         
রংপুরের কাউনিয়ায় গ্রাম্য সালিসে এক ব্যক্তিকে জনসমক্ষে গলায় জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর অভিযোগ উঠেছে। রাতের আঁধারে তিনি ‘পুত্রবধূর ঘরে ঢুকেছিলেন’ অপবাদ দিয়ে সালিসকারীরা এ কাজ করেছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে গলায় জুতা মালা পরিয়ে সামাজিকভাবে অপমান করায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর স্বজনরা।

গত শুক্রবার (২৯ জুলাই) বিকেলে উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের ধুমগাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তি।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জুলাই রাত আড়াইটার দিকে ভুক্তভোগী ব্যক্তি তার পুত্রবধূর ঘরে ঢুকেছেন বলে অভিযোগ তোলেন ধুমগাড়া গ্রামের নুরুল হকের ছেলে মনির হোসেনসহ কয়েকজন। এ নিয়ে তাকে সামাজিকভাবে একঘরে করার জন্য মসজিদ কমিটির নামে এলাকায় লিফলেট বিতরণ করা হয়।

এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়ে গতকাল শুক্রবার (২৯ জুলাই) বিকেলে ধুমগাড়া জামে মসজিদের সামনে একটি খোলা মাঠে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে মসজিদ কমিটির সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে সালিসে বসেন। সেখানে প্রভাবশালী আব্দুর রউফের নির্দেশে তাকে জোর করে জুতার মালা গলায় পরিয়ে গ্রামে ঘোরানো হয়।

সালিসে উপস্থিত থাকা নাজমুল হোসেন নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিচারের নামে সালিসে অন্যায় করা হয়েছে। সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে ওই ব্যক্তিকে জুতার মালা পরিয়ে হেয় করা হয়েছে। এর জন্য হারাগাছ পৌরসভার টাংরির বাজার এলাকার আব্দুর রউফ দায়ী। কারণ, তার নির্দেশে মনির হোসেন ও রাসেলসহ আরও কয়েকজন মিলে ভুক্তভোগী ব্যক্তির গলায় জুতার মালা পরিয়ে বাজারে ঘোরানো হয়।

এ সময় ওই ব্যক্তি কান্নায় ভেঙে পড়েন। আমি বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার গলা থেকে জুতার মালা ছিঁড়ে ফেলি। তখন মনিরসহ আরও কয়েকজন আমাকেও মারধর করার জন্য ছুটে আসে।

তিনি আরও বলেন, ন্যক্কারজনক এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তবে মনিরের সঙ্গে ভুক্তভোগীর টাকাপয়সা নিয়ে পূর্ববিরোধ থাকার সুযোগ নিয়ে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে মনিরসহ আরও কয়েকজন সালিসের আয়োজন করেন। আর এতে আব্দুর রউফসহ অনেকেই ইন্ধন দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে  ধুমগাড়া গ্রামের কয়েকজন জানান, স্থানীয় মাতব্বর হিসেবে মসজিদ কমিটির সদস্য মনির হোসেনসহ আরও কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিভিন্ন মানুষকে সালিসের নামে হয়রানি করে আসছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ওই ব্যক্তিকে তার ‘পুত্রবধূর ঘরে ঢোকা’র অপবাদ দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির পুত্রবধূর দাবি, ওই দিন রাতের অন্ধকারে কেউ একজন তার ঘরে ঢুকেছিলেন। ওই সময় তার স্বামী ঘরে ছিলেন না। হঠাৎ ঘরে অন্য কাউকে দেখে তিনি চিৎকার দিলে ওই লোক পালিয়ে যায়। ঘর অন্ধকার থাকায় কে ঢুকেছিল, তা তিনি চিনতে পারেননি। তবে ওই লোক তার শ্বশুর নন বলে তিনি সবাইকে জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগীর ছেলে বলেন, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার বাবাকে ডেকে এনে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এতে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তি দাবি করছি। আমাদের সমাজ থেকে দূরে রাখতে এ ধরনের অপবাদ দিয়ে সালিসের আয়োজন করা হয়েছিল।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মসজিদ কমিটির সদস্য মনির হোসেন বলেন, রাতের অন্ধকারে পুত্রবধূর ঘরে ঢোকার বিষয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিস বসেছিল, তা ঠিক। তবে তার নির্দেশে জুতার মালা পরানো হয়নি। পাশের গ্রামের আব্দুর রউফের নির্দেশে সেখানে উপস্থিত লোকজন জুতার মালা পরিয়েছে। এখানে আমাকে মিথ্যা অভিযোগে জড়ানো হচ্ছে।

জুতা পরানোর নির্দেশ নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, আমি সালিসে উপস্থিত। সবাই তো দেখেছে, শুনেছে, সেখানে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমি তো কাউকে গলায় জুতার মালা পরানোর নির্দেশ দিইনি। শুধু শুধু আমাকে জড়িয়ে এলাকায় সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে একটি পক্ষ।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হারাগাছ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবার দুজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। ঘটনাটি খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।