• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

একসময় অন্যের বাড়িতে কাজ করা সাদিনার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ আগস্ট ২০২২  

একসময় খাবারের অভাবে অন্যের বাড়িতে কাজ করেছেন সাদিনা বেগম। আর্থিক টানাপড়েন ছিল নিত্যসঙ্গী। হঠাৎ একদিন পাশের গ্রামে ব্যাগ তৈরির দেখে সিদ্ধান্ত নেন তিনিও এই কাজ করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। বিআরডিবি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ বাড়িতে ব্যাগ তৈরি শুরু করেন। পুঁজি খাটান মাত্র ১৬০০ টাকা। পরবর্তী সময়ে ঋণ নিয়ে কাজের পরিধি আরও বাড়ান।

এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাদিনা বেগমকে। সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থান। তার কারখানায় কাজ করছেন তিন শতাধিক নারী। তারা সংসারে অভাব ঘুচিয়েছেন। সবমিলিয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে আছেন সাদিনা বেগম।

নারী উদ্যোক্তা সাদিনা বেগমের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের ভবানিপুর ডিলারপাড়া গ্রামে। পাঁচ বছর আগে বিআরডিবি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে বাড়িতে ব্যাগ তৈরির কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময় ব্যাগের চাহিদা বাড়ায় গ্রামের দু-একজন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যাগ বানানোর কাজ চালিয়ে যান তারা। একপর্যায়ে তাদের ব্যবসা আরও বড় হয়ে যায়। অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তোলেন ব্যাগ তৈরির কারখানা। এখন অনেকের কাছে গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে ‘ব্যাগের গ্রাম’ নামে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্যোক্তা সাদিনা বেগম ও তার নারী শ্রমিকরা মিলে উঠানে বস্তা বাছাই করছেন। বিভিন্ন প্রকার বস্তা পরিষ্কার করে পরিমাপ করে মেশিন দিয়ে কাটছেন। সেই কাটা বস্তাগুলো কারিগররা তাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সেলাই করেন। সেলাই হয়ে গেলে ব্যাগগুলো সাদিনার কাজে দিয়ে যান তারা। এভাবে ওই গ্রামে প্রায় সাড়ে ৩০০ নারী এসব কাজ করেন।

বাড়ির কাজ শেষ করে প্রতিদিন একজন নারী ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। কাজ শেষ হলে ব্যাগগুলো বাজারজাত করতে গাট্টি বেঁধে রাখা হয়। পরে পাইকারি ক্রেতা এসে সেগুলো নিয়ে যান।

সাদিনার কারখানায় ছোট-বড়সহ ১৪ ধরনের ব্যাগ তৈরি হয়। প্রতিটি ব্যাগ তৈরি করতে ৬-৪৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। দিনে দুই থেকে আড়াই হাজার ব্যাগ তৈরি করেন তারা। এসব ব্যাগ ৮-৬০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি মূল্যে বিক্রি করা হয়।

খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় হয় সাদিনার। রংপুর, দিনাজপুর, হিলি, সৈয়দপুর, পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারীরা এসে ব্যাগ নিয়ে যান। ব্যাগ তৈরির বস্তা, লেবেল, ফিতা, বেলসহ যাবতীয় উপকরণ ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়।

সাদিনা বেগম বলেন, ‘ব্যাগের চাহিদা অনেক, কিন্তু পুঁজি কম। তাই চাহিদা মেটাতে পারছি না। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে ৩০০ নারী কেন, তিন হাজার নারীর কর্মস্থল গড়ে তুলতে পারবো।’

অতীতের দিনগুলোর কথা মনে করে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন সাদিনা বেগমের স্বামী মনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কিস্তির টাকার জন্য একসময় বাড়ি থেকে পালিয়ে থাকতে হতো। পেটে ভাত জুটতো না। কারখানা দিয়ে বর্তমানে অনেক ভালো রয়েছি।’

পলাশবাড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ বলেন, ব্যাগ তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে পলাশবাড়ীর তিন শতাধিক পরিবার। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ওই পরিবারের নারীরা বড় ভূমিকা পালন করছেন। আমি বিশ্বাস করি শুধু ৩০০ নয়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। তার পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।

সাদিনার কারখানায় কাজ করা নারীশ্রমিক আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘সকালে সাদিনা আপার বাড়ি থেকে কয়েক ডজন বস্তা ও উপকরণ নিয়ে নিজ বাড়িতে গিয়ে সেলাই করি। পরে সেগুলো কারখানায় জমা দেই। প্রতিদিন ১৫ ডজন পর্যন্ত ব্যাগ সেলাই করে মাসে ৮-৯ হাজার টাকা আয় হয়। এতে সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি সঞ্চয়ও করতে পারছি।’

শুবন্ত রানী নামের আরেক নারী বলেন, বাড়তি আয়ে তার সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। ব্যাগ সেলাইয়ের জন্য ঋণ করে বিদ্যুৎচালিত সেলাই মেশিন কিনেছেন। ঋণ প্রায় পরিশোধও হয়ে গেছে। এখানে কাজ করে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ নিয়ে তার চিন্তা করতে হয় না। সাতদিন পরপর কারখানা থেকে মজুরি নিয়ে সংসারের কাজে লাগান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান বলেন, এটি বিআরডিবির একটি চলমান প্রশিক্ষণ। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে ভগমানপুর গ্রামে একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আমরা এটি সম্প্রসারণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভালো ও যারা কাজ করেন, সেসব উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে।