• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

রংপুরে নানা আয়োজনে রোকেয়া দিবস পালন

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২২  

নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রংপুরে নানা আয়োজনে রোকেয়া দিবস পালিত হয়েছে। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে রোকেয়ার স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত তিন দিনের কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকতা।

গতকাল সকালে রোকেয়ার বাস্তুভিটায় নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন, পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমাতুজ জোহরাসহ সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ হতে রোকেয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে রোকেয়া মেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে পায়রাবন্দে সকাল সাড়ে ১০টায় ছিল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। বাদ জুমা রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র সংলগ্ন মসজিদে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের রুহের মাগফিরাত কামনায় মিলাদ মাহফিল ও দোয়া মোনাজাত করা হয়। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত স্বেচ্ছায় রক্তদান ও রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত হয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার প্রথম পর্ব। বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা শেষে পরিবেশন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিনব্যাপী এই আয়োজনের আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা।

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোখলেছুর রহমান আকন্দ, রংপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার। এতে আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহ্ আলম। স্বাগত বক্তব্য দেন মিঠাপুকুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমাতুজ জোহরা।

অন্যদিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসটি উপলক্ষে সকাল সোয়া ৯টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও রোকেয়ার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া চত্বর থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। সকাল ১০টায় শেখ রাসেল চত্বরে আলোচনা সভা ও প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা।

এছাড়াও রোকেয়া দিবস ঘিরে পায়রাবন্দে তিন দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার এবং রোববার শিশু-কিশোরদের নিয়ে বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা রয়েছে। আরও থাকছে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, নারীর ক্ষমতায়নবিষয়ক প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ এবং রোকেয়া পদক প্রদান। এতে রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান, বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আবদুল আলীম মাহমুদ, জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরীসহ বিভিন্ন গুণীজন অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

উল্লেখ্য, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় মুসলিম সমাজে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর কোনো প্রচলন ছিল না। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও পরিবারের সবার অগোচরে বড় ভাইয়ের কাছে উর্দু, বাংলা, আরবি ও ফারসি পড়তে এবং লিখতে শেখেন। তার জীবনে শিক্ষা লাভ ও মূল্যবোধ গঠনে তার ভাই ও বড় বোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। পরবর্তীতে বিহারের ভাগলপুরে সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামীর উৎসাহে ও নিজের আগ্রহে তিনি লেখাপড়ার প্রসার ঘটান। বেগম রোকেয়া ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মারা যান।

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জরিপে ষষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত। তার উল্লেখযোগ্য রচনা হলো-মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী।