• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

খবরের কাগজেও বয়েছিল রক্তগঙ্গা

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২১  

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট—সেদিন রক্তগঙ্গায় পরিণত হয়েছিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। মানুষের চিৎকার, হুটোপুটি, কান্নার আওয়াজ—সবকিছুকে ছাপিয়ে সবাই দেখেছিল সেদিনের রক্তবন্যা। স্বাভাবিকভাবেই সে হামলার বিস্তারিত খবর জানার জন্য পরদিন অর্থাৎ ২২ আগস্ট পত্রিকার পাতায় মানুষের নজর ছিল।

সেদিন সবগুলো পত্রিকায় ব্যানার হেডলাইন অর্থাৎ আট কলামজুড়ে ছিল গ্রেনেড হামলার খবর। শুধু ২২ আগস্ট নয়, এর পর অন্তত পাঁচদিন সবগুলো খবরের কাগজে গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত নানা খবরা-খবর এসেছিল। এসব খবরের মূল বিষয় ছিল, ঘটনার বিবরণ এবং বিভিন্ন পক্ষের প্রতিক্রিয়া।

গ্রেনেড হামলা যেদিন হয়েছিল সেদিন সন্ধ্যায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবিসি বাংলাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তার সেই সাক্ষাৎকারটি পরদিন সবগুলো খবরের কাগজে বিবিসি বাংলার বরাত দিয়ে প্রকাশিত হয়। গ্রেনেড হামলার পর সেটি ছিল গণমাধ্যমের সাথে শেখ হাসিনার প্রথম সাক্ষাৎকার। সেই সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের মদদে গ্রেনেড হামলা হয়েছে।

২২ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম ছিল- ‘আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহত ১৮, আহত ৫ শতাধিক। ’ এছাড়া সাব হেডিং থাকে- ‘অল্পের জন্য শেখ হাসিনার প্রাণ রক্ষা, অনেকের হাত-পা বিচ্ছিন্ন।’ একই দিনে দৈনিক প্রথম আলো লাল অক্ষরে ব্যানার শিরোনাম করে ‘শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, গ্রেনেড হামলায় নিহত ১৬।’এছাড়া সাব হেডিং থাকে ‘বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে রক্তের স্রোত আমু, সুরঞ্জিত, সেলিমসহ আহত ৪০০’ ‘শেখ হাসিনাকে হত্যার সব চেষ্টাই করেছিল হামলাকারীরা’ ‘আতঙ্কের নগরী ঢাকা’ ‘মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আইভি রহমান’ ‘আহতদের আর্তনাদে ভারি হাসপাতালের বাতাস’।

মৃত্যুর সংখ্যা একেক পত্রিকায় একেক ছাপা হয়। আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী, পথচারী, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য ছাড়াও দায়িত্বরত পাঁচ সাংবাদিকও আহত হন সেই হামলায়। হাসপাতালে একের পর এক আহত ব্যক্তি মারা যাওয়ায় এমনটি হয়েছে।

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার কালো অক্ষরে শিরোনাম করে ‘এসেসিনেশন এটেম্পট অন হাসিনা’। সব হেডে লেখা হয়. গ্রেনেড অন এএল র‌্যালি, সিক্সটিন কিলড, টপ এএল লিডারস এমং টু হান্ড্রেড হার্ট।’সেখানে দায়িত্বরত পাঁচজন সাংবাদিকও আহত হয়েছিল বলে ডেইলি স্টারে লেখা হয়।

ভোরের কাগজ শিরোনাম ছিল- ‘হাসিনার জনসভায় বোমা, নিহত ১৮, নারকীয় হত্যাযজ্ঞে স্তম্ভিত দেশবাসী।’ এছাড়া ‘শুধু রক্ত কান্না আর আহাজারি’, ‘নগরজুড়ে আতঙ্ক, যানবাহনে আগুন’সহ আরও অনেকগুলো শিরোনাম দেখা যায়। সাংবাদিক আবেদ খান ভোরের কাগজে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেন- ‘এ তো সুস্থ আর সভ্য মানুষের দেশ নেই।’

গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিক এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে। ২৪ আগস্ট জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান আওয়ামীলীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিন্দা জানান। ২৭ আগস্ট দৈনিক যুগান্তর এক প্রতিবেদনে জানায়, ‘শেখ হাসিনার সাথে ১৯ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।’

শুধু বিদেশীরা নয়, বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের যারা তৎকালীন পত্র-পত্রিকায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তাদের সবাই দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর সাংবাদিক আতাউস সামাদ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় যে বিশ্লেষণ লিখেছেন সেটির শিরোনাম ছিল, ‘এরপর আর বাকি থাকল কী?’