• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় ব্রহ্মপুত্র ঘিরে পরিবর্তনের ঢেউ       

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১  

দুই দশকের বেশি সময় ধরেই অযত্ন আর অনাদরে ময়মনসিংহের প্রাণভোমরা ব্রহ্মপুত্র নদ। ঢেউয়ের পর ঢেউ তোলা সেই নদ এখন নিশ্চুপ। কোথাও মরা খাল। উত্তাল নদের এমন বেতাল অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা এসেছেন, চিন্তাভাবনা করেছেন। কিন্তু সব পরিকল্পনাই কল্পনার পরী হয়ে আকাশে উড়েছে, মাটি ছোঁয়ার ইচ্ছাও দেখায়নি।

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় শেষতক অবহেলার পালা মিটল। নেকনজরে পড়ল এ নদ। আর এখন এ নদ ঘিরে বদলে যাচ্ছে প্রচীনতম ময়মনসিংহ। ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণার পর থেকেই ব্রহ্মপুত্র নদ ঘিরে নেওয়া হয় নানা মহাপরিকল্পনা। উদ্যোগ নেওয়া হয় নদের তীর ঘেঁষে ওপারে বিভাগীয় সদর দফতরের। ২০১৮ সালের অক্টোবরে পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে রূপ নিলে নতুন করে চরাঞ্চলের কয়েকটি ওয়ার্ডও যুক্ত হয়।

নগরীর বুক চিরে বেরিয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্রের তীর ঘেঁষে এখনকার ময়মনসিংহ গড়ে উঠছে। ওপারেই গড়ে উঠবে শহরের বর্ধিত অংশ। সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত দৃষ্টিনন্দন নয়া নগরী দেখবেন ময়মনসিংহবাসী। পুরনো আর নতুন মিলে এই ময়মনসিংহ নগরীকে এক করে দেবে তিনটি সেতু।

সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়, যেটি নির্মিত হবে নগরীর কেওয়াটখালী এলাকায়। ১ হাজার ১০০ মিটার ধনুকাকৃতির চার লেনের সেতুটি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবার সেতুর আদলে নির্মাণ হতে যাচ্ছে, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম। ২০২৫ সালের জুনে সেতু নির্মাণ শেষ হলে ময়মনসিংহের সঙ্গে নেত্রকোনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ জেলার যোগাযোগে সুবিধা বাড়বে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার সঙ্গে নাকুগাঁও ও হালুয়াঘাট স্থলবন্দরের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া ঘাগডহর ও কাচারিঘাট-সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট এলাকা দিয়ে আরও দুটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনাও আছে।

অন্যদিকে নদের তীর ঘেঁষে ওপারের চরাঞ্চলের ৯৪৫.২১৯ একর জমির ওপর বহুল প্রত্যাশিত বিভাগীয় সদর দফতর স্থাপনে প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সদর দফতরের ডিপিপি এবং টিএপিপি চূড়ান্ত করে প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারবেন বলে আশা বিভাগীয় কমিশনার মো. শফিকুর রেজা বিশ্বাসের।

বিভাগীয় কমিশনার জানান, অধিগ্রহণ এলাকার লোকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং সম্মানজনক পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমান সরকার অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য তিন গুণ বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। তাই ক্ষতিগ্রস্তরা জমির প্রচুর মূল্য পাবেন। অধিগ্রহণকৃত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের জন্য ২৫ একর জমি রাখা হয়েছে। সেখানে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। প্রথমেই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদর দফতর স্থাপনের জন্য এর আগে ২০১৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নিজ কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সভায় বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছিলেন। দেশের দ্বাদশ সিটি করপোরেশন ময়মনসিংহ (মসিক)। ২১.৭৩ বর্গ কিলোমিটার থেকে এই নগরী এখন ৯০.১৭ বর্গ কিলোমিটারের। আর এই নগরীকে আধুনিক নগরী গড়ে তোলার জন্য গত বছর একনেকে ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়। নতুন সম্প্রসারিত ৬৮.৪৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া পড়েনি। সড়ক উন্নয়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, ওভার ব্রিজ, ফুটপাথসহ সার্বিক উন্নয়নে কাজ করার জন্য এই অর্থ ব্যয় করছে মসিক। আট লক্ষাধিক জনসংখ্যার এই সিটি উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে ধীরে ধীরে তিলোত্তমা নগরীতে রূপ নিচ্ছে, যা এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে তীর ঘেঁষে গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা। ময়মনসিংহ শহরসহ ওই দুই উপজেলাকে নিয়ে অর্থনৈতিক জোন করার প্রস্তাবনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এমনটাই জানিয়েছেন ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আমিনুল হক শামীম। তিনি বলেন, ৫০০ একর জায়গার ওপর অর্থনৈতিক জোন করার পরিকল্পনা আছে। এটি বাস্তবায়িত হলে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর কারণ উল্লেখ করে তিনি জানান, নদে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য খননকাজ শুরু হয়েছে। ৩০ ভাগ কাজও শেষ হয়েছে। পুরোদমে নাব্যতা ফিরে পেলে বন্দরের সঙ্গে নির্ধারিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের পণ্য যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও সাশ্রয়ী হওয়া যাবে। কর্মসংস্থান হবে সরাসরি দুই লাখ মানুষের।

তবে ২০১১ সালের শেষের দিকেই ময়মনসিংহে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে। গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার অংশে চার লেনের সড়কটিই পাল্টে দেয় ময়মনসিংহের দৃশ্যপট। মহাসড়কটি চওড়া হয় প্রায় ৬৩ ফুট। বাজার ও ব্যবসা কেন্দ্রগুলোর পাশে চওড়া আরও বেশি। ১ হাজার ৮০০ কোটি ব্যয়ে এ সড়কটির নির্মাণকাজ শেষে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। আর এমন যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা পেয়ে ভালুকা ও ত্রিশাল এখন ভারী শিল্পাঞ্চলের উপজেলা।

ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।