• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্মাণ হচ্ছে অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২২  

পিরোজপুরে অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর নির্মাণের মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের ৩০ জুন অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজ নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হবে। আগস্ট মাস নাগাদ তা যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার আশা করছেন নির্মাতারা।

বরিশাল-পিরোজপুর-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর এই সেতুর নির্মাণের ফলে বরিশাল বিভাগীয় সদরের সঙ্গে খুলনা বিভাগীয় শহরের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ সম্ভব হবে।

এ ছাড়া পায়রা সমুদ্রবন্দর, মোংলা সমুদ্র বন্দর, বেনাপোল ও বাংলাবন্দ স্থলবন্দরকে সেতুটি সরাসরি সড়ক সংযুক্ত করবে। পাশাপাশি পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য এ সেতুটি বিশেষ সুবিধা নিয়ে আসবে।

সড়ক পথে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কটি প্রায় ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘের হলেও যান চলাচলে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা।

কচা নদীর বেকুটিয়া পয়েন্টে সেতুটি চালুর পর এ সময় এক ঘণ্টা কমে আসবে।

২০১৮ সালের ১ নভেম্বর নির্মাণকাজ সূচিত ও চীন সরকারের অর্থায়নে ৮৯৪ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯৯৮ মিটার দৈর্ঘের সেতুটি অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু বলে নামকরণ করা হয়।

২০০০ সালে পিরোজপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কচা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। এরপর কচা নদীর বেকুটিয়া পয়েন্টে সেতু নির্মাণের সমীক্ষা কাজ একটি প্রকল্পের অধীনে হাতে নেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে সেতুর নির্মাণকাজ খুব একটা এগোয়নি।

পরে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকারের আমলে প্রকল্পটি গতি পায় এবং চীন সরকারের আর্থিক অনুদানে ২০১৮ সালের শেষে এই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়, এখন নির্মাণকাজ শেষপর্যায়ে।

পিরোজপুর সদর উপজেলার নলবুনিয়া ও কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া ফেরি ঘাটের পাশে সেতু নির্মাণ এলাকা ঘুরে জানা গেছে, সেতুটির নির্মাণকাজ প্রায় ৮৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

সেতুটির নির্মাণকাজ তদারকিতে দায়িত্বরত সড়ক অধিদপ্তরের পিরোজপুর বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী ও প্রকল্পের ডেপুটি ম্যানেজার মো. জাহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, এ পর্যন্ত সেতুর ১০টি পিলার (পায়ার), ১০টি স্প্যান ও গার্ডার এবং ১৫টি ভায়া ডাক্ট নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। চারটি গার্ডারের সংযোগ কাজ আগামী এক মাসের মধ্যে শেষ হবে।

প্রকল্পের অধীনে কচা নদীর দুই তীরে নদী শাসনকাজ চলছে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুর টোলপ্লাজা নির্মাণ ও একটি পরিদর্শন বাংলো নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সড়ক অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা সেতু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুই মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে আগস্ট মাসে তা যানবাহনের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করবে।

এদিকে সেতু নির্মাণ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে নির্মাণকাজ দেখতে আসছেন অনেকেই।

বিল্লাল হোসেন সাবু নামের এক পথচারী জানান, এই নিয়ে তিনি ৫ বার এসেছেন সেতু দেখতে এবং ছবি তুলতে। তিনি চান দ্রুত চালু করা হোক স্বপ্নের এ সেতু।

পিরোজপুর থেকে বরিশালগামী যাত্রী পলক হাসান বলেন, ‘খুলনা টু বরিশাল রুটে যাতায়াত করতে বড় বাধা এই কচা নদী (বেকুটিয়া ফেরিঘাট) । যেখানে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা লাগার কথা, সেখানে ৩ থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা লেগে যায়। এই ভোগান্তি কেটে যাবে সেতুটি চালু হলে।

যে নদীর ওপর সেতুটি নির্মিত হচ্ছে তা ভারত-বাংলাদেশ নৌ প্রোটোকল চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নৌপথ। এ পথ দিয়ে পশ্চিম বাংলা থেকে বাংলাদেশ হয়ে আসাম ও ত্রিপুরার সঙ্গে ভারতের পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করে।

এ ছাড়া মোংলা বন্দর ও খুলনা থেকে দেশের অভ্যন্তরে পণ্যবাহী বড় বড় নৌযান ও জ্বালানিবাহী অয়েল ট্যাংকার চলাচলেরও নৌপথ এটি। যে কারণে সেতুটি নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স পানির স্বাভাবিক উচ্চতা থেকে ১৮ মিটার বলে জানা গেছে।

নির্মাণকারী চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ রিকগনাইজেন্স ডিজাইন ইনস্টিটিউটের ডেপুটি ম্যানেজার চ্যাং মিং ওয়েং বলেন, ‘জুনের পর তারা বাংলাদেশ সরকারের হাতে সেতুটি হস্তান্তর করবেন।’