• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

সরিষার আবাদ দ্বিগুণের পরিকল্পনা করছে সরকার

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২২  

দেশে ভোজ্যতেলে দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে আমদানি নির্ভর এ নিত্যপণ্যে সংকট ‘সাময়িক’। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। তবে সরকার চাইছে আমদানি নির্ভরতা কিছুটা কমিয়ে দেশেই উৎপাদন বৃদ্ধি করতে। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা ও প্রকল্প হাতে নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়।

মূলত ভোজ্যতেল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা বলার পরই নড়েচড়ে বসে কৃষি মন্ত্রণালয়। তিনি বলেছেন, নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে। কীভাবে উৎপাদন আরও বাড়ানো যায় সে বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে সম্প্রতি সিরিজ বৈঠকও করেছেন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।  

ভোজ্যতেলের সংকটের সমাধানে দেশে শস্য বিন্যাস পদ্ধতিতে সরিষার আবাদ প্রাথমিকভাবে দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে। এতে করে বিভিন্ন সময় হওয়া সংকটেরও সমাধান মিলবে। 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আমন এবং বোরোর আবাদের মধ্যে যে ব্যবধান থাকে, তা বাড়িয়ে সরিষার আবাদ দ্বিগুণ করা হবে। মূলত এটিই হলো শস্য বিন্যাস পদ্ধতি। এক্ষেত্রে ব্যবহার হবে উন্নত জাতের বীজ। এটি বাস্তবায়ন করতে কয়েক বছর সময় লাগবে।

এ বিষয়ে গত ১৭ মে কৃষি মন্ত্রণালয়ে হওয়া একটি সভায় আলোচনা ও বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম।

সভায় কৃষিসচিব জানান, দেশে প্রায় ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়। সরিষার আওতায় প্রায় ৬ লাখ হেক্টর জমি রয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে ভোজ্যতেলের কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ভোজ্যতেল হিসেবে সয়াবিনের ওপর নির্ভরশীল। সয়াবিন তেলের প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। প্রতিবছর প্রায় ২০-২৫ হাজার কোটি টাকার তেল আমদানি করতে হয়। দেশে চাহিদার প্রায় ১৪ শতাংশ ভোজ্যতেল উৎপাদন হয়ে থাকে, যা মূলত সরিষা থেকে পাওয়া যায়। কৃষিমন্ত্রী তেল ফসল, বিশেষ করে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

সচিব আরও জানান, আমনে যে ৫৯ লাখ হেক্টর জমি রয়েছে তার মধ্যে প্রায় ২৫ লাখ হেক্টর জমির ক্রপিং প্যাটার্নে (শস্য‌ বিন্যাস) সরিষা অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। আমনের জাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বল্প জীবনকালের সঙ্গে সঙ্গে বেশি উৎপাদনশীল জাতগুলোকে ক্রপিং প্যাটার্নে অন্তর্ভুক্ত রেখে মোট আমন ধান উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। সরিষা আবাদের এরিয়া বর্তমানের চেয়ে কমপক্ষে দ্বিগুণ করতে হবে।

সভায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি জানান, বাকৃবি উদ্ভাবিত বিএইউ সরিষা-১, বিএইউ সরিষা-২ ও বিএইউ সরিষা-৩ জাত ৩টি খুবই সম্ভাবনাময় জাত। গড়ে ৯০ দিন পর এসব জাতের ফসল সংগ্রহ করা যায়। হেক্টর প্রতি এদের গড় ফলন ১.৫ মে.টন। জাতগুলো লবণাক্ততা সহিষ্ণু এবং জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু হওয়ায় দেশের উপকূলীয় এলাকায় আবাদের জন্য উপযোগী। 

সভায় সরিষা আবাদের এরিয়া বর্তমানের চেয়ে কমপক্ষে দ্বিগুণ করার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য উপযুক্ত জাত নির্বাচন, উদ্ভাবন, জাত সম্প্রসারণ ও প্রয়োজনীয় বীজ উৎপাদন এবং চাষি পর্যায়ে সরবরাহ করতে সব গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ডিএই, বিএডিসি, বিএমডিএ, বেসরকারি বীজ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে বলা হয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা অনুবিভাগ) কমলারঞ্জন দাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাধারণত সরিষা হয় আমন ধানের পরে। আমন ধানের জীবনকাল ১৪৫ দিন থাকে। বিজ্ঞানীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, জীবনকাল কমিয়ে নিয়ে আসার জন্য। সেটা কমিয়ে ১১০ দিন পর্যন্ত আনা সম্ভব হয়েছে। এগুলোর বীজ বেশি করে উৎপাদন করে কৃষক পর্যায়ে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

ক্রপিং প্যাটার্ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটাকে বাংলায় শস্য বিন্যাস বলে। আমনের পর সরিষা আবাদ করা হয়। এরপর বোরো ধান আবাদ হয়। আমন এবং বোরোর মধ্যে সময়কালের ব্যবধান খুব কম ছিল। সেটা বাড়ানোর জন্য আমরা আমনের জীবনকাল কমিয়ে নিয়েছি। এখন ১৪৫ দিন লাগে না। ১১০ দিনে ফলন চলে আসবে। তখন সরিষা আবাদ করা যাবে। যাতে বোরোতে কোনো সমস্যা না হয়। 

তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, বিদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে। যেহেতু আমাদের দেশে সরিষা প্রচুর আবাদ হয়। আমাদের সরিষা সাধারণত ৮০ থেকে ৮৫ দিন, এই রেঞ্জের মধ্যে আবাদ হয়। যেমন বিনা ৪, ৯, ১০ বারি ১৪, ১৫, ১৭। বারি ১৪, ১৫, ১৭ জাতগুলো খুবই উন্নত। তিন থেকে চার গুণও ফলন বেশি হয়। এখন যতগুলো চাষ হচ্ছে, বীজগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। 

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, কোন-কোন কৃষক বলেন যে, কম ফলন হলেও তেলের ঝাঁজ যেন বেশি থাকে, আমরা ওটাই চাই। কিন্তু ঝাঁজতো অন্যভাবেও আনা যাবে। আমরা বুঝাই, এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং ফলনও বেশি। এটা মোটিভেশনও করা লাগছে।

তিনি বলেন, একটা জাতের বীজ তৈরি করে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে অনেক সময় লাগে। এলাকাভিত্তিক আমরা অনেক এগিয়ে গেছি। আমরা আশা করছি ২-১ বছরের মধ্যে ৫০ ভাগের কাছাকাছি চলে যাবো। আমাদের কার্যক্রমগুলো চলমান। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পারবো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থ বছরে দেশে ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে তেল জাতীয় ফসল চাষ হয়েছে। এতে ফলন হয়েছে ১১ লাখ ৯৯ লাখ টন। তেলজাতীয় ফসলের মধ্যে সরিষাই মুখ্য। সরিষা আবাদ হয়েছিল প্রায় পাঁচ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে; যাতে ফলন হয়েছিল প্রায় সাত লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন।

২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৮ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষাসহ অন্যান্য তেলজাতীয় ফসল চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা বলেন, ভোজ্য তেলের চাহিদার ৪০ ভাগ দেশ থেকেই মেটানো সম্ভব হয়, সেজন্য একটা রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরিষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া পাচ্ছে। 

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমাতে কাজ করছে সরকার। এজন্য দেশে সরিষার আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, তেল জাতীয় ফসল আবাদে খরচ কম, এজন্য লাভও বেশি। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় বীজ, সার, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
#ঢাকাপোস্ট টয়েন্টিফোর ডটকম