• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

‘জ্বালানি সংকট সমাধানে সরকারের উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে’

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ আগস্ট ২০২২  

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যখন বিশ্ব জ্বালানি ব্যবস্থা টাল-মাটাল, তখন সরকারের বর্তমান উদ্যোগগুলো ভবিষ্যতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন ‘লেটস টক অন গ্রিন ট্রানজিশন’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, যেকোনো কাজের ফলাফল পেতে সময় লাগে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব জুড়ে চলমান জ্বালানি সংকটের ছোঁয়া বাংলাদেশেও লেগেছে। এক্ষেত্রে আগে থেকে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব ছিলো কিনা এমন প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পেট্রোলিয়াম ও খনিজসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, বলতে পারেন এখন যেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ৫ বছর আগে নিলে আমাদের বর্তমান গ্যাস সংকট থাকতো না। তবে সরকার যেই উদ্যোগগুলো গ্রহণ করেছে তার ফলাফল ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে।

সরকার এলএনজি আমদানি বেশি দামে করায় জ্বালানি খাতে সংকট তৈরি হয়েছে কিনা প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য ‘মিক্সড সোর্স’ খুবই জরুরি। আর এ কারণেই এটি সঠিক সিদ্ধান্ত। আপনার হাতে যত বেশি অপশন থাকবে, সিদ্ধান্ত নেয়া তত সহজ হবে।

এদিকে জ্বালানির প্রসঙ্গ তুলে লেটস টক অনুষ্ঠানে উপস্থিত সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) ট্রাস্টি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধের পর জার্মানি তার ২৫ শতাংশ গ্যাস বিতরণ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। বিকল্প জ্বালানি খুঁজছে সবাই। বিশেষত সামনের শীতের জন্য। একই অবস্থা যুক্তরাজ্যেরও। বাংলাদেশে ২০০৯ সালে ১২-১৩ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকতো। সেখান থেকে সাময়িক সমস্যার জন্য এখন কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। অর্থাৎ প্রাথমিক ধকল সামলে উঠেছি আমরা। ২০০৯ সালে আমরা স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি বিদ্যুৎ খাত নিয়ে। সম্প্রতি জাপানের সহায়তায় আমরা আরেকটি পরিকল্পনা করছি।

সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে সোলার প্যানেল ব্যবহারে সচেতনতা তৈরি করছে বলে জানান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান এবং প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

এ সময় নসরুল হামিদ বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা বাসা-বাড়ি তাদের সোলার প্যানেল ব্যবহার করে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করলে মোট বিদ্যুৎ খরচ ২০ শতাংশ হ্রাস করতে পারে। আপনি যে সোলার প্যানেল ব্যবহার করবেন আপনার ভবনে, সেখান থেকে যেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হবে তা আমাদের দিয়ে দেবেন। সেটি যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। আর আপনার মোট বিদ্যুৎ ব্যবহার থেকে সেই পরিমাণ বিদ্যুতের বিল মাইনাস করা হবে। এতে ২০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ বিল বাঁচানো সম্ভব।

সোলার প্যানেল স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যেই সোলার প্যানেলগুলো স্থাপিত হয়েছে তার ৫০ শতাংশ খরচ সরকার প্রদান করেছে। বাকি ৫০ শতাংশ আবার ব্যক্তিগত লোন হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রদান করছে। অর্থাৎ সোলার প্যানেল অতি স্বল্প খরচে ব্যবহার করা সম্ভব।

আলোচকেরা আরো জানান, বাতাসের এনার্জি ব্যবহার করে, বায়ো গ্যাস এবং আরো বিকল্প উৎস সন্ধানে কাজ করে যাচ্ছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়।

নসরুল হামিদ বলেন, আসলে আগে যেই নতুন প্রযুক্তি আসতে কয়েক দশক লেগে যেতো, এখন কয়েক মাসের মধ্যে নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে। আর এ কারণেই আমরাও তা ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট, এরপর হাইড্রোজেন প্লান্ট- সামনে হয়ত নতুন আরও কিছু আসবে। সেটি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশও গ্রিন সাসটেইনেবল এনার্জি ব্যবহার করতে চায়। আর এক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয় ইলেকট্রিক যানবাহন বা ই-ভিয়েকেল। নসরুল হামিদ বলেন, এরই মধ্যে ই-ভিয়েকেলের জন্য চার্জিং স্টেশন স্থাপনের কাজ করছি আমরা। এটি দুর্দান্ত একটি বিষয় হবে। আপনি যেই পথ পাড়ি দিতে ৮০ টাকা খরচ করতেন, সেই পথ পাড়ি দিতে ১০ টাকা খরচ হবে।

ই-ভিয়েকেল নিয়ে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয় নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করছে বলে জানান তিনি। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত পাবলিক পরিবহনগুলোকে। বিশেষত বাস, ট্রেন এবং কারগুলো যেন ইলেক্ট্রনিক হয়। একবার ভেবে দেখুন, কী পরিমাণে সাশ্রয় হবে।

এদিকে দূষণ হ্রাসের জন্য পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহার করলে তার বর্জ্যরে কী হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে হাসতে হাসতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, দেখুন পরমাণু কেন্দ্রের জ্বালানি যারা সরবরাহ করবেন, তারাই বর্জ্র নিয়ে যাবেন। এমনভাবেই চুক্তিটি হয়। তাই এটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

এ সময় নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বেজ এমাউন্ট যেন গ্রিন নির্ভর হয় সেই চেষ্টা করছি আমরা। অর্থাৎ বর্তমানে আমাদের বেজ ১২ হাজার মেগাওয়াট। ধীরে ধীরে এটি আরো বাড়ানো হবে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য ৯ আগস্ট একটি বড় দিন বলে মন্তব্য করে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে দেশের পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র ব্রিটিশ সেল কোম্পানির কাছে ছিলো। তখন বঙ্গবন্ধু এই গ্যাস ক্ষেত্রগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত করতে চেয়েছিলেন। প্রায় ৪ বিলিয়ন পাউন্ড অর্থ ব্যয়ে সেটি সম্পন্ন করেন তিনি। তার এই দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে ৪০০ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি সহায়তা করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে শহরের সুবিধা গ্রামে নিয়ে যেতে হবে। পৃথিবীর কোনো সংবিধানে এভাবে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার কথা বলা নেই। ২০০৯ সালে ১৩-১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং থেকে রক্ষা পেতে শর্টটার্ম, মিডটার্ম এবং লংটার্ম প্লান করি। ভবিষ্যতের জ্বালানি ক্ষেত্র কী হতে পারে, তা আমরা যাচাই করছি। জাপান এ ক্ষেত্রে সহায়তা করছে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- ইয়ুথ এনভারমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (ওয়াইইএসডিএ) প্রেসিডেন্ট রেবেকা সুলতানা এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. তানভীর হাসান।