• মঙ্গলবার   ২১ মার্চ ২০২৩ ||

  • চৈত্র ৬ ১৪২৯

  • || ২৬ শা'বান ১৪৪৪

সর্বশেষ:
জনগণ বিএনপি-জামায়াতকে আর ক্ষমতায় আসতে দেবে না: প্রধানমন্ত্রী তথ্য-প্রযুক্তি ও যোগাযোগ খাতে বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটেছে: স্পিকার বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে কখনো আপস নয়-পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ১১০০ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া চলছে: পররাষ্ট্র সচিব ভারতকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

এইচএসসির ফলাফলে মেয়েকে ছাড়িয়ে গেলেন মা, নেবেন উচ্চ শিক্ষাও

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

চার সন্তানের জননী মারুফা আক্তার। দীর্ঘ ১৫ বছরের সংসার জীবন অতিবাহিত করে হাতে নেন খাতা-কলম। ইচ্ছা ও মনোবল থাকলে যে কোনো অসম্ভবকে জয় করা সম্ভব তা করে দেখিয়েছেন নীলফামারীর মারুফা। 

স্বজন ও প্রতিবেশীর ঠাট্টা-বিদ্রুপ উপক্ষো করে মেয়ের সঙ্গে প্রথমবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ৪.৮০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। তবে মেয়ের ফল খারাপ হওয়ায় আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়া মারুফা আক্তার নীলফামারীর ডিমলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের পূন্যারঝাড় গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলামের স্ত্রী। তাদের সংসারে রয়েছে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। লেখাপড়ায় ভালো হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র অভাবের কারণেই মারুফা আক্তারের বিয়ে হয় ২০০৩ সালে। সে সময়ে দশম শ্রেণিতে পড়তো মারুফা। দীর্ঘ ১৫ বছরে অভাবী সংসারে চারজন নতুন অতিথি এলেও মারুফার লেখাপড়ার ইচ্ছা দমেনি। সংসারের দারিদ্র্যতার কারণে একইভাবে নিজের মেয়েকেও দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে দিতে বাধ্য হন সাইদুল দম্পতি।

এত কিছুর পরেও মারুফা চেষ্টা অব্যাহত রাখেন, কীভাবে নিজেকে এবং মেয়েকে লেখাপড়ায় ফিরিয়ে আনা যায়। এরইচেষ্টায় স্থানীয়ভাবে নিজেকে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেন। কিছুটা হলেও সংসারে আয় ফিরতে শুরু করে। নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে সুপ্ত বাসনাকে পূরণ করতে স্বামীর উৎসাহে মেয়ের সঙ্গে পুনরায় ছোটখাতা ফাজিল মাদরাসায় ভর্তি হন নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২০ সালে মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন মারুফা। এমনকি মেয়ের চেয়ে ভালো ফলাফল করেন তিনি। সারাদিনের প্রচণ্ড পরিশ্রমের পর গভীর রাত ও ভোরে উঠে নামাজ শেষে লেখাপড়া শুরু করেন।

মারুফা আক্তার তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ডিমলা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট কেন্দ্র থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। তার ইচ্ছা সমাজের আর দশটা মানুষের মতো তিনিও নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে চান। মারুফার আশা পূরণ হয়েছে, তবে মেয়ের ফল খারাপের কারণে কিছুটা হলেও মন খারাপ। এদিকে মারুফার এ ফলাফলে পাড়া-প্রতিবেশী সবাই খুশি।

মারুফা জানান, উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, চরম দারিদ্র্যতার মাঝেও প্রত্যন্ত গ্রামের মারুফা এসএসসিতে শুধু পাসই করেনি, তিনি তার মেয়ের চেয়ে বেশি নাম্বার পেয়েছেন। উচ্চতর শিক্ষায় লেখাপড়ার সুযোগ পেলে আমরাও তার পরিবারকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।

প্রসঙ্গত, মারুফার ৪ ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবাই লেখাপড়া করে। বড় মেয়ে শাহী সিদ্দিকা এইচএসসি পরীক্ষার্থী। দ্বিতীয় ছেলে দশম শ্রেণি, তৃতীয় মেয়ে অষ্টম শ্রেণি ও ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।