• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

শিগগিরই শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৩  

শিগগিরই রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে। স্বেচ্ছায় স্বদেশে ফেরত যেতে আগ্রহী এমন রোহিঙ্গাদের তালিকা করা হবে। কাউকে জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, স্বেচ্ছায় স্বদেশে ফেরত যেতে আগ্রহী এমন রোহিঙ্গাদের তালিকা করা হবে। তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ইস্যুর সব বিষয়েই জাতিসঙ্ঘসহ সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের টেকসই এবং ভলান্টারি প্রত্যাবাসন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজারের টেকনাফে ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মিয়ানমার উইং মাইনুল কবির এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনকে সামনে রেখে গতকাল কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বৈঠক করেছে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল। তবে দলটির সদস্যদের দেওয়া আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন রোহিঙ্গারা।

প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি দল দেশে ফিরে যাওয়ার পর বিকালে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে অংশ নেন তারা। তবে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল গণমাধ্যমে কোনো কথা বলেনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (মিয়ানমার) মোহাম্মদ মইনুল কবির জানান, মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের প্রধান তাদের আশ্বস্ত করেছেন, রোহিঙ্গাদের দাবিগুলো এই মুহূর্তেই সব পূরণ করা না গেলেও ভবিষ্যতে পূরণ করা হবে। স্বেচ্ছায় যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে যেতে রাজি হবেন তাদের এ আলোচনা শেষে দ্রুত প্রত্যাবাসন করা হবে।

তবে রোহিঙ্গারা প্রতিনিধি দলের আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন। বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন জানান, তারা ফিরে যেতে নিজ দেশ মিয়ানমারের নাগরিকত্ব, ভিটেমাটি ফেরতসহ দেশটির অন্য জনগোষ্ঠীদের মতো চলাচলের স্বাধীনতা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের রাখাইন পরিদর্শনের সময় যেসব কথা বলা হয়েছিল এখানে এসেও একই কথা বলেছে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল। তারা (মিয়ানমার দল) আমাদের এনবিসি কার্ড দিয়ে সে দেশে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু এভাবে আমরা যেতে রাজি না।’

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা নেতা খিন মং বলেন, ‘ক্যাম্পে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। অনেক রোহিঙ্গা দাবি তুলেছেন নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের জন্য। আমরা চাই, সেটি যেন নিশ্চিত করা হয়।’

ব্রিফিংয়ে শরণার্থী কমিশনার জানান, মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনাকালে রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্ব ভিটেমাটি ফেরতসহ তাদের বেশ কিছু চিরাচরিত দাবি জানিয়েছেন। আলোচনাকালে রোহিঙ্গারা রাখাইনে কোনো ক্যাম্পে নয় নিজেদের ভিটেমাটিতেই ফেরত যেতে চান বলে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের কাছে উত্থাপন করেন।

এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি দিয়ে ১৪ সদস্যর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ আসেন। এ সময় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান। মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের রাখাইন ষ্টেটের সোস্যাল ওয়েলফেয়ার মিনিস্টার অং মাইউ।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রত্যাবাসনকে সামনে রেখে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছেন। ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসের দুজন সদস্যও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রয়েছেন। তারা টেকনাফে ২৬ নম্বর ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল এবার ২৮০ রোহিঙ্গা পরিবারের প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন।’

মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি মূলত কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের মূল আবাস মিয়ানমারের রাখাইনের সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং স্বদেশে ফেরত গেলে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার বিষয়ের দীর্ঘ বর্ণনা দেন।

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনাকালে নাগরিকত্ব শিক্ষা চিকিৎসা এবং অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা। এ সময় মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের দাবি পুরণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন শরণার্থী কমিশনার। এ সময় রোহিঙ্গাদের মধ্যে নেগেটিভ পজিটিভ দুধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে উল্লেখ করে শরনার্থী কমিশনার বলেন, ‘স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহীদের তালিকা করেই রাখাইনে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে।’

এর আগে গত ৫ মে রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের রাখাইনে মংডু শহরের আশপাশে পরিদর্শন করে এসেছেন। পরিদর্শন করে আসা রোহিঙ্গা নেতারা তখন জানিয়েছিলেন রাখাইনে এখনো প্রত্যাবাশনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।

রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা এসেছেন। অনেক রোহিঙ্গা দাবি তুলছেন, নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের। রোহিঙ্গারা নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন চাই।

এর আগে, ১৫ মার্চ মিয়ানমার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। ওই সময় প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে মিয়ানমারে ফিরে যায় দলটি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের রাখাইনে ফেরত নিতে প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। চুক্তি স্বাক্ষর করলেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরাতে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি। এই কমিটি দুটি সভা করলেও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত যাননি।