• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

৪,৫০০ শ্রমিকের নিরলস শ্রমে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২৩  

যমুনা নদীর ৩০০ মিটার উত্তরে নির্মিত হচ্ছে দেশে বৃহৎ রেল স্থাপনা বা রেলপথ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’। ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ রেল সেতুর দৈঘর্য ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। এই রেল সেতুতে দেশি-বিদেশি প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ৫০০ শ্রমিকের নিরলস শ্রম ও ঘামে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে আন্তঃএশিয়ার অন্যতম রেল যোগাযোগের বৃহৎ রেল সেতু। বর্তমানে সেতুর ৬২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেললাইন সংযুক্ত থাকলেও ট্রেন ঝুঁকি নিয়ে ধীরগতিতে সেতু পারাপার হতে হয়। সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৩৮ টি ট্রেন চলাচল করে থাকে। তাই রেল যোগাযোগ নিরাপদ, গতিশীল এবং আন্তঃএশিয়ার যোগাযোগের করিডোর তৈরির জন্য বর্তমান সেতুর উত্তরে পৃথক রেলসেতু নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিশাল এই কর্মযজ্ঞ শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের আগস্টে। তবে আরও ৩ থেকে ৪ মাস অতিরিক্ত মেয়াদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুটি হবে সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকে। দুই পাশে নির্মাণ করা হবে শূন্য দশমিক শূন্য ৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট। ৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার সংযোগ রেললাইন।

প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে করছে জাপানের ২ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জাপানি ও ওবায়শি এবং জেএফই ও টোআ করপোরেশন যৌথভাবে (১ নম্বর গ্রুপ)। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশে ৫০ থেকে ২৪ নম্বর পিলার পর্যন্ত রেলসেতু নির্মাণ করছে। সিরাজগঞ্জ অংশের ১ নম্বর পিলার থেকে ২৩ নম্বর পিলার পর্যন্ত কাজ করছে জাপানি আইএইচআই, এসএমসিসি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে টাঙ্গাইল অংশে দেড় কিলোমিটার ওপরে দৃশ্যমান হয়েছে সেতু।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একাধিক প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা নিয়োজিত আছেন। ১০৩ জন বিদেশি প্রকৌশলীসহ দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৭০০ জনের বেশি প্রকৌশলী কাজ করছেন। নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, দেশের এতবড় বৃহৎ মেগা প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে নিজেদের গর্বিত মনে করছি। এছাড়া সকল ধরণের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছি।

দেখা যায়, দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও নির্মাণ শ্রমিকরা সেফটি ফাস্টের আওতায় ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। এরমধ্যে কেউ বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ভর্তি করছেন, কেউ ক্রেন দিয়ে সেতুর নিমার্ণ সামগ্রী ওঠা-নামা করছেন, কেউ রেললাইনে পাথর ফেলে সমান করছে, কেউ নাট-বল্টু টাইট দিচ্ছেন, কেউ স্পিড বোট দিয়ে নিমার্ণ শ্রমিকদের স্থলভাগ থেকে আনা-নেওয়া করছে। সবমিলিয়ে রেল সেতু নির্মাণে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে।

নেপালি প্রকৌশলী অমৃত তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, তিনি কাতার, ওমান, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের এই বৃহৎ রেল সেতু নির্মাণ কাজ করে ইতিহাসের অংশ হতে চলেছেন। এছাড়া এ দেশের মানুষের সাথে সে কাজ করতে খুশি ও আনন্দিত। ইতিমধ্যে টাঙ্গাইল অংশে ৫০ থেকে ৩৪ নম্বর পিলার পর্যন্ত স্পেন বসানো শেষ। ৩৪ থেকে ২৪ নম্বর পিলারের দিকে স্প্যান বসানোর কার্যক্রমও চলছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সেতু নির্মিত হলে উত্তরাঞ্চলের ট্রেন চলাচল ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এর ওপর দিয়ে চলবে ৮৮টি ট্রেন। সাধারণ ছাড়াও দ্রুত গতির (হাইস্পিড) ট্রেন চলাচলে সক্ষম করে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে শুরুতে (উদ্বোধনের পর ১ বছর) ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প পরিচালক ফাত্তাহ আল মো. মাসুদুর রহমান বলেন, সেতুর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের পূর্ব অংশের সংযোগ রেললাইন নির্মাণের কাজও শেষের দিকে। পশ্চিম অংশে আগে সংযোগ রেললাইনের কাজ দ্রুত গতিতে হচ্ছে। শত বছর পরও এই রেল সেতুর তেমন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। এ পর্যন্ত ৬২ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।