• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

আমরা মানুষের জীবনকে উন্নত করতে চাই- প্রধানমন্ত্রী

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২৩  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আর কোনো সংঘাত চায় না, বরং জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন চায়। আমরা আর কোনো অশান্তি, সংঘাত চাই না। আমরা মানুষের জীবনকে উন্নত করতে চাই। আমরা সর্বদা এটি কামনা করি।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে দেশে বিরাজমান শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ গত ১৪ বছরে বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়মী লীগ জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন থেকে অব্যাহত শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশের কারণে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদানের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে রোববার আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সরকার ২০০৮ সালের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে আমরা দারিদ্র্যের হার ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস করা, শিক্ষার হার এবং মানুষের গড় আয়ু বাড়াতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বিরাজমান টেকসই ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশই বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির একমাত্র কারণ। একটি শান্তিপূর্ণ টেকসই পরিবেশ জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে সহায়ক- এটি সবাইকে মনে রাখতে হবে।
  
প্রধানমন্ত্রী আলোচনার মাধ্যমে সব বিরোধ নিষ্পত্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশ যে কাজটি ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে করেছে।

তিনি বলেন, এখন কেন এই অস্ত্র প্রতিযোগিতা? অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য যে অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে তা ক্ষুধার্ত শিশু ও মানুষের জন্য ব্যবহার করা হবে না কেন? এই অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য হাজার হাজার শিশু ও নারী বিশ্বজুড়ে অমানবিক জীবনযাপন করছে।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ১০ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, যারা নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছিল, যা তাকে ১৯৭১ সালের পরিস্থিতি স্মরণ করিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, আমরা চাই পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসুক। (পৃথিবীতে) কোনো ধরনের অশান্তি থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে। প্রতি মুহূর্তে আমাদেরকে তাদের (স্বাধীনতাবিরোধীদের) বাধা অতিক্রম করতে হচ্ছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন। সারাজীবন শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। কিন্তু তাকে জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে।

আমাদের কী দুর্ভাগ্য, যে মানুষটি সারাজীবন শান্তির কথা বলেছেন তাকে তার জীবন দিতে হয়েছিল- এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, আজ তিনি আর আমাদের মধ্যে নেই, তবে আমরা চাই তার দেশ উন্নত এবং সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে উঠুক।

দেশে-বিদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যারা কাজ করছেন তাদের স্বীকৃতি দিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শান্তি পুরস্কার’ প্রবর্তনেরও ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা শান্তি  চাই এবং আমরা অবশ্যই শান্তির পথে এগিয়ে যাবো।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এবং মূল বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও গবেষক মোনায়েম সরকার।

মূল বক্তব্যের ওপর আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও বিশিষ্ট লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু।

শুরুতেই বঙ্গবন্ধু ও তার জুলিও-কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও-কুরি শান্তি পদক প্রদানের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট ও প্রথম দিনের কভার উন্মোচন করেন। তিনি দিবসটি উপলক্ষে একটি স্যুভেনির প্রকাশনার প্রচ্ছদও উন্মোচন করেন।

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ কর্তৃক জুলিও-কুরি শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

ফিদেল কাস্ত্রো, হো চি মিন, ইয়াসির আরাফাত, সালভাদর আলেন্দে, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইন্দিরা গান্ধী, মাদার তেরেসা, কবি ও রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদা, জওহরলাল নেহেরু, মার্টিন লুথার কিং এবং লিওনিদ ব্রেজনেভের মতো বিশ্ব নেতারা এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

বিশ্ব শান্তি পরিষদের শান্তি পুরস্কারটি ছিল বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

জুলিও-কুরি শান্তি পুরস্কার ছিল বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার। এই মহান অর্জনের ফলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধুতে পরিণত হন।

বিশ্ব শান্তির সংগ্রামে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী মেরি কুরি এবং পিয়েরে কুরির অবদানকে স্মরণ করতে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ফ্যাসিবাদ, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মানবিক কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৫০ সাল থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সংস্থাকে জুলিও-কুরি শান্তি পুরস্কার প্রদান করে আসছে।