• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

সর্বশেষ:
আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৪ ঘণ্টায় র‍্যাবের অভিযানে গ্রেফতার ২৯০। মেট্রোরেল স্টেশনে হামলা: ছয়জন রিমান্ডে।

দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে হবে: প্রধানমন্ত্রী

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি কাজে সাশ্রয়ী ও যত্নশীল হতে হবে। এজন্য স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সরকার চলে জনগণের পয়সায়। সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল- বললে হবে না।

রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, মাদক থেকে দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়। আমাদের সমাজ এর থেকে মুক্তি লাভ করুক। আমরা চাই যে জনপ্রতিনিধিরা জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ যত্নবান হবেন।

টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রতিনিধি এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বলেন, যে কাজগুলো সরকার করে দেয়, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, যত্ন, এটা আপনাদেরই করতে হবে। সরকার চলে কিন্তু জনগণের পয়সায়। যেটাই হোক, এটা জনগণের, মাথায় রাখতে হবে।

প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের অনেক সরকারি অফিসারও থাকেন, নানা রকম বুদ্ধি-পরামর্শও দেন, আমাদেরও কেউ কেউ মনে করেন, এখানে একটা স্থাপনা করলেই তো ভালো একটা কমিশন পাওয়া গেল। বা কিছু পয়সা কামাই করা গেল। দয়া করে এ ব্যবস্থায় যাবেন না।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনার এলাকার জন্য কোনটা করলে পরিবেশ সংরক্ষণ করা হবে, মানুষের যোগাযোগ হবে, মানুষ উপকৃত হবে, সেগুলো দেখে প্রকল্প নিতে হয়। যত্রতত্র যেখানে সেখানে একটা কিছু করে ফেলে দেওয়া উচিত নয়। কোনো জলাভূমি, খাল, নদী এগুলো রক্ষা করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের অর্থ সাশ্রয় করতে হবে। অর্থ সাশ্রয় করে কাজ করতে হবে। যেন জাতীয়ভাবে বাংলাদেশকে আরো উন্নত করা যায়।

তিনি বলেন, প্রকল্প গ্রহণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে। শুধু মাত্র একটা কাজ দিলাম, আর পয়সা পেলাম, এ চিন্তা করে দয়া করে কেউ প্রকল্প নেবেন না।

প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে বাজে দৃষ্টান্তের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুপেয় পানির জন্য পুকুর কাটা হচ্ছে। সেই পুকুরের পানি পরিশুদ্ধ করে সবাইকে দেওয়া হবে। ঠিক দেখা গেল একপাশে পুকুর অপর পাশে বর্জ্য ফেলার জন্য বড় একটা খানা (গর্ত) তৈরি করা হচ্ছে। সুপেয় পানির পাশে বর্জ্য ফেললে কাক, চিল এগুলোতো ময়লা পানিতেই ফেলবে। পানি পরিশুদ্ধ পাবেন কীভাবে? করবেন কীভাবে? প্রকল্প নেয়ার সময় অবশ্যই এসব মাথায় রাখতে হবে। যথাযথ দূরত্ব রেখে করতে হবে, যেন অন্য কোনো কিছু দূষণের শিকার না হয়।

সারাদেশে স্থাপিত সুপেয় পানির উৎসগুলোর প্রতি সবাইকে যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পরিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কিন্তু একবার যখন করে দেওয়া হয়, তখন এটা কিন্তু আজীবন চলবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে। এটা জনপ্রতিনিধিদের নজরে রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা নির্দিষ্ট সময় পর এটা পরিষ্কার করতে হয়। একটা সময় পর বালু, কয়লা পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যে ফিল্টার লাগাই সেটাও পরিষ্কার করতে হবে। পাইপ, পানির ট্যাংক পরিষ্কার করতে হবে। সেটা না করলে কিছু দিন পর দেখা যাবে পানি হলুদ হয়ে যাচ্ছে, দূষণ হয়ে যাচ্ছে। তখন দোষ হবে সরকারের। কিন্তু এটা সংরক্ষণ করার দায়িত্ব কার?

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি যারা আপনাদেরই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। সরকারি কর্মচারীরা তো নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চাকরি করেন। তাদের তো জবাবদিহি নেই। কিন্তু জবাবদিহি তো আপনাদের, যারা জনগণের প্রতিনিধি। কাজেই সেবাটা পাচ্ছে কি না, তা আমাদেরই দেখতে হবে। আর না দেখলে চলবে না।

এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, প্রতিটি এলাকায় পানি শোধনাগার করে যাচ্ছি। এগুলো যথাযথ ভাবে যত্ন নেয়া হচ্ছে না। আপনারা সবাই দেখবেন এগুলো যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা সরকারি কর্মচারী, আছেন তাদেরও দায়িত্ব আছে। তারাও যথাযথভাবে দায়িত্বটা পালন করবেন।

গ্রাম থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুরুর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন থেকে গ্রাম পর্যায় থেকে যদি শুরু না করি, এগুলো একটা সমস্যা হবে। শহরগুলোতে কিন্তু এটা বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বর্জ্য কোথায় ফেলবে, কী করবে, না করবে ... বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন থেকে আমাদের নিতে হবে।

জনপ্রতিনিধিদের জনগণের সঙ্গে করা ওয়াদা পূরণ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে যে ওয়াদা দিয়ে এসেছেন, সেটা আপনারা রক্ষা করবেন।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, শরীয়তপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেদুর রহমান খোকা শিকদার, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন আহমেদ লাবলু, পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুন, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রশিদ লাবলুও স্থানীয় সরকার সংস্থার বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।