• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

দাবদাহে পুড়ছে দেশ, সুস্থ থাকতে যা করবেন

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২৪  

দেশজুড়ে গত কয়েকদিন ধরে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। প্রচণ্ড গরমে কর্মজীবী মানুষের বাইরে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে উঠেছে। ঘর থেকে বের হয়েই দাবদাহে অস্বস্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। ঘরে থাকা মানুষেরও গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। একটুতেই শরীর ঘেমে ভিজে উঠছে। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত ঘাম ও তীব্র রোদে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই এ সময় শরীর সুস্থ রাখতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

তারা জানান, গরমে অতিরিক্ত ঘামলে মানুষের শরীর ডিহাইড্রেড হয়ে পড়ে। এর ফলে ডায়রিয়া, হিট স্ট্রোক, কলেরা, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, পেটের সমস্যা, সর্দি-জ্বর, হাঁপানি, গ্যাসের সমস্যা, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ত্বকে সমস্যাসহ নানা ধরনের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু ও অন্তঃসত্ত্বাদের এ ঝুঁকি বেশি।

অতিরিক্ত গরমে বাড়ে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি:
মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কিছু বেশি। এটি ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়ে বেশি হলেই হিট স্ট্রোক হতে পারে। এ সমস্যায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এ বিষয়ে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, যখন শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ১০৫ এর উপরে উঠে যায়, তখন শরীরে ঘাম হয় না; মাথাব্যথা হয়, অস্থিরতা দেখা দেয়, বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে, লাল র‌্যাশের মতো দেখা দেয়। এছাড়া বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট, শরীরে ক্লান্তিভাব দেখা দেয়, চোখে ঝাপসা দেখা যায় এবং অবসাদ হয়। এক সময় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়, অজ্ঞানও হয়ে যায় অনেকে। এটি বিপজ্জনক। এটি খুবই সিরিয়াস, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা না দিলে রোগী মারাও যেতে পারে।

অতিরিক্ত গরমে দেহ পরিশোধিত রাখে পানি:
গরমে খাবার সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন বারডেম হাসপাতালের চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.) ডা. আখতারুন নাহার আলো। তিনি বলেন, গরমে ঘামের সঙ্গে সোডিয়াম পটাশিয়াম বেরিয়ে যায় সেজন্য দুর্বলতা বোধ যেমন হয়, তেমনি আবার পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। এজন্য এ সময় কিছুক্ষণ পর পর লবণ ও লেবুর রস দিয়ে পানি পান করা প্রয়োজন। পানি দেহের ভেতরটাকে পরিশোধিত করে। এ সময় তরমুজ, তুকমা, তেঁতুল, বেল, ইসবগুল, কাঁচা আম দিয়ে শরবত করে খাওয়া যেতে পারে। প্রতি বেলায় খাবারের সঙ্গে টকদই রাখতে পারলে ভালো হয়। টকদই প্রোবায়োটিকের কাজ করে, জীবাণুর হাত থেকে বাঁচায়। এছাড়া ইসবগুল, তেঁতুল, কাঁচা আম শরীরকে স্নিগ্ধ শীতল রাখে।

ঝাল-মসলা কম খাওয়ার পরামর্শ:
গরমের সময় গুরুপাক খাবারে শরীর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ফলে আরো গরম লাগে। এছাড়া হজমের গোলমাল, অনিদ্রা, বমি ভাব, চেহারায় ক্লান্তির ছাপ ইত্যাদি দেখা যায়। এ সময় ঝাল-মসলা যত কম খাওয়া হয় ততো ভালো।

দুপুর ও রাতের খাবারে ঠাণ্ডা সালাদ রাখলে ভালো হয়। গরমের দুপুরে সব সবজি দিয়ে নিরামিষ বা সুপ্ত করে খেলে ভালো হয়। ভাতের সঙ্গে আম, কামরাঙ্গা, আমড়া, আনারস ইত্যাদির টক ছোট মাছের ঝোল, সুসিদ্ধ ডাল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

প্রাতঃরাশে চিড়া-কলা-দই, সিদ্ধ ডিম, সিদ্ধ আটার রুটি, পাউরুটি, সাদা সবজি, জেলি, নরম খিচুড়ি ইত্যাদি রাখা যেতে পারে। কেউ কেউ গরমের সময় পান্তাভাত খেতে পছন্দ করেন। এতে শরীর যেমন ঠাণ্ডা থাকে তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। আবার শরীরে পানির অভাব দূর হয়। রাতের খাবারের পরিমাণ দুপুরের চেয়ে কম হওয়া উচিত। কারণ রাতের দিকে মানুষের শারীরিক পরিশ্রম যেমন কমে যায় তেমনই বিপাক ক্রিয়ার হারও কম থাকে। গরমের সময় অনেকেরই পেট খারাপ বা ডায়রিয়া দেখা যায়। পেটের গোলমাল যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এতে স্বাস্থ্য যেমন নষ্ট হয় তেমনই দেহের লাবণ্য নষ্ট হয়। গরমের পৃথক কোনো খাবার নেই। খাবার হবে সুষম ও সহজপাচ্য ও জলীয়। বাজার করার সময় সবজি ও ফল অবশ্যই কিনতে হবে।

দেহ মন যেন সুস্থ-সতেজ থাকে এমন খাবারই গরমের সময় খেতে হবে। গরমে খাবার গ্রহণের কিছু টিপসও দিয়েছেন ডা. আখতারুন নাহার আলো।

টিপসগুলো হলো:
* গরমে শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায় বলে খেতে হবে তরমুজ, শসা, ডাব, আম ইত্যাদি। এছাড়া পানিজাতীয় সবজি যেমন লাউ, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, পটোল হালকা তেলে রান্না করে খেতে হবে।

* এ সময় সব ধরনের মাছ অঙ্কুরিত-ছোলা-মুগ খেলে ভালো হয়।

* প্রতিদিন লেবু বা লেবুর শরবত খাওয়া উচিত।

* দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।

* ডুবো তেলে ভাজা খাবার এবং গুরুপাক খাবার এড়িয়ে যাওয়া ভালো।

* শুকনো ফলের পরিবর্তে তাজা ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন।

* তীব্র রোদে ঘুরে আসার পর অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি অথবা খাবার খাওয়া উচিত নয়। এতে আরাম হলেও শরীরের তাপমাত্রা তারতম্যের জন্য ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।

* হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য লবণ দিয়ে কাঁচা আম খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

* ডাবের পানি এ সময় খুবই উপকারী। এতে আছে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সালফার ও ক্লোরিন।

* তরমুজ তৃষ্ণা নিবারণে অব্যর্থ। এতে আছে বিটা ক্যারোটিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও লাইক্লোপেন। যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।