• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

২ ঘণ্টা ১৫ মিনিটে হাইকোর্টে ৩১৯০ মামলা নিষ্পত্তি

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২৩  

মাত্র সোয়া দুই ঘণ্টায় অন্তর্বর্তী জামিন সংক্রান্ত তিন হাজার ১৯০টি বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি করেছেন হাইকোর্টের ৯টি বিশেষ বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার‌্যবিধির ৪৯৮ ধারার এসব নিষ্পত্তি হয়।

এর মধ্যে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি কে এম ইমরুল কয়েশের বেঞ্চে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৪৯টি মামলা। বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চে ৪৯৪টি, বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরীর বেঞ্চে ৪৬৯টি, বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের বেঞ্চে ৪৯১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।

এ ছাড়া ২৯৭টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চে। বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের বেঞ্চে ৪৮৯টি, বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের বেঞ্চে ৯৯টি, বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের বেঞ্চে ৩০০টি এবং বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের বেঞ্চে ৩০২টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে।

২৮ ফেব্রুয়ারি এসব বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। পরে এ সংক্রান্ত আদেশটি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। আদেশে বলা হয়, ‘একত্রে ডিভিশন বেঞ্চে বসিবেন এবং ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৪৯৮ ধারা মোতাবেক ২০২১ সাল পর্যন্ত ফৌজদারি বিবিধ মোকদ্দমা সমূহ শুনানি ও নিষ্পত্তি করবেন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন।’

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, “৪৯৮ ধারার পুরনো মামলা নিষ্পত্তি করতে এর আগেও বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেছিলেন মাননীয় প্রধান বিচারপতি। এই উদ্যোগ চলমান থাকবে।”  

তিনি বলেন, “সোয়া দুই ঘণ্টায় এই ৯ বেঞ্চে মোট তিন হাজার ১৯০টি পুরাতন মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।”

গত বছর ১ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মামলা জট কমানোর উদ্যোগ নেন। অধস্তন আদালতের মামলা জট কমাতে ও কাজে গতিশীলতা আনতে হাইকোর্টের বিচারপতিদের প্রধান করে ‘মনিটরিং সেল’ গঠন করেন। এতে মামলা নিষ্পত্তিতে গতি বাড়ে। হাইকোর্টেও নিয়মিত বেঞ্চের পাশাপাশি রাখা হয় কয়েকটি বিশেষ বেঞ্চ। এসব বেঞ্চে জমে থাকা কিছু মামলা নিষ্পত্তি করা হয় দ্রুত সময়ের মধ্যে। গত বছর ৩০ মার্চ অবকাশ ছুটির মধ্যে উচ্চ আদালতে একসঙ্গে এক ডজন ডেথ রেফারেন্স মামলার (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন) নিষ্পত্তি হয়। সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে যা প্রথম। 

‘জামিন মঞ্জুর ও জামিনের অর্থের পরিমাণ হ্রাসের ক্ষমতা’ সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারার এসব মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন প্রধান বিচারপতি। সে উদ্যোগ বাস্তবায়নে গত বছর ১৭ এপ্রিল ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালের জামিন সংক্রান্ত মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য ১৩টি দ্বৈত বেঞ্চ গঠন করে দেন। গত বছর ২০-২১ এপ্রিল দুই দিনে বিশেষ এই ১৩টি বেঞ্চে আট হাজার ৫১৭টি মামলা নিষ্পত্তি করে। এরপর গত বছর ১১ আগস্ট আরও এক হাজার মামলা নিষ্পত্তি করেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ। 

জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, “পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে বিশেষ বেঞ্চ গঠন প্রধান বিচারপতির একটি ভালো উদ্যোগ। অনেক সময়ই দেখা যায়, কোনো আসামিকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দেওয়ার পর সঙ্গে তাকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, এ মর্মে রুলও জারি করেন হাই কোর্ট। এসব মামলায় অনেক ক্ষেত্রেই আসামি বা আইনজীবী কেউ ওই রুল শুনানির উদ্যোগ নেন না। অনেক সময় অন্য বেঞ্চ বা বিচারিক আদালত থেকে জামিন নেওয়ার কারণেও রুলগুলো বিচারাধীন থেকে যায়। আর যখন পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়, তখন একটি রুল বিচারাধী থাকলেও সেটি মামলা হিসেবে বিবেচ্য হয়। ফলে বিচারাধীন মামলা বাড়তে থাকে। এ কারণে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে এসব মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা প্রধান বিচারপতির একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।”

তবে বিদ্যমান আইন বা বিধি সংশোধন করে শুরুতেই এসব মামলা নিষ্পত্তি করে ফেলা যায় বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। এর ব্যাখ্যায় কাজল বলেন, ‘কোনো আসামিকে অন্তর্বর্তী জামিন দিয়ে আদালত সঙ্গে রুল দিয়ে জানতে চান, কেন তাকে নিয়মিত জামিন দেওয়া হবে না। আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি যে, অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়ার পর সে রুল খারিজ হয়েছে। অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া মানেই হলো ভবিষ্যতে আসামির নিয়মিত জামিন নিশ্চিত হওয়া। সুতরাং বিদ্যমান আইন-বিধি সংশোধন করে রুল জারি না করে আদালত যদি সরাসরি নিয়মিত জামিন দেন তাহলে কিন্তু মামলাজট সৃষ্টি হয় না। নিয়মিত জামিন দেওয়া পর সে জামিনের বিরুদ্ধে যদি সরকার, রাষ্ট্রপক্ষ বা কোনো সংক্ষুব্ধ পক্ষের আপত্তি থাকে, তাহলে তো আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আছেই। সেখানে তিনি জামিনের বিরুদ্ধে আবেদন করতে পারেন, জামিন স্থগিত চাইতে পারেন। সুতরায় বিদ্যমান আইন-বিধি সংশোধন করে সরাসরি নিয়মিত জামিনের বিধান করলেই এই মামলা জমে না।”