• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

নতুন শিক্ষাক্রম আরও চার শ্রেণিতে

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২৩  

 
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের তিনটি শ্রেণিতে চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০২৩) নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। এ তিনটি শ্রেণি হলো– প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম। আগামী বছর (২০২৪ শিক্ষাবর্ষে) থেকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। এরপর ২০২৫ সালে তা চালু হবে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে। আর উচ্চ মাধ্যমিকে একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।

 এ ছাড়া আগামী জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার বিভাগ বিভাজন থাকছে না। এর পরিবর্তে সব শিক্ষার্থীকেই মাধ্যমিক পর্যন্ত অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়তে হবে। বিভাগ বিভাজন হবে উচ্চ মাধ্যমিকে, অর্থাৎ একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিভাগ বিভাজন বন্ধের বিষয়ে এখনও অফিসিয়ালি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কিছু জানানো হয়নি। সারাদেশের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান সমকালকে জানান, এনসিটিবি বা মাউশি অধিদপ্তর এখনও চিঠি দিয়ে তাদের এ বিষয়ে কোনো কিছু জানায়নি। তাই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক কারও সেভাবে প্রস্তুতি নেই। নতুন শিক্ষাবর্ষের আর মাত্র ৫ মাস বাকি থাকলেও এ নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে কোনো কর্মশালা হয়নি। নেওয়া হয়নি তাদের কোনো পরামর্শ। তারা বলেন, এত বড় একটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে, অথচ গ্রামগঞ্জের বহু শিক্ষক জানেনই না জানুয়ারি থেকে বিভাগ বিভাজন থাকছে না।

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম সব শ্রেণিতে একসঙ্গে চালু না করে ধাপে ধাপে কার্যকর করা হচ্ছে। কারণ, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে নতুন পাঠ্যবই তৈরি করা হয়। নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য মডিউল তৈরি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও নতুন পাঠ্যবই রচনা এবং মুদ্রণ একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যকর করা হলে ভুলত্রুটি শুধরে সামনে এগোনো যায়।’

এনসিটিবির একটি সূত্র জানায়, চলতি বছর যে তিনটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যকর করা হয়েছে তার মধ্যে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে সবচেয়ে বেশি ত্রুটি-বিচ্যুতি লক্ষ্য করা গেছে। দুটি কমিটি করে এসব ত্রুটির সংশোধনীও ইতোমধ্যে জারি করা হয়েছে। তবে আগামী বছরের ষষ্ঠ ও  সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে আবারও পরিবর্তন আসছে। এর মধ্যে বড় পরিবর্তন হচ্ছে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বিষয়ে। এ বিষয়ে ‘অনুশীলন’ ও ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ নামে দুটি বই দেওয়ার কথা থাকলেও সেখান থেকে সরে এসেছে এনসিটিবি। এখন এই বিষয়ে একটি বই হবে। আর বিষয়বস্তুতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তুলনামূলক কম হলেও অন্যান্য বিষয়েও থাকছে পরিবর্তন। সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী বছর থেকে এই দুই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের বিষয়বস্তুতে প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতার ওপর প্রাধান্য কমিয়ে আধুনিক ইতিহাসের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি নয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণির জন্যও ‘অনুশীলন’ ও ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ নামে দুটি পাঠ্যপুস্তক থাকার কথা ছিল। কিন্তু এখন সব শ্রেণিতেই এই বিষয়ে একটি বই থাকবে। এখন শুধু বিজ্ঞান বিষয়ে ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ ও ‘অনুশীলন বই’ নামে দুটি পাঠ্যপুস্তক থাকবে। অন্যান্য বিষয়ের পাঠ্যবইয়ে ছবিসহ বিষয়বস্তুতেও কিছু কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞরা জানান, নতুন শিক্ষাক্রমে এরই মধ্যে শিক্ষাবর্ষের অর্ধেক সময় পার হয়েছে। পরীক্ষার চাপমুক্ত এই কারিকুলাম শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে বলে তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ ছাড়া আরও নানা কারণে নতুন শিক্ষাক্রম অভিভাবক ও শিক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। বিশেষ করে পঞ্চম শ্রেণির পিইসি, অষ্টম শ্রেণির জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হয়েছে। এখন ২০২৪ সালে নবম শ্রেণিতে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ তুলে দেওয়া হচ্ছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়ার পর ১০ শ্রেণি পর্যন্ত ১০টি বিষয় ঠিক করা হয়েছে। সেগুলো সবাই পড়বে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে ঐচ্ছিক বিষয়গুলো পড়বে শিক্ষার্থীরা। অর্থাৎ বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্যে বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিক থেকে। এদিকে, নতুন শিক্ষাক্রমে কোন শ্রেণিতে কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে তা এরই মধ্যে নির্ধারণ করেছে এনসিটিবি। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিশু শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষাই দিতে হবে না। তাদের শুধু শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে। এ ছাড়া ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ ভাগ। বাকি ৪০ ভাগ সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে।