• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

গণসংগীতের মঞ্চ ছেড়ে চলে গেলেন ফকির আলমগীর

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২১  

করোনা কেড়ে নিল প্রখ্যাত গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরকে। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। স্ত্রী, তিন ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।

ফকির আলমগীরের ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব গণমাধ্যমকে জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কভিড ইউনিটে ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। কয়েক দিন ধরে তিনি জ্বর ও খুসখুসে কাশিতে ভুগছিলেন। পরে কভিড-১৯ পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন, করোনা পজিটিভ। এরপর তিনি গ্রিন রোডের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন পড়লে সেখান থেকে তাঁকে গুলশানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ ছিল।

মাশুক আলমগীর জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়েছিল ফকির আলমগীরকে। এতে উন্নতিও হয়েছিল পরিস্থিতির। একসময় রক্তে ও ফুসফুসে ইনফেকশন পাওয়া যায়। রক্তচাপ খুবই নেমে যায়। ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন।

ফকির আলমগীর ষাটের দশক থেকে সংগীতচর্চা শুরু করেন। তিনি বাঁশীবাদকও ছিলেন। দেশের আন্দোলন-সংগ্রামে গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন তিনি। ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এবং ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে গণসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের সামরিক শাসনবিরোধী গণ-আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন তিনি তাঁর গান দিয়ে।

ফকির আলমগীর ও তাঁর সময়ের কয়েকজন শিল্পী শুরু করেছিলেন প্রথম বাংলা পপ ধারার গান। তাঁর কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

ফকির আলমগীর সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়া বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি, জনসংযোগ সমিতির সদস্যসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেন। সংগীতের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ‘একুশে পদক’, ‘শেরেবাংলা পদক’, ‘ভাসানী পদক’, ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার’, ‘তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক’, ‘জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদক’, ‘কান্তকবি পদক’, ‘গণনাট্য পুরস্কার’, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মহাসম্মাননা’, ‘ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় পুরস্কার’সহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্ম নেন। বাবা মো. হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেসা। ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করতেন তিনি। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যাঁরা আছেন হৃদয়পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই রয়েছে তাঁর।