• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

বাংলাদেশ নামে ভারতে আছে একটি গ্রাম

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২৩  

 
বাংলাদেশের নামে একটি ছোট্ট গ্রাম রয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের মাটিতেও। দেশটির কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরের বন্দিপোরা জেলা সদর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামটি। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম স্বচ্ছ পানির লেক বলে পরিচিত কাশ্মীরের উলার লেক। সেই লেকের গা ঘেঁষেই রয়েছে 'বাংলাদেশ' নামে এই ছোট্ট এবং সুন্দর গ্রামটি। 

এই গ্রামের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩ শতাধিক। জলপ্রপাত এবং পাহাড়ে ঘেরা এই 'বাংলাদেশ' গ্রামটি বন্দিপোরা-সোপোরা রোডের ধারেই অবস্থিত, ফলে যাতায়াতেরও কোন অসুবিধা নেই। 
ইতিমধ্যেই ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা এখানে ভিড় জমাচ্ছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিমত গ্রামের উন্নয়নে সরকার যদি একটু সচেষ্ট হয় আরো সুযোগ-সুবিধা দেয় তবে অচিরেই পর্যটকদের সেরা ডেস্টিনেশন হতে পারে 'বাংলাদেশ' গ্রামটি। একই অভিমত গ্রামটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকদেরও। 
 
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী ক্রমশ পর্যটন মানচিত্রে স্থান করে নিচ্ছে এই জায়গাটি। অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্টিত 'বাংলাদেশ' নামক স্থানটি ধীরে ধীরে পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এছাড়াও, গ্রামটির পাশেই উলার লেকের মনোরম পটভূমি, সর্বোপরি মাছ ধরা, বোটিং এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা পাওয়ার কারণে দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। 

কিভাবে প্রতিবেশী একটি দেশের নামে নামকরণ 
জানা গেছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র গঠনের পর এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় 'বাংলাদেশ'। ১৯৭১ সালের আগে পর্যন্ত উত্তর কাশ্মীরের বন্দিপোরা জেলার ওই গ্রামটির নাম ছিল জুরিমান। কিন্তু হটাৎ করেই একদিন সেই গ্রামটিতে অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয় বলে অভিযোগ। ফলে সেখানকার বাসিন্দারা গৃহহীন হয়ে পড়ে। এরপর সেই পোড়া জায়গা থেকে কিছুটা দূরে নতুন করে বসতি স্থাপন করে- যার নাম দেয় 'বাংলাদেশ'। 

আগে ওই গ্রামটিতে মাত্র ৫ থেকে ৬টি ঘর ছিল। বর্তমানে ওই গ্রামটিতে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ঘরের বাস। এই মানুষগুলোর জীবিকা নির্বাহ মূলত কৃষি ও মাছ ধরার ওপরই নির্ভরশীল। 

তবে ১৯৭১ সালে 'বাংলাদেশ' নামক এই গ্রামটি গড়ে উঠলেও দীর্ঘদিন ধরে সেটি সরকারী রেকর্ডে নথিভুক্ত হয়নি। যদিও পরবর্তীতে বন্দিপোরার জেলাশাসক কার্যালয় থেকে 'বাংলাদেশ' নামকে স্বীকৃতি দেয় এবং ২০১০ সালে এটিকে একটি পৃথক গ্রাম হিসাবে চিহ্নিত করে। 

এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে সরকার একদিকে যেমন গ্রামবাসীদের উন্নত সুযোগ-সুবিধা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তেমনি এই অঞ্চলকে পর্যটনমুখী করতেও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ব্যাপারে স্থানীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন 'সরকার এই অঞ্চলে পর্যটনের প্রসারের জন্য সমস্ত সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে তাদের আয় ও জীবনযাপনের মান উন্নত করতে সক্ষম হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। 

ইতিমধ্যে স্থানীয় দুই যুবক (সম্পর্কে দুই ভাই) ৪২ বছর বয়সী ফিরদৌস আহমেদ ভাট এবং ৪০ বছর বয়সী গোলাম হাসান- উলার লেকে পর্যটকদের নৌকা বিহারের জন্য বোট (shikara) নামিয়েছেন। 

ফেরদৌস গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'উলার মনোরম একটি লেক। কাশ্মীর কিংবা ভারতের অন্য জায়গা থেকে যেসব পর্যটকরা উপত্যকায় বেড়াতে আসেন তাদের উচিত এই উলার লেকটিও একবার ঘুরে যাওয়া।' 

উলার লেককে দূষণের হাত থেকে বাঁচারও আবেদন জানিয়েছেন ফেরদৌস। তিনি মনে করেন, এই লেকটি কেবলমাত্র এই অঞ্চলের মানুষদের জীবিকা নির্বাহের জায়গাই নয়, বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করতেও এই লেকের অবদান রয়েছে।