• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

‘সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে পাকিস্তানের দশা হবে শ্রীলঙ্কার মতো’

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২৩  

পাকিস্তানের বর্তমান সরকার আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে বলে বিশ্বাস করেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শিগগির অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে দেশটির দশা শ্রীলঙ্কার মতো হবে বলেও মনে করেন তিনি। সম্প্রতি বিবিসি উর্দুকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে পিটিআই চেয়ারম্যান আরও জানিয়েছেন, পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধানের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

সাক্ষাত্কারে ইমরান খানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি দেশটির অর্থনৈতিক ও সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত কি না? জবাবে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান বলেন, এই সরকার কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। তারা ক্ষমতায় এসেছে নিলামের মাধ্যমে।

তিনি অভিযোগ করেন, শাহবাজ শরিফ মোটা টাকায় সংসদ সদস্যদের (এমপি) কিনে ক্ষমতায় এসেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০ থেকে ২৫ কোটি রুপি দিয়ে এমপিদের ভোট কিনেছিলেন বলে অভিযোগ করেন ইমরান। আর এই কাজে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া শাহবাজকে সাহায্য করেছেন বলে দাবি করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

বাজওয়ার বিরুদ্ধে হাজার কোটি রুপি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি ডুবে গেছে। দেশ একটি চোরাবালিতে আটকা পড়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তা নাহলে পাকিস্তানের পরিস্থিতিও শ্রীলঙ্কার মতো হবে।

তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজন আইনের শাসন ভুলুণ্ঠিত করেছে। তারা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে রেখেছে। নিজেদের করা সব চুরি-দুর্নীতি মাফ করে দিয়েছে। শাহবাজ, নওয়াজ, জারদারি, মরিয়ম- সবাই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। এর চেয়ে বড় জুলুম আর কী হতে পারে? তাদের উদ্দেশ্য, নিজেদের বিরুদ্ধে সব মামলা শেষ করা।

‘নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে’

পাকিস্তানের কিছু রাজনীতি বিশ্লেষক মনে করেন, ইমরান খানের দল আগামী আগস্ট মাসে সাধারণ নির্বাচন চায়। কিন্তু সরকারের মন্ত্রীরা বারবার বলছেন, পার্লামেন্ট তার মেয়াদ শেষ করবে এবং পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অক্টোবরেই অনুষ্ঠিত হবে, তার আগে নয়।

এ প্রসঙ্গে পিটিআই প্রধান বলেন, আপনি আগস্টের কথা বলছেন। কিন্তু আমি এখনকার কথা বলছি। আমাদের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। রিজার্ভ রয়েছে মাত্র ৪০০ কোটি ডলার। বন্দরে পণ্য পড়ে রয়েছে, কিন্তু খালাস করা যাচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় বর্তমান সরকার আরও দুই মাস কীভাবে পার করবে সে প্রশ্ন তোলেন ইমরান খান। তার বিশ্বাস, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, সরকার আগামী এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।

২০২৩ সালের এপ্রিলে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি আরেকটি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। ঠিক এক বছর আগে একই মাসে পার্লামেন্টে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়েছিল।

‘সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক নেই’

কিছু পর্যবেক্ষক দাবি করেছেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পাকিস্তান সরকার অর্থনৈতিকভাবে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না এবং তেহরিক-ই-ইনসাফের আন্দোলন এই অস্থিতিশীলতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

জবাবে ইমরান খান দাবি করেন, পাকিস্তানে গত ১৭ বছরের মধ্যে তার সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্যই সবচেয়ে বেশি ছিল।

তিনি বলেন, কেউ তাকে (সাবেক সেনাপ্রধান বাজওয়া) জিজ্ঞেস করুন, কেন তিনি আমাদের সরকারকে উৎখাত করলেন? আমাদের সরকার কী এমন ভুল করেছিল যে টেনে নামানো হলো?

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এবং শওকত তারিন (তৎকালীন অর্থমন্ত্রী) একসঙ্গে জেনারেল বাজওয়াকে বলেছিলাম, আপনি যদি এই ষড়যন্ত্র সফল করতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করেন, তাহলে দেশের অর্থনীতি কেউ সামলাতে পারবে না। আজ সেটাই হয়েছে।

তিনি বলেন, তার সরকারের পতন ঘটানোর পরে বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন। দেশে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে। কারণ, যারা ক্ষমতায় এসেছে তাদের কোনো রোডম্যাপ নেই।

ইমরান খানের ভাষ্যমতে, জেনারেল বাজওয়া তাদের (শাহবাজ) সঙ্গে মিলে যা করেছে, কোনো শত্রুও পাকিস্তানের সঙ্গে তা করতে পারেনি।

এসময় ইমরানকে প্রশ্ন করা হয়, নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনিরের সঙ্গে তিনি ও তার দলের সম্পর্ক কেমন? জবাবে পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সঙ্গে নতুন সামরিক নেতৃত্বের কোনো সম্পর্ক নেই।