• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

৫০ বছরের বড় অর্জন মানুষ ধর্মান্ধতায় বিশ্বাস রাখেনি 

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ এপ্রিল ২০২১  

আমির হোসেন আমু। প্রবীণ রাজনীতিবিদ। উপদেষ্টা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই সংগঠক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন বিভিন্ন সময়।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মুখোমুখি হন ্আমাদের প্রতিবেদকের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আজকের বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশ যে মর্যাদা অর্জন করেছে, তা অবশ্যই ঈর্ষণীয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

প্রতিবেদক: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। বঙ্গবন্ধুর সহচর ছিলেন। যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশ স্বাধীন করলেন, তার কতটুকু পূরণ হলো পঞ্চাশ বছরে?

আমির হোসেন আমু: বঙ্গবন্ধু একটি মানবিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সারাজীবন আন্দোলন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ঠিক এটিই। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনামল যদি পর্যবেক্ষণ করেন, দেখবেন কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তার কর্মপরিকল্পনা। এ পরিকল্পনার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিহিত ছিল।

কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে সে আকাঙ্ক্ষার কবর রচনা করতে চেয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রব্যবস্থায় ফের রূপরেখা দাঁড় করায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্য দিয়ে। এসময় দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রয়াস চালান তারই কন্যা শেখ হাসিনা।

প্রতিবেদক: এখন কী বলবেন?
ক্ষমতায় থাকার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যে উচ্চতায় এনেছেন, তা গোটা বিশ্বকে অবাক করেছে। শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ আজ আত্মমর্যাদাশীল একটি রাষ্ট্র।

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল এটি এখন শুধু আমাদের কথা নয়। বিশ্ব নেতারাও প্রশংসা করছেন। সুবর্ণজয়ন্তীতে বিভিন্ন দেশের প্রধানরাও এসে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার প্রশংসা করছেন।

শেখ হাসিনার শক্ত হাতেই বাংলাদেশ আজ অধিক নির্ভার।

প্রতিবেদক: স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আওয়ামী লীগের বিকল্প একটি রাজনৈতিক বলয় গড়ে উঠলো না। এজন্য কী বলা যেতে পারে?
আমির হোসেন আমু: এ বিকল্প বলয় তৈরি করা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নয়। তবু আওয়ামী লীগ বারবার চেষ্টা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার মধ্য দিয়ে বিকল্প শক্তিগুলোকে সম্পৃক্ত করেছেন। এরপরও তারা যদি তাদের ঘর গোছাতে না পারে, তার দায় তো আমাদের নয়।

প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত করার মধ্য দিয়েই বিকল্প বলয়কে শক্তিহীন করা হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়াই রাজনীতির অন্তরায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

আমির হোসেন আমু: এটি ভুল ব্যাখ্যা। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অন্য যে দলগুলো আছে তারা মূলত জনসম্পৃক্ত হতে পারেনি। দেশের স্বার্থে, জনস্বার্থে দৃশ্যত তাদের কোনো কার্যক্রম নেই, পরিকল্পনা নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠুক। যাদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আরও বেগবান হবে।
প্রতিবেদক: বঙ্গবন্ধুর গড়া দল আওয়ামী লীগ কেমন আছে? আপনার এই পরিণত বয়সে কেমন দেখছেন দলের আদর্শ?

আমির হোসেন আমু: বঙ্গবন্ধুর গড়া আওয়ামী লীগ সময়ের ব্যবধানে আরও শক্তিশালী এবং সংগঠিত বলে মনে করি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে আপনি আওয়ামী লীগের আর কোনো বিকল্প খুঁজে পাবেন না। এটিই আওয়ামী লীগের নিজস্ব পরিচয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর টানা ২১ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশবিরোধী শক্তি মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে, আওয়ামী লীগের আদর্শের প্রশ্নে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে। এই সময়ে আদর্শের প্রশ্নে কিছুটা ফাটল ধরেছে, যা অস্বীকার করার উপায় নেই।

আওয়ামী লীগ মিথ্যাচারের রাজনীতি করে না। জনসম্পৃক্ততা না থাকলে একটি দল সরকার গঠন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। আইন তৈরি করে মানুষকে শাসন করার নাম রাজনীতি নয়। আইন নয়, আদর্শে ভর করলেই দেশ এগিয়ে যাবে।

প্রতিবেদক: স্বাধীনতার এতদিনে ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও শক্তিশালী হয়েছে। এটি দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জে ফেলছে কি-না?

আমির হোসেন আমু: ধর্মীয় সংগঠন আর সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল এক বিষয় নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই সাম্প্রদায়িক শক্তির তাণ্ডবও আমাদের দেখতে হয়েছে। ধর্মের আশ্রয় নিয়ে এই দেশকে বারবার পিছিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছে। শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।

প্রতিবেদক: আপনি এই শক্তি নিয়ে কোনো শঙ্কাবোধ করেন কি-না?

আমির হোসেন আমু: রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতার কারণেই সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান। এই শক্তি নিয়ে আমি নিয়ে শঙ্কিত নই।

কারণ তারা ষড়যন্ত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ নেই। শক্তির বিকাশ ঘটাতে পারবে না। ৫০ বছরের বড় অর্জন ধর্মান্ধতায় মানুষ বিশ্বাস রাখেনি। সাধারণ মানুষই এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবিলা করে চলছে। মানুষ থেমে থাকতে চায় না। এগিয়ে যাওয়াই তার ধর্ম।

প্রতিবেদক: উন্নয়নের কথা বললেন। মানবিক উন্নয়নে বাংলাদেশ কোথায় যেতে পারল?

আমির হোসেন আমু: মানুষ অমানবিক আচরণ করছে, এর জন্য সরকার দায়ী নয়। সরকার তো খুন-ধর্ষণ করতে বলছে না। বরং মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সরকার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করছে।

আমরা মানবিক প্রশ্নে কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছতে পারিনি, এটি স্বীকার করতে আমার কার্পণ্য নেই। সময়ের ব্যবধানে সব আঁধার কেটে যাবে। জীবনের এই বেলায় এসে আমি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই আশাবাদী।