• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ত্বক সতেজ রাখতে হলে

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৬ জানুয়ারি ২০২৩  

ত্বক সতেজ রাখতে হলে                                   
ত্বকে একটু দাগ কিংবা আঁচড় লাগলে সেই দাগ নিয়ে চিন্তা করেন অনেকেই। তাছাড়া বয়স বাড়ার কারণে যখন ত্বক ঝুলে যায়, তখন ভাঁজটা চোখে পড়ে। কপাল কুঁচকানোর প্রধান কারণ হলো, বয়সের কারণে, সূর্যের তাপ, ধূমপান, কম পানি পান। এছাড়া ডায়াবেটিস, ইনফেকশন সংক্রান্ত রোগসহ ওজন কমলেও ত্বকে ভাঁজ পড়ে বা কুঁচকে যায়। অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মুখের চোখের কোণ কুঁচকে যায়, ঠোঁটের পাশে দেখা যায় হালকা স্মাইল লাইন। অ্যান্টি-এজিং ক্রিম মেখে বলিরেখা কিছুটা সামাল দেওয়া গেলেও, কিন্তু চোখে পড়ার মতো বদল আনতে রইল কিছু টিপস।

মুখের ত্বক টানটান সতেজ রাখতে নিয়মিত স্কিন ফার্মিং লোশন মাখা উচিত। লোশনটিতে অ্যালোভেরা, হাইয়ালোরনিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ বা ভিটামিন ই আছে কি না, দেখে নিন। এই লোশন ত্বক কোমল আর আর্দ্র রাখবে।

নিয়মিত ত্বককে পরিস্কার রাখুন, ত্বককে আর্দ্র রাখার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নও করতে হবে। ত্বক টানটান রাখে সামুদ্রিক লবণ। নিয়মিত ত্বক এক্সফলিয়েট করুন, ড্রাই ব্রাশ করলেও ত্বকের মৃত কোষ উঠে যায়। সামুদ্রিক লবণ স্ক্র্যাব ব্যবহার করতে পারেন।

শারীরিক, মানসিক ক্লান্তি ভুলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে ম্যাসাজ। পছন্দের ক্রিম বা লোশন দিয়ে মুখের ত্বকে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করলে ত্বক উজ্জ্বল আর টানটান করে। নিয়মিত দিনে একবার যে কোনও লোশন দিয়ে মাসাজ করলে উপকার পাবেন।

টক দইয়ের মধ্যে স্ট্রবেরি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন তারপর সেটা মুখে ভালো করে মেসেজ করুন। কিছুক্ষণ রেখে সুতি কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে আস্তে করে মুছে ফেলুন। এটি ব্যবহারে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, এবং এতে ত্বক উজ্জ্বল ও টানটান হবে। নিয়মিত ব্যবহারে বেশ ভালো ফল পাবেন।

পাকা পেঁপে ত্বককে টানটান করেতে বেশ উপকারী।পাকা পেঁপে চটকে মুখে মাখুন। কিছু সময় রেখে কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। পাকা পেঁপে ত্বক ফরসাও করে।

অলিভ ওয়েল ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। ত্বক টানটান করতে অলিভ অয়েল বেশ কার্যকর। তাই সবাই এটি মাখতে পারেন।গোসলের আগে ত্বকে ভালো করে অলিভ ওয়েল মেসেজ করে কিছুক্ষণ পর গোসল করে নিন দেখুন ত্বকটা কেমন মোলায়েম আর টান টান লাগছে।

ডিমের সাদা অংশ ত্বককে টানটান করতে বেশ কার্যকর। ডিমে থাকা পুষ্টিগুণ ত্বকের অতিরিক্ত তেল বের করে দেয়। ডিমের সাদা অংশটি নিয়ে মুখে মাখুন। কিছু সময় রেখে ধুয়ে ফেলুন।

আমন্ড অয়েলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘ই’ যা ত্বককে আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে। ত্বক শুষ্ক হলে ফেটে যায় তখন ত্বক ফেটে ঝুলে পড়ে। ঝুলে পড়া চামড়া টানটান করতে আমন্ড ওয়েল বেশ ভালো কাজ করে। মুখে আমন্ড অয়েল ম্যাসাজ করে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। কয়েকদিন ব্যবহার করে দেখুন ত্বক বেশ টানটান ও উজ্জ্বল হবে।

তেলমশলা দেওয়া রান্না বা ভাজাভুজি খাবার রোজ খাবেন না। মাছ, ডিম, বাদামের, পর্যাপ্ত প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত, সঙ্গে ফল আর শাকসবজি। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াদাওয়া করলে ত্বকের ইলাসটিন আর কলাজেন দুটোই ভালো থাকবে।

ত্বক টানটান রাখতে পানির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। শরীর হাইড্রেটেড থাকলে ত্বকের উজ্জ্বলতা আর ইলাস্টিসিটি দুটোই বাড়বে। প্রতিদিন অন্তত ছয় থেকে আট গেলাস পানি খান, কিছুদিনের মধ্যেই তফাত বুঝতে পারবেন।

শারীরিক, মানসিক ক্লান্তি ভুলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে মাসাজ। পছন্দের ক্রিম বা লোশন দিয়ে মুখের ত্বকে ধীরে ধীরে মাসাজ করলে ত্বক উজ্জ্বল আর টানটান করে। নিয়মিত দিনে একবার যে কোনও লোশন দিয়ে মাসাজ করলে উপকার পাবেন।

ত্বক সুস্থ রাখাই হচ্ছে ত্বককে সুন্দর রাখার প্রথম ও প্রধান ধাপ। ত্বককে সুন্দর রাখতে হলে আমাদের তিনটি কাজ করতে হবে।

ত্বকের প্রতিদিনের চাহিদা পূরণ করতে হবে। 
সারা দিনে ত্বকের যে ক্ষতি হয় তা পূরণ করতে হবে। 
ত্বককে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সরবরাহ করতে হবে।
ত্বকের চাহিদা পূরণের জন্য দরকার ত্বকের প্রকৃতিভেদে একটি উপযুক্ত প্রলেপ, যাকে আমরা ময়েশ্চারাইজার বলি।

ময়েশ্চারাইজার হতে পারে হায়লিউরোনিক অ্যাসিড, সিরামাইড ও ফ্যাটি অ্যাসিড, গ্লিসারিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড ইত্যাদি।

ত্বকের ক্ষতিপূরণের জন্য যা ব্যবহৃত হয়, তা অ্যান্টি-এজিং প্রোডাক্ট হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে সবচেয়ে উপকারী হলো রেটিনল, পেপটাইড কো-অ্যানজাইম কিউ১০, নিয়াসিনামাইড ইত্যাদি।

এরা ত্বকের গভীরে বা ডারমিস স্তরের কোলাজেন ও ইলাস্টিন ফাইবারকে মজবুত রাখে। ত্বকের দাগ অপসারণ করে, ত্বককে মসৃণ ও দ্যুতিময় করে তোলে।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, সেলেনিয়াম ও ক্রোমিয়ামের মতে কিছু খনিজ পদার্থ এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস। এদের মধ্যে ভিটামিন-সি সিরাম এর বহুবিধ জাদুকরি কার্যকারিতার জন্য আজকাল চিকিৎসক ও রোগী-উভয়ের কাছেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

নিজের ত্বককে সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখতে একটি ডেইলি রুটিন করে নিতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস লেবুর পানি পান করতে পারেন। এটি আপনার ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। তারপর প্রথমে একটি ভালো মানের ক্লিনজার দিয়ে আপনার ত্বককে ক্লিন করে নিন। ক্লিনজার আপনার ত্বকে জমে থাকা ময়লা পরিস্কার করবে। ক্লিনজারের পর আপনার ত্বকে একটি ভালো মানের টোনার ব্যবহার করুন। এরপর একটি ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে আপনার ময়েশ্চারাইজারটি যেন অয়েল ফ্রি হয়। কারণ অয়েল বেসড ময়েশ্চারাইজার এই আবহাওয়ায় উপযোগী নয়। এই সময়ে বাইরে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের বেলায় বিশেষ করে সকাল ১০ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে; তাই দিনের বেলায় বাইরে বের হলে ন্যূনতম এসপিএফ ১৫ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়াও দিনের বেলায় বাইরে বের হলে ছাতা, সানগ্লাস ব্যবহার করতে পারেন রোদ থেকে নিজের ত্বককে রক্ষা করতে। এই সময়ে মেকআপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অয়েল ফ্রি পণ্যগুলো বেছে নিতে পারেন। বাইরে থেকে ফিরে রাতে ঠিক একইভাবে আপনার ত্বকে ক্লিনজার, টোনার ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। হাত ও পায়ের বিশেষ যত্ন নিতে রাতে হ্যান্ড ক্রিম ও ফুট ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।

সৌন্দর্যচর্চায় প্রাচীনকাল থেকেই উপটান ও ফেইস প্যাকের ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমান সময়েও এর ব্যতিক্রম হয়নি। 

বর্তমানে বিভিন্ন ফেস প্যাকের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শিট মাস্ক তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আপনিও আপনার ত্বকের যত্নে এ ধরনের শিট মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া ঘরেই তৈরি করে নিতে পারেন আপনার ত্বকের উপযোগী ফেইস প্যাক। ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেইস প্যাক তৈরি করতে হবে। 

যারা শুষ্ক ত্বকের অধিকারী তারা এক চামচ কফি পাউডারের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেল ও কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। যারা তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী, তারা বেসনের সঙ্গে মালটার রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। আর যারা শুস্ক ও তৈলাক্ত উভয় ত্বকের অধিকারী তারা অ্যালোভেরার সঙ্গে মধু মিশিয়ে ফেইস প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ফেইস প্যাকগুলো ১৫ থেকে ২০ মিনিট ফেইসে রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই ফেইস প্যাকগুলো আপনার ত্বককে উজ্জ্বল, সতেজ ও প্রাণবন্ত করতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া কোনো ভালো মানের সেলুনে গিয়ে আপনার ত্বকের উপযোগী কোনো ফেসিয়াল নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বায়ো হাইড্রা ফেসিয়াল এ সময়ের জন্য খুবই কার্যকরী হতে পারে। এটি আপনার ত্বককে উজ্জ্বল, সতেজ ও টানটান করবে।

তবে আপনাকে রূপচর্চা করার সঙ্গে সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, মানুষের সৌন্দর্য বিকশিত হয় তার ভেতর থেকে। তাই নিজের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। এই গরমে নিজেকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে বেশি বেশি পানি পান করুন। ডাবের পানি ও বিভিন্ন রকম ফলের রস পান করতে পারেন। মৌসুমি ফল ও শাকসবজি খেতে পারেন। এ খাবারগুলো আপনার ত্বককে মসৃণ, সুন্দর ও সতেজ করবে। যথাসম্ভব তৈলাক্ত খাবার ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন। কারণ এগুলো আপনার ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে। নিজের ত্বক ও নিজেকে ভালো বাসুন।