• সোমবার ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ||

  • অগ্রহায়ণ ২৫ ১৪৩০

  • || ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

মা দিবস হিসেবে পালন করার রীতি

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০২৩  

মা দিবস হিসেবে পালন করার রীতি                                    
‘মা’ কথাটি ছোট্ট হলেও মা-ই বসুন্ধরা। মমতার আধার তার সহজাত মমত্ব দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখেন অসামান্য দরদে। সন্তানের রোগে-শোকে মাও আক্রান্ত থাকেন একই তন্ত্রীতে। মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার সেরা সৃষ্টি মায়ের মতো আপন কেউ নেই, কেউ হতেও পারে না। সবচেয়ে আপনজন মাকে সম্মান জানাতে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘মা দিবস’। এ দিবস নিয়ে লিখেছেন অজেয় চৌধুরী। 

সাধারণত প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে পালন করার রীতি অনেক দেশেই গড়ে ওঠেছে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে প্রতিবছর মা দিবস পালন করা হয়। তবে দেশভেদে মা দিবস পালনের তারিখে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, মা দিবস পালন করার রীতি এ যুগের নয়। আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগেও অনেক দেশে এ দিবসটি পালন করত মানুষ। অবাক হওয়ারই কথা।

খ্রিস্টের জন্মের অনেক আগে থেকেই মিশর, রোম ও গ্রিসে মা দিবস পালন করা হতো। তবে সে দিবসটা ঠিক আমাদের বর্তমানের মা দিবসের মতো ছিল না। সেটাকে দেবতাদের মায়ের আরাধনা বলা যেতে পারে। সেসময়ে দেবতাদের মায়েদের (যেমন দেবী আইসিস, সিবিলি, রিয়া) পূজা করা হতো। এদিকে ১৬ শতকে ইংল্যান্ডে মা দিবস পালন করা হতো বলে জানা যায়। এটাই ছিল দেব-দেবীদের মা ছাড়া নিজের আসল মাকে নিয়ে মানে রক্ত মাংসের মাকে নিয়ে মা দিবস। দিবসটি তারা মাদারিং ডে হিসেবে পালন করত। সেদিন সরকারি ছুটিও ছিল।

পরিবারের সবাই তাদের মায়ের সাথে দিনটি কাটাত। তবে এই দিবসটি ততটা প্রসার লাভ করেনি। ব্রিটিশরা আমেরিকায় তাদের কলোনি স্থাপন শুরু করার পর ইংল্যান্ড থেকে দলে দলে মানুষ আমেরিকায় বসবাস করতে শুরু করে। আমেরিকার এই সব নতুন অধিবাসীরা ইংল্যান্ডের মাদারিং ডে’কেও আমেরিকায় আমদানি করে নিয়ে আসতে চেষ্টা করে। কিন্তু নানা কারণে সেটা তারা চালু রাখতে পারেনি। এর প্রায় ১০০ বছর পর ১৮৭০ সালে আমেরিকার জুলিয়া ওয়ার্ড হাও নামের এক গীতিকার মা দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। তিনি আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় একটি দেশাত্মবোধক গান লিখেছিলেন। সে গানটা সে সময় বেশ জনপ্রিয় ছিল। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের সময় হাজার মানুষকে হত্যা করা হচ্ছিল কারণে বা অকারণে। এক মায়ের সন্তান আরেক মায়ের সন্তানকে হত্যা করছিল অবলীলায়। এসব হত্যাযজ্ঞ দেখে জুলিয়া খুব ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি এটা বন্ধ করার জন্য আমেরিকার সব মাকে একসাথে করতে চাচ্ছিলেন। আর এ কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক মা দিবস পালন করতে চাচ্ছিলেন।

তার লক্ষ্য ছিল এ দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করার। তিনি ব্যাপকভাবে সাড়া না পেলেও তার নিজের শহর বোস্টনে দিবসটি পালিত হচ্ছিল বেশ ঘটা করেই। এদিকে ভার্জিনিয়ার একটি মেয়েদের দল জুলিয়া ওয়ার্ড হাওয়ের প্রস্তাবিত মা দিবসটি পালন করত বেশ মর্যাদার সঙ্গেই। এ দলের নেত্রী ছিলেন অ্যানা রিভেস জারভিস। তিনি গৃহযুদ্ধের সময়কালে ‘মাদার’স ফেন্ডসিপ ডে’ পালনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ দিবসের পালনের কারণে গৃহযুদ্ধ সময়কালে অনেকটাই শান্তির বার্তা এনে দিয়েছিল। 

অ্যানা রিভেস জারভিস তার জীবনের সুদীর্ঘ ২০ বছর কাটিয়েছিলেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনের একটি গির্জায়। সেখানে তিনি সানডে স্কুলের শিক্ষকতা করেছেন। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মা দিবস ঘোষণা আন্দোলনের হাল ধরে। অ্যানা জীবিত ও মৃত সব মায়ের প্রতি সম্মান জানানোর তথা শান্তির জন্য এ দিবসটি পালন করতে চাচ্ছিলেন। এ লক্ষ্যে তারা ১৯০৮ সালে গ্রাফটনের ওই গির্জার সুপারিনটেনডেন্টের কাছে একটি আবেদন জানায়। তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে সে বছরই ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ও পেনসিলভেনিয়ার কয়েকটি গির্জায় মা দিবস পালিত হয়। এভাবে অনেকেই প্রতিবছরই মা দিবস পালন করতে শুরু করে। এরপর অনেক পথ পেরিয়ে ১৯১৪ সালে আমেরিকার তত্কালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে জাতীয় মা দিবসের মর্যাদা দেয়। আরও পরে ১৯৬২ সালে এই দিবসটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। মা দিবস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পালন করা হয়। শুধু কি তাই, দেশভেদে এই বিশেষ দিবস পালনের রীতিও ভিন্ন ভিন্ন। তবে সব দেশের রীতিতে যত ভিন্নতাই থাকুক একটা ব্যাপারে সবাই কিন্তু এক। সেটা আর কিছুই নয়, সবাই চায় এই দিনে মাকে খুশি করতে। মায়ের সাথে সময় কাটাতে, মাকে সুন্দর সুন্দর জিনিস বানিয়ে উপহার দিতে।

পৃথিবীর সব দেশের শিশুর প্রথম ভাষা ‘মা’। মা কিন্তু হেলাফেলার কোনো কিছু নয়। মা দিবসটিও পালন করতে হবে সুন্দর ও অর্থপূর্ণভাবে। এই দিনে অনেকেই ফুল, বই, গানের সিডি, চকোলেট বা অন্য বিশেষ কোনো কিছু উপহার হিসেবে বেছে নেয়।

বাংলাদেশে এ বছর ১৪ মে (রবিবার) ‘মা দিবস’ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি পালন পালন করা হয়।

এই দিবসে যা করতে পারেন

সারাদিন মা কত পরিশ্রম করেন সেটা কি কখনো ভেবে দেখেছেন? মা দিবসে মাকে একটু বিশ্রাম দিতে বাড়ির কাজগুলো না হয় নিজেই করুন। বাড়ির ঘরগুলো যতটুকু পারেন সাজিয়ে গুছিয়ে রাখুন। শুধু মা দিবসেই নয় অন্যান্য দিনেও মাকে নানাভাবে সাহায্য করতে পারেন।

মায়ের প্রিয় কোনো খাবার রান্না করতে পারেন। আর রান্না যদি করতে না পারো তাহলে অন্তত একটা আইসক্রিম তো বানাতে পারবেন, তাই না? নিজের হাতে একটা আইসক্রিম বানিয়ে মাকে দিন।
মায়ের জন্য কিনে নয় নিজেই তৈরি করতে পারেন একটি কার্ড। দেখতে সুন্দর না হোক আপনার হাতের ছোঁয়ায় তৈরি এই সামান্য জিনিসটাই মায়ের কাছে অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে।
মাকে নিয়ে একটি ছবি এঁকে ফেলুন।
যারা বিশেষ কারণে এই দিনে মায়ের কাছে থাকতে পারছেন না তারা মাকে চিঠি লিখতে পারেন। আর ফোন কল, এসএমএস তো পাঠাবেনই। যারা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তারা মজার মজার মা দিবসের ই-কার্ড পাঠাতে পারেন।