• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

বিদ্যালয় রক্ষায় ২৭ শতাংশ জমি দিলেন সাবেক শিক্ষক

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২১  

নীলফামারী জেলা সদর থেকে ডোমার সড়ক প্রশস্তকরণকাজের জন্য শালমারা বন্দরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনসহ পুরো জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। অধিগ্রহণের পর অবশিষ্ট জমি না থাকায় বিদ্যালয়টিকে বিলুপ্ত করে শিক্ষার্থীদের পাশের একটি স্কুলে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা শিক্ষা কমিটি। কিন্তু বিদ্যালয় বিলুপ্ত হওয়ার খবর জানার পর তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি ওই বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র রায়।

কোনো উপায়েই যখন বিদ্যালয়টিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যাচ্ছিল না, তখন বিদ্যালয়ের পাশেই নিজ মালিকানাধীন ২৭ শতাংশ জমি বিদ্যালয়কে দান করে বিলুপ্তির হাত থেকে বিদ্যালয়টিকে রক্ষা করলেন তিনি। জগদীশ শালমারা বন্দরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৮ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

শালমারা বন্দরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মহামায়া দেব বর্মা জানান, ১৬ জুন (বুধবার) বিকেলে ডোমার উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে সবার উপস্থিতিতে সাবেক প্রধান শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ২৭ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে লিখে দেন। ফলে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পায় বিদ্যালয়টি।

এ সময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ, ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজার রহমান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমীর হোসেনসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র রায় বলেন, শালমারা বন্দরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমি ২৮ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছি। নিজের সন্তানের মতো করে বিদ্যালয়টিকে সাজিয়েছি আমি। আজ শুধু জমির কারণে স্কুলটি বিলুপ্ত হবে এটা মানতে পারি নাই। আমি জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আমার পরিবারও আমায় উৎসাহ দিয়েছে। এখন মনে হয় আমি যেন আমার সন্তানকে বাঁচালাম।

ডোমার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমীর হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের ওপর দিয়ে সড়ক প্রশস্তকরণের জমির অভাবে বিদ্যালয়টি বিলুপ্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাবেক প্রধান শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র রায় জমি দান করায় বিদ্যালয়টি আর বিলুপ্ত করা হবে না।

ডোমার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ বলেন, জগদীশ চন্দ্র রায় স্কুলের বিলুপ্তি ঠেকাতে নিজের মালিকানাধীন জমি দান করে একটি মহৎ কাজ করেছেন। তার এই কাজে আমি নিজেও অনুপ্রাণিত হয়েছি। সমাজের সবার প্রতি আহ্বান থাকবে জগদীশ রায়কে অনুসরণ করার।

বিদ্যালয়টিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করায় ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ গোটা শালমারা এলাকার মানুষ সাবেক প্রধান শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র রায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার জগদীশ রায়কে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা ডোমার শালমারা বন্দরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে বিদ্যালয়ের নিবন্ধন হয়। ২০১৩ সালের জাতীয়করণ করে সরকার। জগদীশ চন্দ্র রায় ১৯৯০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ওই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। আর ২০১৮ সালে অবসরে যান।