• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

নীলফামারীতে গ্রামগঞ্জে বাড়ছে জ্বর-সর্দি

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২১  

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা পূর্ব কাঠালী গ্রামে ঘরে ঘরে জ্বর। এদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা করেছেন ৯ জন। করোনা পজেটিভ হয় ৮ জন। কিন্তু ওই গ্রামের এমন উপসর্গ নিয়ে অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কেউ নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। নমুনা পরীক্ষায় সরকারী ফি ১০০ টাকা। এই টাকাই যেন তাদের কাছে বড়। 

নীলফামারী সদরের লক্ষীচাপ ইউনিয়নেও একই অবস্থায়। এই ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে জ্বর। এই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান (৫৭) জানালেন জ্বরের উপসর্গ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার(২৪ জুন/২০২১) নমুনা টেস্ট করে আমি করোনা পজেটিভ হয়েছি। 

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আজ শুক্রবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ৪৬জন রোগী চিকিৎসা নেন। এরমধ্যে ৩৫জন জ্বরের রোগী ছিলেন। অধিকাংশরাই ঔষুধ নিয়ে চলে গেছেন আর ক’জন ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। 

হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, জ্বরে স্বাভাবিক যে ঔষুধ দিয়ে থাকি আমরা, এখোনো সে ঔষুধ দিয়েছি রোগীদের। দ্রæত সুস্থ্য হচ্ছেন রোগীরা। তবে তিনি বলেন, অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই সময়ে রোগীর সংখ্যা একটু বেশি। 

অপরদিকে, নীলফামারী শহরের মিলন পল্লী এলাকার বাসিন্দা রিপন কুমার মজুমদার। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তার নিজেরসহ পরিবারের পাঁচজন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন গেল কয়েকদিনে। তবে জ্বরের স্থায়ীত্ব ২৪ ঘন্টার বেশি হয়নি। তার নিজের চারঘন্টায় জ্বর নেমে গেছে। এজন্য নাপা সেবন করেছিলেন তিনি। 

রিপন কুমার মজুমদার বলেন, তেমন কোন সমস্যা ছিলো না আমাদের। স্বাভাবিক ভাবে জ্বর হলে আমরা যে ঔষুধ খাই সেটি সেবন করে জ্বর নেমে যায় সবার। 

শহরের বাবুপাড়া এলাকার মুদি দোকান ব্যবসায়ী রশিদুল ইসলাম। তিনিসহ পরিবারের চারজন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন বুধবার রাতে। এরমধ্যে স্ত্রী, ছেলে ও শ্যালকও ছিলেন। এখন জ্বর নেমে গেছে সবার। 

রশিদুল ইসলাম বলেন, বুধবার(২৩ জুন) রাতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম, গিয়ে জ্বরের অনেক রোগী দেখতে পাই। চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষুধ খেয়ে জ্বর নেমে গেছে সবার। 

নীলফামারী জেনালের হাসপাতালেও অন্যান্য সময়ের চেয়ে জ্বরের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শুক্রবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ১১৩জন রোগি চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে ১৪জন শুধুমাত্র জ্বর এবং অন্যান্য রোগের সাথে জ্বর ছিলো এমন সংখ্যা অন্তত ১৬জন। 

চিকিৎসকরা বলছেন এটি সিজনাল জ্বর। আবহাওয়ার পরিবর্তন, প্রচন্ড গরম, শরীরে ঘাম শুকিয়ে যাওয়া এবং গরমের কারণে ঠান্ডা পানীয় গ্রহণ করায় এমন হয়ে থাকে।

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা(আরএমও) ডা. অমল রায় জানান, মুলত আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। এটি তেমন কোন বিষয় নয়। জ্বরের ঔষুধ সেবন করলে জ্বর নেমে যাচ্ছে। 
ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ফায়ার সার্ভিস এলাকার বাসিন্দা মোমিনুল ইসলাম জানান, আমার বাড়িতে দুই জনের জ্বর। আমি গত রাত থেকে জ্বর অনুভব করছি। তবে আজ দুপুরে জ্বর নেমে গেছে। আমার বাড়ির পাশের অনেকেরই জ্বর। 

সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবু মোহাম্মদ আলেমুর বাশার জানান, এটি সিজনাল জ্বর। গ্রামে গঞ্জে হচ্ছে। তারা নিজেরা ট্রিটমেন্ট নিচ্ছেন। অনেকে করোনার নমুনা দেন আবার অনেকে দেন না। তবে করোনার নমুনা আমরা শহর থেকে বেশি পাই। তবে আমরা মাস্ক পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছি এমনকি কমিউনিটি ক্লিনিকে পরামর্শ নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। 

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) নীলফামারীর সভাপতি তাহমিন হক ববি বলেন, গ্রামে গঞ্জে জ্বর, সর্দি, কাঁশির প্রকোপ দেখা গেলেও নমুনা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন আক্রান্তরা। সীমান্তবর্তি হিসেবে করোনার জন্য নীলফামারী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহিৃত হয়েছে। কিন্তু আমরা উদাসীন অবস্থায়। ১০০টাকা খরচ করে পরীক্ষা করতে চাচ্ছি না আমরা।
এ বিষয়ে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডাঃ রেজাউল করিম জানান, যেহেতু এখন করোনাকালীন সময় চলছে সে হিসেবে জ্বর হলে করোনার জন্য নমুনা দেয়া উত্তম। কারণ কার পজিটিভ হবে আর কার হবে না সেটি আমরা পরীক্ষা না করলে বলতে পারবো না। এখনতো সকল উপজেলা ও জেনারেল হাসপাতালে এন্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। নমুনা টেস্টতো সহজ। সঙ্গে সঙ্গে রির্পোট পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু গ্রামের মানুষজন নমুনা পরীক্ষা করতে অনিহা দেখা যাচ্ছে বেশী। 

তিনি বলেন আমি মনে করি যথানিয়মে মাস্ক ব্যবহার করা অতি গুরুত্বপুর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সুত্র জানায়, গেল ২৪ঘন্টায় নীলফামারী জেলায় নতুন করে ১৮জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

উল্লে্যি, নীলফামারী জেলায় বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৩০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে ১৪ জনকে রংপুর করোনা ডেডিকেট হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। শুরু থেকে এই পর্যন্ত জেলায় মোট ১২ হাজার ৮৮৮ জনের নমুনার ফলাফলে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭৫৩ জন। সুস্থ্য হয়েছেন ১ হাজার ৫৮৮ জন। মারা গেছেন ৩৫ জন।