• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

পাঁচ সন্তান নিয়ে দিশেহারা ট্রাকচাপায় নিহত আজিজুলের স্ত্রী

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২২  

পাঁচ সন্তান নিয়ে দিশেহারা ট্রাকচাপায় নিহত আজিজুলের স্ত্রী          
ভ্যানচালক আজিজুল ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করতেন। অভাবের সঙ্গে না পারা আজিজুল পাশাপাশি বাড়ির পাশের পতিত জমিতে সবজি চাষ করতেন। সেই সবজি ভ্যানে করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে সাতজনের সংসার চালাতেন।

গত ১৬ জুলাই সকালে আজিজুল ভ্যানে করে সবজি নিয়ে উপজেলার টেংগনমারী বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। কিসামত বটতলা শান্তিনগর বাজার এলাকায় বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক যাওয়ার সময় ওই পেছন থেকে ভ্যানটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে আজিজুল ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। কিন্তু এটিই যে তার বাড়ি থেকে শেষ যাওয়া ছিল, তা কে জানত?

আজিজুলের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ আজিজুলের স্ত্রী মহবিনা বেগম। কারণ, পরিবারে এক ছেলে ও চার মেয়ে সন্তানকে নিয়ে তিনি ভেবে কূল পাচ্ছেন না। সংসার চালানোর কোনো উপায় না থাকায় সন্তানদের মানবেতর জীবন পার করছেন তিনি।

সরেজমিনে জানা যায়, আজিজুলের বসতভিটা ছাড়া আর তেমন কোনো কিছুই নেই। পরিবারের একমাত্র উপার্জনের ব্যক্তি ছিলেন আজিজুল। শুধু দুটি টিনের ঘর ও একটি রান্নাঘরই শেষ সম্বল। আজিজুল বেঁচে থাকাকালীন অভাবের কারণে বন্ধ হয়েছিল বড় ছেলে রুবেলের পড়াশোনা। বর্তমানে বড় মেয়ে রাজিয়া পড়ে দশম শ্রেণিতে। মেজ দুই মেয়ে পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। ছোট মেয়ে পড়ে না। একদিকে সংসার চালানোর চিন্তা, অন্যদিকে সন্তানদের পড়াশোনা, কিছুই ভাবতে পারছেন না মহবিনা বেগম।

মহবিনা বেগম বলেন, আমি এখন কী করব? এই যাদুগুলাক কায় দেখবে, বাচ্চাগুলা ছারখার হয়া বেরাইবে। কায় দেখবে, পড়াশুনা কেমন করি করবে! ট্রাক দুর্ঘটনায় স্বামী চলি গেল। এই পাঁচটা সন্তানকে নিয়ে আমি কী করব, কীভাবে সংসার চালাব? আমি বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।

দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মহবিনার বড় মেয়ে রাজিয়া বলে, আগে বাবা ছিল। লেখাপড়ার খরচ যেভাবে হোক দিত, পড়াশোনা করতাম। এখন তো বাবা নাই, কীভাবে পড়াশোনা করব? খাব কী? তার কোনো উপায় নাই।

মহবিনার এমন করুণ জীবনের পাশে থাকতে না পারলেও তাদের কষ্টের সহমর্মিতা জানিয়ে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য চেয়েছেন তার প্রতিবেশীরাও।

প্রতিবেশী আমেনা বেগম বলেন, এই পরিবারের একজন ছিল কামাই করার মানুষ আর খাইত সাতজন। এখন সেই মানুষটা নাই। বাড়িটা ছাড়াও আর কিছু নাই। এখন ওরা কীভাবে খাবে, চলবে, আল্লাহ জানেন। পরিবারটার জন্য এখন সরকারের সহযোগিতা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।

স্থানীয় মমিন হোসেন বলেন, আজিজুল ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুটা মেনে নিছি। তবে তার পরিবারের মানবেতর অবস্থা সহ্য হচ্ছে না। বাচ্চারা কীভাবে খাবে, পড়াশুনা করবে? কোনো পথ নাই তাদের। তাই সরকার, মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন জানাই, যেন তাদের কোনো একটা ব্যবস্থা করে দেয়, যা দিয়ে তারা ভালোভাবে চলতে পারে।

পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রকিবুল ইসলাম বলেন, আমি সাধ্যমতো পরিবারটির পাশে থাকার চেষ্টা করছি। সরকারের কোনো সুযোগ-সুবিধা আসামাত্র ইনশা আল্লাহ আমি তাদের দিয়ে সহায়তা করব।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এমদাদুল হক জানান, বিষয়টি অত্যন্ত করুণ। সমাজসেবার পক্ষ থেকে পরিবারটিকে সাহায্য করার চেষ্টা করা হবে।