• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা: পাতকুয়ার সেচে কম খরচে লাভবান কৃষক

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২২  

কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা: পাতকুয়ার সেচে কম খরচে লাভবান কৃষক           
দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে বিশাল ক্ষেতের মাঝে শাপলা ফুল ফুটে আছে। কিছুটা কাছে গেলে বোঝা যায় শাপলা ফুলের আদলে তৈরি বিশাল এক ছাতা। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও জমিতে সেচ কার্যক্রমের জন্য এই পাতকুয়ার ব্যবস্থা। শুকনো মৌসুমে কৃষকদের জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পাতকুয়া প্রকল্পের ওপরের অংশ এই ছাতায় রয়েছে সোলার প্যানেল। সোলার প্যানেল থেকে সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে যন্ত্রের মাধ্যমে সেই পানি যাচ্ছে কৃষি জমির সেচ কাজে। সোলার প্যানেলে মাধ্যমে পাম্প চলায় নেই তেল খরচ কিংবা লোডশেডিংয়ের ঝামেলা। ফলে পাতকুয়ার চারপাশে মাটিতে এখন নির্বিঘ্নে চাষাবাদ করছে কৃষকেরা। 

জানা গেছে, রাজশাহী-নওগাঁ অঞ্চলের বরেন্দ্র ভূমিতে এই প্রকল্প শুরু হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বৃহত্তর রংপুরে এই প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে রংপুর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ। রংপুর অঞ্চলে এই পাতকুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন প্রায় দেড় হাজার কৃষক। এই প্রকল্পের আওতায় রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ৫০টি পাতকুয়া বসানোর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বসানো হয়েছে ৩৩টি। একেকটি পাতকুয়া বসানোর জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ২২ লাখ টাকা। তুলনামূলক উঁচু ও শুকনো মৌসুমে কম সেচ সুবিধার এলাকায় বসানো হচ্ছে এই কুয়াগুলো।

যে সমস্ত জমিতে এসব পাতকুয়া বসানো হয়েছে, সেই জমির মালিককেই দেয়া হয়েছে দেখভালের দায়িত্ব। কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ তারাই নিচ্ছেন। এতে কর্তৃপক্ষকে আলাদা করে দিতে হচ্ছে না কোনো খরচ। যেখানে জমিতে সেচ দিতে প্রতি ঘণ্টায় খরচ হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সেখানে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পাতকুয়া প্রকল্পে খরচ পড়ছে ৫০ থেকে ১২০ টাকা। প্রতিটি কুয়া ১২০ ফিট গভীর। ৬০ থেকে ৯০ ফিটের মধ্যে বসানো আছে একটি পাম্প। বৃষ্টির পানির পাশাপাশি ভুগর্ভস্থ পানিও জমা হয় এখানে। তারপর সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে যন্ত্রের মাধ্যমে সেই পানি যাচ্ছে কৃষি জমির সেচ কাজে। শুকনো মৌসুমে যে এলাকায় স্বল্প পানির চাষাবাদ হয় সেসব এলাকার কৃষকেরা দারুণ সুবিধা পাচ্ছেন এর মাধ্যমে। এতে করে রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের মাঝেও এই পাতকুয়া প্রকল্প বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

কৃষক ও প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা বলছেন, পাতকুয়াগুলোর ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনমান পাল্টে গেছে।  সুবিধাভোগী কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, শুষ্ক মৌসুমে সেচের অভাবে আমার প্রায় পাঁচ বিঘা জমি পতিত থাকত। পাতকুয়া হওয়ার পর এর মাধ্যমে ফসলে সেচ দেওয়ায় পানির সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখন জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, লাউ, মরিচ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, টমেটো, আলু চাষের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছি।

কৃষক শমসের আলী বলেন, আগের পানির জন্য ফসলের ক্ষতি হত। সময় মতো পানি মিলত না লোডশেডিংয়ের কারণে। এখন সেই সমস্যা নেই। অল্প খরচে যখন খুশি পানি পাওয়া যাচ্ছে।

আরেক কৃষক আতাউর রহমান বলেন, কুয়াগুলো সৌরশক্তিতে চলার কারণে বিদ্যুৎ বা ডিজেল ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া ইচ্ছেমতো পানি তোলা যায়।

কৃষক জব্বার বলেন, পাতকুয়া কৃষকদের জন্য অনেক সাশ্রয়ী। ডিজেলের দাম বাড়ার কারনে সেচের খরচ বেড়েছে। আর সেচ ছাড়া কৃষি উৎপাদন অসম্ভব। পাতকুয়ায় মাত্র ১০০ টাকায় পানি দিতে পারি।
 
প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান খান জানান, ৫ বছর মেয়াদী এই প্রকল্প শেষ হবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। দুই হাজার কৃষককে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধা দিতে চায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এর ফলে উত্তরের কৃষি আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে একই সাথে লাভবান হবেন কৃষকরা।