• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

সৈয়দপুরে ইফতারে পছন্দের তালিকায় ‘নিখুদি’

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৪  

পবিত্র মাহে রমজান ঘিরে বাহারি ইফতার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে নীলফামারীর ছোট-বড় হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো। প্রতিদিন সকালে থেকে ইফতারি তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন বিক্রেতারা। দুপুর গড়াতেই জেলা শহর ছাড়াও জেলার ছয় উপজেলা শহরের অলিগলি থেকে ফুটপাত ও মোড়ে মোড়ে চেয়ার টেবিল নিয়ে সাজানো হয় বাহারি সব ইফতার সামগ্রী। ইফতারের আগমুহূর্ত পর্যন্ত চলে জমজমাট বেচাকেনা। তবে মানসম্মত ইফতার কিনতেই দুপুরের পর থেকে রীতিমতো ভিড় করছেন ক্রেতারা।

নানা পদের ইফতারের মধ্যে এ জেলার মানুষের খাবার তালিকায় মুড়ি, ভাজাপোড়া আর মুখরোচক খাবার প্রাধান্য পায় বহুকাল ধরে। তবে এ বছর থেকে রোজাদারদের খাবারের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ‘নিখুদি’। সুস্বাদু এ খাবারটি রোজার মাসেই মিলছে সৈয়দপুর পৌর শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক রোডের শাহ হোটেল নিরিবিলিতে। ইতিমধ্যে নিখুদি নজর কেড়েছে ভোজনবিলাসীদের। 

প্রতিদিনই ওই হোটেলের ইফতার সামগ্রীর তালিকায় থাকছে খাদ্যটি। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৪০০ টাকায়। নিখুদি ছাড়াও সৈয়দপুরের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বোম্বে জিলাপি, মিহি দানা, ছানা পোলাও, মালপোয়া, ফালুদা, চিকেন কাটলেট, কাবাব, চিকেন রোল, মাটন শাশলিক, হালিম, সবজিরোলসহ নানা পদের ইফতার।  

নিখুদি মূলত ছানার তৈরি মিষ্টি। ছানা মেখে লম্বা লম্বা করে পাকিয়ে রসে ভেজে চিনির সিরায় ডুবালে তৈরি হয় এ মিষ্টি। তাতে স্বাদ বাড়ানোর জন্য দেওয়া হয় বিভিন্ন উপকরণও। আকারে ল্যাংচার চেয়ে বেশ কিছুটা ছোট। অনেকটা আঙুলের মতো দেখতে এ নিখুদি ভোজনরসিকদের রসনা তৃপ্ত করে আসছে। স্বাদ ও গন্ধ বাড়াতে এতে দেওয়া হয় গোলমরিচ, এলাচ। বাইরের অংশ কিছুটা কঠিন, ভেতরটা নরম। বলা চলে নিখুঁতভাবে এটি তৈরি হয়, ভেজাল মেশালে হবে না তাই তো এর নামটাও নিখুদি। এটি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করেছে। সৈয়দপুরে এর নাম নিখুদি, অন্যান্য স্থানে নিখুঁতি, নিকুতি। কেউ বেড়াতে এলে কিনে নেন অন্য রকম দেখতে এ মিষ্টি।

ইফতার কিনতে আসা জহিরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন,  ইফতার কিনতে এসে নতুন একটি মিষ্টি দেখলাম। পরে আধা কেজি কিনে নিলাম। ইফতারে পরিবারের সবাই মিলে খাব। ভালো লাগলে পরে আরও কিনে নিয়ে যাব।

রাশেদুন্নবী জুয়েল নামে আরেক ক্রেতা বলেন, কয়েকদিন আগে এই নিখুদি কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। খু্ব ভালো লেগেছে। তাই আজকেও কিনে নিয়ে যাচ্ছি। 

সৈয়দপুরের শাহ হোটেল নিরিবিলির মালিক শাহ আরাফাত রহমান বলেন, সৈয়দপুরের মানুষ খুব খাদ্যরসিক। ঘরে বানানো ইফতারির পাশাপাশি রেস্তোরাঁগুলোয় কী পাওয়া যাচ্ছে, এর খোঁজখবর রাখেন তারা। প্রথমবারের মতো ইফতারে নিখুদি এনেছেন তারা। রোজার প্রথম দুই দিনে প্রায় তিন মণের মতো নিখুদি বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে দিনে ৫০ কেজির মতো বিক্রি হচ্ছে। 

সৈয়দপুর শহরের মদিনা মোড় এলাকার আজিমউদ্দিন সুইট মিটের মালিক রঞ্জন কুমার সরকার বললেন নিখুদি মিষ্টির আদি কথা। তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরে প্রায় ২০০ বছর আগে নিখুদি তৈরি শুরু হয়। শান্তিপুরের ময়রা ভোলানাথের কিশোরী মেয়ে ওই মিষ্টি প্রথম তৈরি করেন। কিশোরীর নাম ছিল নিখুদি, তার নামেই মিষ্টির নামকরণ করা হয়।

এই মিষ্টি বানানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে এক কারিগর বলেন, প্রথমে একটি পাত্রে দুধ নিয়ে ভালোভাবে জ্বাল করতে হবে। এরপর গুঁড়া দুধ মেশাতে হবে। ভালোভাবে মিশিয়ে নাড়তে হবে, যাতে জমে ক্ষীর হয়ে আসে। নামানোর পর ময়দা, বেকিং পাউডার, ছানা ও ঘি মিশিয়ে ভালোভাবে মেখে নিতে হবে। এরপর নিখুদি মিষ্টির আকার তৈরি করে তেলে ভেজে নিতে হবে। বাদামি রং ধারণ করলে নামাতে হবে। এরপর চিনির সিরায় ডুবিয়ে তুলতে হবে। এভাবেই হয়ে যায় নিখুদি মিষ্টি। (ঢাকা পোস্ট)