• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

‘ভুয়া প্রশ্নফাঁস রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার’

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

সারাদেশে সোমবার থেকে একযোগে শুরু হওয়া মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় ভুয়া প্রশ্নফাঁস রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। শুধু প্রশ্নফাঁস না এ বিষয়ে গুজব ছড়ালেও তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। সরকারের এই কঠোর অবস্থানের কারণে সফলতাও এসেছে। একাধিক পদক্ষেপের কারণে এবার প্রশ্নফাঁসের সামান্যতম সুযোগ না থাকায় স্বস্তিতে রয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। প্রশ্নফাঁস রোধ প্রচেষ্টাকে সবার সম্মিলিত সফলতা বলে অবহিত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।  তিনি বলেন, পাবলিক পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মানুষ প্রশ্নফাঁস রোধে কাজ করছে। এজন্যই প্রশ্নফাঁস বন্ধ করতে পেরেছি। 

মন্ত্রী বলেন, এসএসসি ও এইচএসসির মত পরীক্ষাগুলো জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয়। এসব পরীক্ষাতে উত্তীর্ণরাই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের হাল ধরবে। তাই এই পরীক্ষাগুলো সব সময় গুরুত্বের সঙ্গে আয়োজন করতে হয়। এখানে নূন্যতম অসততার সুযোগ রাখা হবে না।

এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কেউ প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ালে তাকেও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়াও ৩৫টি পরীক্ষার জন্য এবার ৫ হাজার ৫৮০ সেট প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়েছে। তারপর লটারির মাধ্যমে একটি প্রশ্ন নির্বাচন করে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। ফলে প্রশ্নফাঁসের সামান্যতম সুযোগও থাকছে না। 

এদিকে এবার প্রশ্নফাঁসের মতো ঘটনা না ঘটায় স্বস্তিতে রয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। বেশ কয়েকজন অভিভাবক ডেইলি বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নের মান নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। প্রশ্নফাঁস না হওয়ায় তাদের সন্তানরাও পরীক্ষা দিয়ে খুশি। 

জাহানারা ইকবাল নামে একজন অভিভাবক বলেন, প্রশ্নফাঁস করে পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খারাপ শিক্ষার্থীরা ভালো রেজাল্ট করে। এটা দেশের জন্য অশনিসংকেত। এই প্রবণতা থেকে যে আমরা বের হতে পেরেছি এটাই আনন্দের। আশা করি সরকার এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে। 

গত বছরের শুরুতে ভুয়া প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত অপতৎপরতায় কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো গুজব ও তৎপরতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্যদের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখে। ফলে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত কোনো প্রশ্নফাঁসের মতো ঘটনা ঘটেনি। প্রশ্নফাঁস রোধে সফলতার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার নিরাপত্তার খাম অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। যেটি নিশ্চিত করবে খামটি একেবারেই খোলা হয়নি। ফলে পরীক্ষার হল ব্যতীত প্রশ্নপত্র আর কোথাও খোলা সম্ভব নয়। 
 
তিনি আরো বলেন, অতীতে যতটা না প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি গুজব রটনার ঘটনা ঘটেছে। কাজেই প্রশ্নফাঁসকারী বা গুজব রটনাকারী পেলেই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। এরইমধ্যেই গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়ে গেছে। এবার প্রশ্নপত্র ডিজাইন, প্রশ্নপত্র বিতরণে ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহারসহ শিক্ষা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপরও নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। ফলে এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে শতভাগ সফল হয়েছে সরকার। 

এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই প্রশ্নপত্র ফাঁস নামক সামাজিক ব্যাধি শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। রক্ষা পেয়েছে আমাদের শিক্ষাখাত। তবে সমাজ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস, নকলের মতো সামাজিক ব্যাধিসমূহ পুরোপুরি নির্মূল করতে হলে সরকারের পাশাপাশি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সোচ্চার হতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো অব্যাহত রাখলে আর কেউ এমন অপতৎপরতায় জড়াতে সাহস পাবে না। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে এরইমধ্যে গ্রেফতার হচ্ছে ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যরা। চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর পরপরই ভুয়া প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের অন্তত দেড় শতাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ফেসবুক, ভাইবার, ইমো, হোয়াটস-অ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন শাখায় নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ। প্রশ্নফাঁসকারী চক্রকে ধরতে পুলিশ, সিআইডি ও র‍্যাব কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন। নজরদারিতে রয়েছে দেশের মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও। ছাপাখানা থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সবখানেই রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি। 

প্রশ্নফাঁস চক্রের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, যারা প্রশ্নফাঁস করে তারাও এক ধরনের সন্ত্রাসী। এই প্রশ্ন সন্ত্রাসীদের জঙ্গিদের মতো করেই নিশ্চিহ্ন করা হবে। 

এ ব্যাপারে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেন, দেশের প্রতিটি শিক্ষা বোর্ড প্রশ্নফাঁস রোধে সজাগ রয়েছে। আমরা এমন ভাবে কাজ করছি যেন ভবিষ্যতে আর কোনোদিন কেউ প্রশ্ন ফাঁস করার সুযোগ না পায়। এজন্য অবশ্যই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আলাদা করে ধন্যবাদ দিতে হবে। 

উল্লেখ্য, চলতি বছর ৯টি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৩৬৩ জন ছাত্র এবং ১০ লাখ ২৩ হাজার ৪১৬ জন ছাত্রী। 

এর মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৮ জন আর অনিয়মিত ৩ লাখ ৬১ হাজার ৩২৫ জন। গত বছর বিভিন্ন বিষয়ে ফেল করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দুই লাখ ৮২ হাজার ৫৯৪ জন। ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছরে পরীক্ষার্থী কমেছে ৮৭ হাজার ৫৪৪ জন।