• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

অলি-গলিতে হয়ে উঠেছে ভুয়া ডাক্তাররা বেপরোয়া 

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলিতে ভুয়া ডাক্তাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কোনো রকম ডিগ্রি বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি  ছাড়াই নিজস্ব ফার্মেসি বা চেম্বার বানিয়ে ডাক্তার সেজে প্রতিদিন রোগী দেখছেন তারা। অনুসন্ধানে এমন এক ডাক্তারের দেখা মিলেছে রাজধানীর উত্তরার উত্তরখানের চামুরখান এলাকায়।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী  জানান, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিকে দালাল হিসেবে ব্যবহার করছেন দুলাল। এসব বিক্রয় প্রতিনিধি নিজেদের ওষুধ বাজারে বেশি বিক্রির জন্য সাধারণ মানুষের কাছে কথিত ডা. দুলালের গুণকীর্তন করেন। ফলে সাধারণ মানুষ ভালোমন্দের বিচার-বিশ্লেষণ না করেই দুলালের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।

তারা আরো জানান, কথিত এই ডা. দুলাল ১৯৯৭ সালে এসএসসি পাশ করে সাভারে একটি ওষুধের দোকানে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতেন। পরবর্তীতে তার আর পড়াশোনার সুযোগ হয়নি। সেখান থেকে তিনি পোলিও টিকা দেয়ার সাত দিনের একটা কোর্স করে বিভিন্ন জায়গায় শিশুদের পোলিও খাওয়াতেন। ২০০১ সালের দিকে উত্তরায় ফিরে এসে নামের আগে ডা. ডিগ্রি ব্যবহার করে হয়ে ওঠেন ডা. দুলাল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরার উত্তরখানের চামুরখান এলাকায় নাদিম মেডিকেল সেন্টারের স্বত্বাধিকারী দুলাল দীর্ঘদিন ধরে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে তার ফার্মেসিতে চেম্বার বানিয়ে রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। চিকিৎসক না হয়েও তিনি জটিলসহ সব ধরনের রোগের চিকিৎসা করছেন।

কথিত ডা. দুলালের সব কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর এই প্রতিবেদক তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। প্রথম দিন দুপুরে বাড়ি নির্মাণ কাজে ব্যস্ত থাকায় দেখা করতে পারেননি। তার ফার্মেসিতে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, ডাক্তার সাহেব আজ দিনে আসেননি। তার বাড়ির কাজ করাচ্ছেন। বিকেলে এলে তাকে পাবেন। তিনি প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রোগী দেখেন।
পরের দিন সন্ধ্যা ৬ টার দিকে আবারো কথিত ডা. দুলালের সঙ্গে দেখা করতে যান এই প্রতিবেদক। গিয়ে একজন রোগীসহ ডাক্তারের দেখা মেলে। তিনি (ডাক্তার) একজন বয়স্ক রোগী দেখছিলেন।

তার চেম্বারে ভিজিটিং কার্ডে লেখা আছে ডা. দুলাল আহমেদ, বিআরএমএ, ওআরএমপি (ঢাকা) জেনারেল প্রাকটিশনার ও ট্রেনিংপ্রাপ্ত। মেডিসিন, সার্জারি, মা ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সাভার হাসপাতাল, ঢাকা।

আর ব্যবস্থাপত্রে লেখা আছে, পল্লী চিকিৎসক দুলাল আহমেদ, বিআরএমএ, ওআরএমপি (ঢাকা) জেনারেল প্রাকটিশনার ও ট্রেনিংপ্রাপ্ত। মেডিসিন, সার্জারি, মা ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সাভার হাসপাতাল, ঢাকা।
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে কথিত ডা. দুলাল বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি মানুষের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। কেউ কোনো দিন কিছু বলেনি, আপনার মাথা ব্যাথা কেন? 

তিনি বলেন, সাভার থেকে সাত দিনের ট্রেনিং করে তিনি ডাক্তার হয়েছেন। তার পড়ালেখা এসএসসি পর্যন্ত। তিনি প্রায় সব রোগেরই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। কোনো সিরিয়াস রোগী হলে রেফার করেন ঢাকায়।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রেশন ও ছাড়পত্র ছাড়া ডাক্তার লিখে রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়ার কোনো বিধান নেই।

এছাড়া, এমবিবিএস ও বিডিএস পাশ করা চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবেন না। তাহলে আপনি ডাক্তার পরিচয়ে রোগী দেখছেন কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার ভুল হয়েছে। আমি প্রথমে ইচ্ছাকৃত ভাবেই এটা করেছিলাম। আমি এখন বুঝতে পারছি, এটা করা ঠিক হয়নি। আমি ভবিষ্যতে আর কোনো দিন কোনো রোগী দেখবো না।