• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

সর্বশেষ:
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ই আইন হিসেবে গণ্য হবে: জনপ্রশাসনমন্ত্রী। ২৫ জুলাই পর্যন্ত এইচএসসির সব পরীক্ষা স্থগিত।

মহানন্দার দুই পাড়ে সূর্য পূজা উৎসব

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১ নভেম্বর ২০২২  

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বাংলাবান্ধা সীমান্ত নদী মহানন্দায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং আনন্দমুখর পরিবেশে ভারত-বাংলাদেশের হরিজন, রবিদাস ও রজক সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সূর্য পূজা পালিত হয়েছে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-বিএসফের জোরদার টহলের মধ্য দিয়েই উদযাপিত হয় সূর্য পূজা উৎসব।  

সোমবার (৩১ অক্টোবর) সূর্যোদয়ের সময় স্নান, পূজা-অর্চনা এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তিন দিনের পূজার আনুষ্ঠানিকতা। মনোবাসনা পূর্ণ, আপদ-বিপদ দূরীকরণ, বিভিন্ন মানত পূরণে এই তিন সম্প্রদায়ের মানুষ ছট ব্রতের মাধ্যমে সূর্য নারায়ণের পূজা করেন তারা। এ পূজায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটে।

রোববার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, সীমান্ত প্রবাহিত মহানন্দা নদীর ওপারে ভারতের ফাঁসিদেওয়া এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজারো পুণ্যার্থী তিন দিনব্যাপী সূর্য পূজা পালন করছেন। তাদের সঙ্গে এপারের বাংলাদেশের একই সম্প্রদায়ের মানুষরাও পালন করেন এ উৎসব। পূজারীরা উপবাস থেকে ফুল, প্রসাদ, বাদ্য-বাজনাসহ পূজার বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে মহানন্দা নদীতে সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্তে ডালা-কুলায় সাজানো প্রসাদ নিয়ে পূজা করছেন। মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করে দিনভর উপবাস থেকে সূর্যাস্তের সময় নারীরা নানা উপাচারে সূর্যদেবের আরাধনা করেন। এ পূজা দেখতে দুই পাড়ে হাজারো দর্শনার্থীরও সমাগম ঘটে।

রিতু, ঝিনুক, চন্দন ও সাজুর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ভোর থেকে সবাইকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাসে থাকতে হয়। পরের দিন উপবাস থাকার পাশাপাশি বিকেলে মহানন্দা নদীর তীরে গিয়ে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে সূর্যকে আহ্বান করা হয়। শেষ দিনে সূর্যোদয়ের আগে তারা দল বেঁধে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্নান, পূজা-অর্চনা, প্রার্থনা এবং সূর্য নারায়ণকে প্রণতি জানিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটান। 

ঋতু বলেন, সূর্যকে পূজা করা হয় বলে এটিকে সূর্য পূজা বলা হয়। এ পূজায় আমরা খুব আনন্দ করি। এ পূজায় তিন দিন উপবাস থাকতে হয়। এখানে ভারতের লোকজন পূজা করে, আমরাও তাদের সাথে এ উৎসবে অংশ নিয়ে আনন্দ উপভোগ করি।

চন্দন ও সুমন বলেন, প্রতিবছর আমরা এই মহানন্দার দুই পাড়ের ভারত-বাংলাদেশ মিলে এই সময়ে ছট বা সূর্য পূজা পালন করি। দুই দেশের আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজন এ উৎসব ভালোভাবে উদযাপন করে। আর এ পাড়ে ক্ষুদ্র হরিজন সম্প্রদায় থাকায় আমাদের এ উৎসবে লোকজন ভারতের মতো হয় না। তবে তাদের সাথে সীমান্তরেখা দূরত্ব মেনেই আমরা সূর্যপূজা উদযাপন করি। 

সাজু ও ঝিনুক দম্পতি জানান, এখানে ভারত-বাংলাদেশের মিলনমেলার মতোই সূর্যপূজা হচ্ছে। আমরা এখানে প্রথম এসেছি। খুব ভালো লাগছে। আগামী বছর আবারও আসবো।

চন্দন ও সাজুর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ভোর থেকে সবাইকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাসে থাকতে হয়। পরের দিন উপবাস থাকার পাশাপাশি বিকেলে মহানন্দা নদীর তীরে গিয়ে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে সূর্যকে আহ্বান করা হয়। শেষ দিনে সূর্যোদয়ের আগে তারা দলবেঁধে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্নান, পূজা-অর্চনা, প্রার্থনা এবং সূর্য নারায়ণকে প্রণতি জানিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটান। 

জানা গেছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীর হরিজন, রবিদাস ও রজক সম্প্রদায়ের মানুষগুলো ডালা-কুলা সাজিয়ে র্সূয দেবতার পূজা করেন। প্রতিবছর কালী পূজার পর শুক্ল পক্ষের ষষ্টি তিথিতে সূর্য দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে তিন বছর ধরে বাংলাবান্ধার কাশিমগঞ্জ ও ভারতের ফাঁসিদেওয়া ঘাট এলাকায় এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এপারের হরিজন (মেথর), রবিদাস (মুচি) ও রজক (ধোপা) সম্প্রদায়ের লোকজন সংখ্যালঘু। কয়েক বছর ধরে তাদের আয়-রোজগার কমে গেছে। পেশা পরিবর্তন করতে না পারায় অভাব-অনটনের মধ্যে নিজেদের সাধ্যমতো ভালো খাবারের ব্যবস্থা করে একে অন্যকে নিমন্ত্রণ করে খাইয়েছেন। নতুন জামা-কাপড় পরে পূজা উৎসবে অংশ নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন।