মার্চের মুজিব
– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২৩

রামেন্দু মজুমদার
মার্চ মাস জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যময়। ১৭ মার্চ তাঁর জন্মদিন বলে নয়, ১৯৭১-এর মার্চ বঙ্গবন্ধুর জীবনের সবচেয়ে ঘটনাবহুল এবং গৌরবের মাস। ১ মার্চ ১৯৭১ দুপুরে রেডিও পাকিস্তানের বিশেষ অনুষ্ঠানে পঠিত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের এক বিবৃতিতে ৩ মার্চ থেকে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ঘটনার এই আকস্মিকতা বদলে দেয় পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশ। সৃষ্টি হয় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির। আর এই মার্চ মাসজুড়ে বঙ্গবন্ধু অসীম সাহসিকতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে বাঙালিকে স্বাধীনতাসংগ্রামের জন্য তৈরি করেছেন। একাত্তরের মার্চের মতো কঠিন সময় বঙ্গবন্ধুর জীবনে হয়তো আর আসেনি।
জন্মদিন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আলাদা কোনো ভাবনা ছিল না। ফিরে যেতে চাই ১৭ মার্চ ১৯৬৭-তে। বঙ্গবন্ধু তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। ‘কারাগারের রোজনামচা’য় বঙ্গবন্ধু লিখছেন : “আজ আমার ৪৭তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনে ১৯২০ সালে পূর্ব বাংলার এক ছোট্ট পল্লীতে জন্মগ্রহণ করি। আমার জন্মবার্ষিকী আমি কোনো দিন নিজে পালন করি নাই—বেশি হলে আমার স্ত্রী এই দিনটাতে আমাকে ছো্ট্ট একটি উপহার দিয়ে থাকত। এই দিনটিতে আমি চেষ্টা করতাম বাড়িতে থাকতে। খবরের কাগজে দেখলাম ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগ আমার জন্মবার্ষিকী পালন করছে। বোধ হয়, আমি জেলে বন্দি আছি বলেই। ‘আমি একজন মানুষ, আর আমার আবার জন্মদিবস!’ দেখে হাসলাম। মাত্র ১৪ তারিখে রেণু ছেলেমেয়েদের নিয়ে দেখতে এসেছিল। আবার এত তাড়াতাড়ি দেখা করতে অনুমতি কি দিবে? মন বলছিল, যদি আমার ছেলেমেয়েরা ও রেণু আসত ভালই হতো। ১৫ তারিখেও রেণু এসেছিল জেলগেটে মনির সাথে দেখা করতে।” ... ...
“তখন সাড়ে চারটা বেজে গিয়েছে, বুঝলাম আজ বোধ হয় রেণু ও ছেলেমেয়েরা দেখা করার অনুমতি পায় নাই। পাঁচটাও বেজে গেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে জমাদার সাহেব বললেন, চলুন, আপনার বেগম সাহেবা আর ছেলেমেয়েরা এসেছে। তাড়াতাড়ি কাপড় পরে রওয়ানা করলাম জেলগেটের দিকে। ছোট মেয়েটা আর আড়াই বৎসরের ছেলে রাসেল ফুলের মালা হাতে করে দাঁড়াইয়া আছে। মালাটা নিয়ে রাসেলকে পরাইয়া দিলাম। সে কিছুতেই পরবে না, আমার গলায় দিয়ে দিল। ওকে নিয়ে আমি ঢুকলাম রুমে। ছেলেমেয়েদের চুমা দিলাম। দেখি সিটি আওয়ামী লীগ একটা বিরাট কেক পাঠাইয়া দিয়াছে। রাসেলকে দিয়েই কাটালাম, আমিও হাত দিলাম। জেলগেটের সকলকে কিছু কিছু দেওয়া হলো। কিছুটা আমার ভাগ্নে মনিকে পাঠাতে বলে দিলাম জেলগেট থেকে। ওর সাথে তো আমার দেখা হবে না, এক জেলে থেকেও। আর একটা কেক পাঠাইয়াছে বদরুন, কেকটার ওপর লিখেছে ‘মুজিব ভাইয়ের জন্মদিনে’। বদরুন আমার স্ত্রীর মারফতে পাঠাইয়াছে এই কেকটা। নিজে তো দেখা করতে পারল না, আর অনুমতিও পাবে না। ছয়টা বেজে গিয়াছে, তাড়াতাড়ি রেণু ও ছেলেমেয়েদের বিদায় দিতে হলো। রাসেলও বুঝতে আরম্ভ করেছে, এখন আর আমাকে নিয়ে যেতে চায় না। আমার ছোট মেয়েটা খুব ব্যথা পায় আমাকে ছেড়ে যেতে, ওর মুখ দেখে বুঝতে পারি। ব্যথা আমিও পাই, কিন্তু উপায় নাই। রেণুও বড় চাপা, মুখে কিছুই প্রকাশ করে না। ফিরে এলাম আমার আস্তানায়। ঘরে ঢুকলাম, তালা বন্ধ হয়ে গেল বাইরে থেকে। ভোর বেলা খুলবে।”
১৭ মার্চ ১৯৭১ ছিল বঙ্গবন্ধুর ৫২তম জন্মদিন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকের পর বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, ‘আমি আমার জন্মদিনের উৎসব পালন করি না। এই দুঃখিনী বাংলায় আমার জন্মদিনই বা কি আর মৃত্যুদিনই বা কি?’
বঙ্গবন্ধু কি সেদিন কল্পনা করতে পেরেছিলেন, তিনি চলে যাবার পর তাঁর এই বাংলাদেশে তাঁর জন্মদিন আর মৃত্যুদিন কত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে? প্রায় দুই বছরব্যাপী তাঁর জন্মশতবর্ষ পালন ছিল তাঁর প্রতি বাঙালির কৃতজ্ঞতার অর্ঘ্য। এ আয়োজনটা তাঁর জন্য না যতটা, আমাদের নিজেদের জন্য অনেক অনেক বেশি প্রয়োজনীয় ছিল।
যদি একাত্তরের মার্চে ফিরে যাই, তবে দেখব প্রতিদিনই তাঁকে নতুন নতুন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ২ মার্চ, ১৯৭১ ঢাকায় ১০ ঘণ্টার জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। কিন্তু জনগণ তা অগ্রাহ্য করে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার হয়। সেনাবাহিনী সান্ধ্য আইন ভঙ্গকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে এবং বহু হতাহত হয়। সংবাদপত্রে সংবাদ ও ছবি ছাপার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে নতুন সামরিক বিধি জারি করা হয়। ৩ মার্চ সারা বাংলাদেশে পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের গৃহীত কর্মসূচির সমর্থনে পল্টন ময়দানে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করে। এ জনসভা ছিল সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে জঙ্গি সমাবেশ। অসংখ্য নারী-পুরুষের হাতে বাঁশের লাঠি, লোহার রড, বল্লম, টেঁটা আর তলোয়ার ছিল। বঙ্গবন্ধু সভাস্থলে আগমন করলে জনতা লাঠির ওপর লাঠির আঘাতে এক অপূর্ব ঝনঝনায় নেতাকে স্বাগত জানায়। মঞ্চে বুলেটবিদ্ধ কর্মীদের লুঙ্গি ও জামা পতাকার মতো উড়িয়ে রাখা হয়েছে। কালো পতাকার সঙ্গে সবুজের ওপর লাল বৃত্তের মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত একটি নতুন পতাকাও ছিল। উল্লেখ্য, ছাত্রসমাজ আগে থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য বঙ্গবন্ধুকে চাপ দিচ্ছিল। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী সভায় সভাপতিত্ব করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্সে যে অভূতপূর্ব জনসমাগম হয়, তাতে বঙ্গবন্ধু মাত্র ১৮ মিনিটের যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা বোধ হয় তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণ। কোনো লিখিত নোট ছাড়া তিনি বর্তমান আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে একের পর এক বর্ণনা করে যান। তাঁর ওপর চাপ ছিল স্বাধীনতা ঘোষণার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন, এ সময়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে। কিন্তু তাঁর জাদুকরী কথামালার মধ্যে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি এমনভাবে উচ্চারণ করেছিলেন যে কেউ তাকে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবে নিতে পারবে না। আইনের দৃষ্টিতে তিনি নিরপরাধ, যখন বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
আজ বিশ্বের সেরা ভাষণগুলোর মধ্যে ৭ মার্চের ভাষণ স্থান করে নিয়েছে। ইউনেসকো ভাষণটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। আজও যখনই ভাষণটি আমরা শুনি, আমরা শিহরিত হই, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হই।
মার্চ মাসজুড়ে বঙ্গবন্ধু যে অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, তার নজির দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। সারা পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হয়েছে। ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তান বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করে, তার পরই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মার্চ মাসেই আমরা পাই বঙ্গবন্ধুর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা। তাই মার্চ মাস কেবল বঙ্গবন্ধুর জীবনে নয়, আমাদের জীবনেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গৌরবদীপ্ত।
লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, অনারারি প্রেসিডেন্ট (ওয়ার্ল্ড ওয়াইড), ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আইটিআই)
- হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
- নারীর সৌন্দর্য শাড়িতে: রংপুরে অপু বিশ্বাস
- বালিয়াডাঙ্গীতে প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার ও খাবার বিতরণ
- বিএনপি সন্ত্রাসীদের ভাষায় কথা বলছে: তথ্যমন্ত্রী
- ‘সমঝোতার অপশন টেবিল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে’
- প্রধানমন্ত্রী উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন: পলক
- সাকিবের স্ত্রী বললেন, ‘মীরজাফর এই তালিকায় ঢুকল কি করে!’
- রফতানি আয়ে সুবাতাস: সেপ্টেম্বরে এলো ৪.৩১ বিলিয়ন ডলার
- অভিনয় ছাড়তে যাচ্ছেন বলিউডের জনপ্রিয় তারকা আনুশকা!
- ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গড়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় হিন্দু সম্প্রদায়
- রাসূলুল্লাহ (সা.) যাদের জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন
- ফ্রিল্যান্সারদের বিদেশি আয়ে ১০ শতাংশ উৎসে কর প্রযোজ্য নয়: এনবিআর
- নীলফামারীতে মসজিদের ভেতরে সন্ত্রাসী হামলায় দুই মুসল্লি আহত, আটক ২
- মস্তিষ্কের বিশ্রামে যা করবেন
- অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিতে চাই: সিইসি
- কিশোরগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে জন্ম নেওয়া শিশুর মাকে উপহার
- ডোমারে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়নে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
- বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল নিয়ে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
- রাণীশংকৈল অটোরিকশার ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু, আহত ৪
- একরাতেই মেয়ে থেকে ছেলে হলো লিয়া!
- ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন পূজা
- ভারতে দূতাবাস কার্যক্রম বন্ধ করেছে আফগানিস্তান
- জানা গেল বিশ্বকাপের মাসকটের নাম
- ভালো খেলেন মেহজাবিন
- সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় কন্যা শিশুরা গুরুত্ব পাচ্ছে: ইন্দিরা
- সরকার খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক: তথ্যমন্ত্রী
- পর্যটনের বিকাশে গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখার আহ্বান
- ওজু করলে যেভাবে গুনাহ ঝরে যায়
- একদিনের সফরে রংপুরে পুলিশের এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম
- নীলফামারীতে ওয়ার্কার্স পার্টির লাল পতাকা মিছিল ও পথসভা
- আমরা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারছি: হুইপ স্বপন
- শীঘ্রই সব মিশনে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হবে
- কোরআন মুখস্থ করার সহজ ও সেরা উপায়
- স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে স্বামীর আত্মহত্যা
- ঠাকুরগাঁওয়ে ডিসেমিনেশন সেমিনার অনুষ্ঠিত
- খুব কাছের বন্ধু হিসেবে জি২০ সম্মেলনে বাংলাদেশ
- নীলফামারীতে জুয়ারি-সাজাপ্রাপ্ত আসামি-ডাকাতসহ গ্রেফতার ৩১
- প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক যাচ্ছেন আজ
- ট্রাকের ধাক্কায় ইজিবাইচালক নিহত, আহত ২
- চোটই নেইমারের বড় শত্রু
- ৭ মিনিটে পদ্মা সেতু পাড়ি দিলো ট্রেন
- কুড়িগ্রামে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যু, আহত ১
- জন্মাষ্টমী উপলক্ষে কাহারোলে "শ্রী শ্রী কান্তজিউ যুগল বিগ্রহ"
- ডেঙ্গু জ্বর: নীলফামারীতে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৩ জন শনাক্ত
- মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রধানমন্ত্রীর
- বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে বিএনপির লাভ হবে না: খাদ্যমন্ত্রী
- ‘মশারি কিনতে পারে না, এমন মানুষ আছে বলে জানা নেই’
- শেয়ার-নেট বাংলাদেশ ৮ম এসআরএইচআর নলেজ ফেয়ার অনুষ্ঠিত
- কাপড়ের রং ব্যবহার, চানাচুর ফ্যাক্টরিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা
- মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় নামছে এমআরটি পুলিশ