• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ইন্টারনেটে মিথ্যা ছড়ানো গুরুতর অপরাধ

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২১  

এখন ইন্টারনেটের যুগ, কিশোর থেকে বৃদ্ধ সবাই এখন ইন্টারনেটে ভীষণ তৎপর। ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের খবর জানা যায় মুহূর্তেই। প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় যে কেউ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের ঘটনাকে মুহূর্তে ছড়িয়ে দিতে পারে বিশ্বব্যাপী। ফলে অনেক খবর মিডিয়ায় আসার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।

কিন্তু কিছু লোক প্রযুক্তির অপব্যবহারও করে। বিভিন্ন সাম্প্রতিক ইস্যুকে সামনে রেখে সেখানে কিছু অবান্তর তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। প্রযুক্তিগত কারসাজির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক ছবি, অডিও, ভিডিও তৈরি করে। অনেক ক্ষেত্রেই সেই অডিও, ভিডিও ইত্যাদির কোনো সত্যতা পাওয়া যায় না।

আর এ ধরনের প্রতারণায় তারা লিপ্ত হয় সামান্য কিছু অর্থ উপার্জনের জন্য। কেউ কেউ অবশ্য রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্যও দেশ-বিদেশ থেকে বসে বসে বিভিন্ন ফেক ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। যেগুলো দেখে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তির গোলক ধাঁধায় পড়ে যায়।

এভাবে মিথ্যা রটানো মুমিনের কাজ নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে ঈমান আনে না, তারাই তো শুধু মিথ্যা রটনা করে, আর তারাই মিথ্যাবাদী। (সুরা নাহাল, আয়াত : ১০৫)

তাই ইন্টারনেটে যেকোনো খবর প্রচার করার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা উচিত। কারণ আপনার একটি পোস্ট কোনো ক্ষেত্রে অনেক বড় বিপদের কারণ হতে পারে। শুধু ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা ও প্রাণহানির ঘটনা এ দেশে নতুন নয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের সর্বদা সত্য ও সঠিক কথা বলার তাগিদ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৭০)

সত্য কখনো কখনো তিক্ত হবে। তার পরও সত্য বলে যেতে হবে। নিজেদের হীনস্বার্থে কখনো সত্যের কবর রচনা করা যাবে না। হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে মহানবী (সা.) তাঁকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘তুমি তিক্ত হলেও সত্য বলো।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৫/১৫৯; সহিহুল জামে’, হাদিস নম্বর : ৩৭৬৯)

ওপরের হাদিসে সদা সত্য বলতে ও সত্যের পক্ষে থাকার নির্দেশ দেওয়ার কারণ হলো, সত্য মানুষকে জান্নাতের পথ দেখায়। মুক্তির পথ দেখায়। সত্য কল্যাণ বয়ে আনে, আর মিথ্যা বয়ে আনে অশান্তি ও ধ্বংস। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা অবশ্যই সত্যের পথ অবলম্বন করবে। কেননা, সততাই মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়। আর কল্যাণ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। কোনো মানুষ প্রতিনিয়ত সত্য কথা বলতে থাকলে এবং সত্যের প্রতি মনোযোগী থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ তাআলার দরবারে পরম সত্যবাদী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। তোমরা মিথ্যাকে অবশ্যই পরিহার করবে। কেননা, মিথ্যা (মানুষকে) পাপের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের পথে নিয়ে যায়। কোনো বান্দা প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যার প্রতি ঝুঁকে থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ তাআলার দরবারে চরম মিথ্যাবাদী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭১)

বর্তমানে নিউজ পোর্টাল, ইউটিউব চ্যানেল খোলা অনেক সহজ হওয়ায় অনেকেই বিভিন্ন নামে পত্রিকা খোলেন, ইউটিউবে বিভিন্ন চ্যানেল খোলেন। সেখানে তাদের খবর ও ভিডিওগুলোকে ভাইরাল করার জন্য বিভিন্ন ছলচাতুরির আশ্রয় নেন। চটকদার শিরোনাম দেন। অনেক ক্ষেত্রে শিরোনামের সঙ্গে নিউজের কোনো মিল পাওয়া যায় না। এ ধরনের কাজ ইসলাম সমর্থন করে না। সত্য যখন হারিয়ে যায়, সুস্থ বোধ যখন বিনষ্ট হয়ে যায়, মানুষ তখন ধোঁকা, প্রতারণা ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিতে থাকে। সত্যবিমুখ এমন মানুষের জন্য মহানবী (সা.) এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে এরা মুসলমানদের দলভুক্ত নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০২)

তা ছাড়া ভাইরাল হওয়ার জন্য এ ধরনের প্রতারণা কপট লোকদের অভ্যাস। কোরআন ও হাদিসে এদের মুনাফিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ৩৪, মুসলিম, হাদিস : ৫৮)

মহান আল্লাহ সবাইকে সুবুদ্ধি দান করুন।