• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

অনাড়ম্বর বিয়ের আভিজাত্য

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০২১  

সায়িদ বিন আল মুসায়্যিব (রহ.)-কে বলা হয় তাবেয়িদের সর্দার। তিনি সরাসরি সাহাবিদের থেকে হাদিস, তাফসির, ফিকহের জ্ঞান অর্জন করেন। তাকওয়া, ইবাদত, দুনিয়াবিমুখতাসহ একজন আলেমের সব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন তিনি। ১৫ হিজরিতে ওমর (রা.)-এর খিলাফতকালে মদিনায় কুরাইশ বংশের মাখজুম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মদিনার বিখ্যাত সাতজন ফকিহের অন্যতম। যেকোনো বিষয়ে তার মতামত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হতো। সায়িদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.) বলেছেন, “আমি এ পর্যন্ত ৪০ বার হজ করেছি। গত ৫০ বছরে আমার কখনো নামাজের ‘তাকবিরে উলা’ ছুটে যায়নি।”

ইবনে আবি ওয়াদায়াহ (রহ.) বর্ণনা করেন, আমি নিয়মিত সায়িদ বিন মুসায়্যিব (রহ.)-এর মজলিসে বসতাম। কয়েক দিন তাঁর দরসে আমি অনুপস্থিত থাকি। এরপর এলে তিনি বললেন, কোথায় ছিলে? আমি বললাম, আমার স্ত্রী মারা গেছেন। তাই ব্যস্ত ছিলাম। তিনি বললেন, আমাদের জানাতে। তাহলে জানাজায় আমরাও উপস্থিত হতাম। উঠে যাওয়ার সময় তিনি বললেন, আর কাউকে বিয়ে করেছ? আমি বললাম, আল্লাহ আপনাকে রহম করুন, আমাকে কে মেয়ে বিয়ে দেবে? আমার কাছে তো দুই-তিন দিরহাম ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি বললেন, আমি দিলে তুমি কি করবে? আমি বললাম, অবশ্যই করব। অতঃপর তিনি হামদ ও দরুদ পাঠ করে দুই বা তিন দিরহামের বিনিময়ে বিয়ে দিলেন। এদিকে আনন্দে আত্মহারা হয়ে আমি বাড়ি ফিরে যাই। কার কাছ থেকে ঋণ করা যায় তা নিয়ে ভাবতে থাকি। মাগরিবের নামাজ পড়ি। আমি রোজাদার ছিলাম। রুটি ও তেল দিয়ে ইফতার করি। এমন সময় দরজায় টোকা পড়ে। কে জিজ্ঞাসা করতেই উত্তর আসে, সায়িদ। এদিকে আমি সায়িদ ইবনুল মুসায়্যিব ছাড়া পরিচিত সায়িদ নামের সব ব্যক্তির কথা ভাবলাম। কেননা গত ৪০ বছরে বাড়ি ও মসজিদ ছাড়া তাকে আর কোথাও দেখা যায়নি।

অনেক ভেবে দরজা খুলে দেখি, সায়িদ ইবনুল মুসায়্যিব দাঁড়ানো। আমি ভাবলাম, হয়তো তিনি আগের মত ফিরিয়ে নিতে এসেছেন। আমি তাঁকে বললাম, হে আবু মুহাম্মদ, আপনি কাউকে পাঠালেই তো আমি আপনার কাছে আসতাম। তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমার কাছে আসাই অধিক উপযুক্ত।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এখন তাহলে আমাকে কী নির্দেশ দিচ্ছেন? তিনি বললেন, তুমি তো পরিবারহীন। সদ্য বিয়ে করেছ। নিঃসঙ্গ রাত কাটাবে। তাই তোমার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি। সমান উঁচু হওয়ায় সে পিতার পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিল। অতঃপর তিনি মেয়ে দরজার ভেতর রেখে দরজা ঠেলে দেন। এদিকে লজ্জায় মেয়ে পরে যায়। আমি দরজা লাগিয়ে দিই। এরপর ছাদে উঠে প্রতিবেশীদের ডাক দিই। সবাই এসে জিজ্ঞাসা করল, তোমার কী হয়েছে? আমি বললাম, সায়িদ ইবনুল মুসায়্যিব আমার সঙ্গে তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এমনকি তিনি না জানিয়ে তাঁর মেয়েকে রেখে গেছেন। সে এখন আমার ঘরে আছে। সবাই মেয়ের কাছে যায়। আর আমার মায়ের কাছে খবর পৌঁছলে তিনিও আসেন। মা বললেন, মেয়েকে তিন দিন পর্যন্ত সাজসজ্জা করাব। এর মধ্যে তাকে স্পর্শ করলে তোমার সঙ্গে কখনো দেখা করব না।

আমি তিন দিন অপেক্ষা করে স্ত্রীর কাছে যাই। সে ছিল সবচেয়ে সুন্দরী, রূপবতী, পবিত্র কোরআনের দক্ষ হাফেজ, রাসুল (সা.)-এর হাদিস সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী ও স্বামীর অধিকার বিষয়ে খুবই সচেতন। দীর্ঘ এক মাস পর আমি সায়িদ ইবনুল মুসায়্যিবের দরসে উপস্থিত হই। তখন তিনি দরস দিচ্ছিলেন। সালাম দিলে উত্তর দিলেন। কোনো কথা বললেন না। একদম সবাই চলে গেলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ওই মানুষের কী খবর? আমি বললাম, বন্ধু যেমন কল্যাণ চায় ও শত্রু যেমন মন্দ চায় সে তেমনি আছে। তিনি বললেন, তুমি কোনো কষ্ট পেলে লাঠি তো আছে। অতঃপর আমি বাড়ি ফিরে যাই। (এক বর্ণনায় আছে) তিনি আমার কাছে ২০ হাজার দিরহাম পাঠিয়ে দেন।