• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

অনর্থক কথা থেকে বাঁচার উপায়

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২২  

মহানবী হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিটি কথাই মানবজাতির জন্য কল্যাণময়। আজ মানুষ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথা অমান্য করার কারণে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চুপ থাকা একটি পরিশ্রমবিহীন ইবাদত। তিনি এক হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি চুপ থাকে, সে নাজাত পায়।’ –তিরমিজি : ২৫০১

এক. কথা সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করা: 

لَقَدْ رَأَيْتُ - أَوْ : أُمِرْتُ  أَنْ أَتَجَوَّزَ فِي الْقَوْلِ ؛ فَإِنَّ الْجَوَازَ هُوَ خَيْرٌ

আমর ইবনুল ‘আস (রা.) থেকে বর্ণিত: আমর ইবনুল ‘আস (রা.) একদিন বলেন, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সুদীর্ঘ বক্তৃতা দিল। ‘আমর (রা.) বললেন, যদি সে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতো তবে তার জন্য ভালো হতো। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: আমার নিকট উপযুক্ত মনে হয়েছে অথবা আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে ভাষণ সংক্ষিপ্ত করতে। কেননা সংক্ষিপ্ত আলোচনা উত্তম। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫০০৮

দুই. অনর্থক বিষয় থেকে বেচে থাকাই ইসলামের সৌন্দর্য: 

 قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِنَّ مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكَهُ مَا لاَ يَعْنِيهِ ‏"‏ ‏
 
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অর্থহীন কথা বা কাজ ত্যাগ করা। জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৩১৮

তিন. অনর্থক বিষয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদমই পছন্দ করতেন না। 

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكْثِرُ الذِّكْرَ، وَيُقِلُّ اللَّغْوَ، وَيُطِيلُ الصَّلَاةَ، وَيُقَصِّرُ االْخُطْبَة

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আবূ আউফা (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিকির অত্যধিক পরিমাণে করতেন এবং অনর্থক কাজ একেবারেই করতেন না আর সালাত দীর্ঘ করতেন, ও খুতবা সংক্ষেপ করতেন। সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১৪১৪

চার. বাকপটুতার চিন্তা বাদ দিতে হবে: 

 اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُبْغِضُ الْبَلِيغَ مِنَ الرِّجَالِ الَّذِي يَتَخَلَّلُ بِلِسَانِهِ تَخَلُّلَ الْبَاقِرَةِ بِلِسَانِهَا ‏"‏

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সেসব লোককে ঘৃণা করে যারা বাকপটুত্ব প্রদর্শনের জন্য জিহবাকে দাঁতের সঙ্গে লাগিয়ে বিকট শব্দ করে, গরু তার জিহবা নেড়ে যেমন করে থাকে। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫০০৫

পাচ. মিথ্যা বলে হাসানোর ভুল চিন্তা বাদ দিতে হবে:

 ‏ "‏ وَيْلٌ لِلَّذِي يُحَدِّثُ بِالْحَدِيثِ لِيُضْحِكَ بِهِ الْقَوْمَ فَيَكْذِبُ وَيْلٌ لَهُ وَيْلٌ لَهُ ‏"‏

বাহ্‌য ইবনু হাকীম (রাহঃ) থেকে বর্ণিত: তার দাদা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি : সেই লোক ধ্বংস হোক যে মানুষদের হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সে নিপাত যাক, সে নিপাত যাক। জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৩১৫

ছয়. কথা যতটুকু বলব ভালো কথা বলব না পারলে চুপ থাকব: 

 وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ ‏"‏‏
 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে লোক আল্লাহ্‌ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা চুপ থাকে। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬০১৮

সাত. চুপ থাকার উপকারিতা মাথায় রাখতে হবে:
 
 قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ صَمَتَ نَجَا ‏"‏ 

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে লোক নীরব থাকলো, সে নাজাত (মুক্তি) পেলো।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৫০১

আট. কথা বলার আগে ভেবেচিন্তে কথা বলা:
 
 إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يَتَبَيَّنُ فِيهَا يَزِلُّ بِهَا فِي النَّارِ أَبْعَدَ مِمَّا بَيْنَ الْمَشْرِقِ

আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয় বান্দা পরিণাম চিন্তা ব্যতিরেকেই এমন কথা বলে যে কথার কারণে সে ঢুকে যাবে জাহান্নামের এমন গভীরে যার দূরত্ব পূর্ব (পশ্চিম) এর দূরত্বের চেয়েও বেশী। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৪৭৭

নয়. মুখের কারণে বেশিরভাগ মানুষ জাহান্নামি হবে এই ধমকি সর্বদা মাথায় রাখা:
 
وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ - أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ - إِلَّا حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ 

মু‘আয ইবনু জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত:

মানুষকে শুধুমাত্র জিহ্বার উপার্জনের কারণেই অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৬১৬

দশ. কথা বলার আগে এই দূআটা করা: 
 
قُلِ : اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي، وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي، وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي، وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي، وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّي 

আবূ আহমাদ শাকাল ইবনু হুমাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে একটি দু’আ শিক্ষা দিন। তিনি বললেনঃ তুমি বলোঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কানের অশ্লীল শ্রবণ, চোখের কুদৃষ্টি, জিহবার কুবাক্য, অন্তরের কপটতা ও কামনার অনিষ্টতা হতে আশ্রয় চাই। ” সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৫৫১

আল্লাহ আমাদেরকে জবানের অপব্যবহার থেকে হেফাজত করেন।