• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

‘এপ্রিল ফুল’ উদযাপনে যে তিন কবিরা গুনাহ সংঘটিত হয়

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১ এপ্রিল ২০২৩  

বিশ্বব্যাপী ইংরেজি বছরের ০১ এপ্রিল ‘মানুষকে বোকা বানানোর দিন’ হিসেবে ‘এপ্রিল ফুল’ পালন করা হয়। এদিন একে অন্যকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে মজা করে। প্রতারণা ছাড়া এই দিবসটি উদযাপন করার সুযোগ নেই। তাই ইসলামে এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

ইসলামের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে দিনটি। এদিনে স্পেনের রানি ইসাবেলা ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে হাজার হাজার মুসলমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর এ ‘এপ্রিল ফুল’ উদযাপনে তিনটি কবিরা গুনাহ সংঘটিত হয়। যে গুনাহগুলো এপ্রিল ফুল উদযাপনের মূল উপকরণ। যেমন-

(১) মিথ্যা কথা বলা: মিথ্যা ছাড়া কোনোভাবেই এপ্রিল ফুল উদযাপন সম্ভব নয়। এ মিথ্যা হলো সব পাপের জননী। মিথ্যা শুধু ইসলামেই ঘৃণিত অপরাধ নয় বরং দুনিয়ার সব ধর্ম এবং সব সভ্যতায় এটি ঘৃণিত ও জঘন্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনে মিথ্যুকের ওপর লানত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- ‘অতঃপর আমরা সবাই (আল্লাহর কাছে) এ মর্মে প্রার্থনা করি যে, মিথ্যুকদের ওপর আল্লাহর লানত পতিত হোক।’ (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ৬১)

হাদিসে এসেছে- ‘মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, আর পাপ তাকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। মানুষ মিথ্যা বলতে বলতে আল্লাহর কাছে ‘মহামিথ্যুক’ বলে গণ্য হয়।’ (বুখারি: ৬০৯৪)

কেউ হয়ত বলবেন, আমরা সত্যিকারভাবে ‘মিথ্যা’ বলি না বরং মজা করার জন্য এপ্রিল ফুলে ‘মিথ্যা বক্তব্য’ পেশ করি। এ প্রসঙ্গেও বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-  ‘সেই লোক ধ্বংস হোক! যে মানুষকে হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সেই লোক নিপাত যাক, সেই লোক নিপাত যাক!’ (তিরমিজি: ২৩১৫)

সুতরাং হাদিসে এ কথা প্রমাণিত যে, ইসলাম কোনোভাবেই মিথ্যা কথা সমর্থন করে না। হোক তা ইচ্ছাকৃত কিংবা দুষ্টুমির ছলে।

(২) ধোঁকা বা প্রতারণা:  এপ্রিল ফুল পালনে একজন অন্যজনের সঙ্গে মিথ্যার সঙ্গে ধোঁকা বা প্রতারণামূলক কাজ করতে হয়, যা ইসলামে চরমভাবে ঘৃণিত ও দোষণীয় কাজ। প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম: ১০২)

মানব জাতির সঙ্গে প্রথম প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল ইবলিস শয়তান। শয়তান আদম ও হাওয়াকে (আ.) প্ররোচনা, ধোঁকা ও প্রলোভন দেখিয়ে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। কোরআনে বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে এভাবে- ‘অতঃপর শয়তান উভয়কে প্ররোচিত করল, যাতে তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের কাছে গোপন ছিল, তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়ে। সে বলল, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করেছেন এ কারণে যে, তোমরা না আবার ফেরেশতা হয়ে যাও-কিংবা হয়ে যাও চিরঞ্জীব বা অমর। সে তাদের কাছে কসম খেয়ে বলল, আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী।’ (সূরা: আরাফ, আয়াত: ২০-২১)

(৩) বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ: বিজাতীয় সংস্কৃতি অনুসরণ ও অনুকরণ ইসলামে মারাত্মক অপরাধ। তা যদি হয় এপ্রিল ফুলের মতো মিথ্যা, ধোঁকা বা প্রতারণা, তবে সেই উৎসব পালন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। হাদিসে এসেছে- ‘সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়, যে আমাদেরকে ছেড়ে অন্য কারো সাদৃশ্য অবলম্বন করে। তোমরা ইহুদিদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না, আর খ্রিষ্টানদেরও না।’ (তিরমিজি, সহিহুল জামে: ২৬৯৫)

অতএব, আসুন আমরা এদিনে কারো সঙ্গে তাল মিলিয়ে মিথ্যা-খেলায় অংশ নেবো না। তথ্য-প্রমাণ ছাড়া কোনো কিছুর প্রচারে জড়াবো না। এই বিষয়েও হাদিসে নির্দেশনা আছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (যাচাই না করে) তা বলে বেড়ায়।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯২)

সুতরাং বিজাতীয় গুনাহের সংস্কৃতি ‘এপ্রিল ফুল’ প্রত্যাখ্যান করা এবং এপ্রিল ফুলকে না বলা মুমিন মুসলমানের জন্য ঈমানের একান্ত দাবি।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে বিজাতীয় ঘৃণ্য মিথ্যা ও ধোঁকার সংস্কৃতি এপ্রিল ফুল থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।