• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

সহজে সচ্ছলতা লাভের ১০ আমল

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলমানের প্রাত্যহিক জীবনের জন্য কিছু আমলের নির্দেশ দিয়েছেন, যেন আমলগুলোর সুষ্ঠু অনুসরণের ফলে তার বান্দার সহজে সচ্ছলতা লাভ করতে পারে।

আসুন জেনে নিই সহজে সচ্ছলতা লাভের ১০ আমল সম্পর্কে।

(১) তওবা-ইস্তেগফার: আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা লাভের অন্যতম মাধ্যম হলো তওবা-ইস্তেগফার ও ক্ষমা প্রার্থনা করা।

নূহ (আ.) স্বীয় কওমকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।

তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বৃদ্ধি করে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন। (সূরা: নূহ, আয়াত: ১০-১২)

আয়াতটিতে আল্লাহ পরিষ্কার বলেছেন, তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে তিনি ধন-সম্পদ বাড়িয়ে দেবেন। সুতরাং জীবিকার সচ্ছলতা প্রত্যাশীদের জন্য অধিক পরিমাণে তওবা ও ইস্তেগফার করতে থাকা উচিত।

(২) তাকওয়া ও খোদাভীতি: তাকওয়া ও খোদাভীতি যে জীবিকা লাভের অন্যতম একটি উপায়, এ প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ বের করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন। (সূরা: তালাক, অয়াত: ২-৩)

হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.) উপরোক্ত আয়াত ২টির তাফসির প্রসঙ্গে বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের নির্দেশাবলী পালন করে এবং তার নিষিদ্ধ কার্যাবলী হতে বিরত থেকে তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ পাক তার জন্য সব বিপদাপদ হতে মুক্ত হওয়ার পথ করে দেবেন, যেখান থেকে রিজিক লাভ করার কথা সে স্বপ্নেও চিন্তা করে না। (তাফসিরে ইবনে কাসির ৪/৪০০)

(৩) আল্লাহর ওপর ভরসা: যেসব উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে জীবিকায় সচ্ছলতা লাভ করা যায়, তন্মধ্যে অন্যতম হলো, মহান আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাকের ওপর যেমন ভরসা করা উচিত তোমরা যদি তার ওপর তেমন ভরসা কর, তাহলে পাখিদেরকে যেভাবে রিজিক প্রদান করা হয়, অর্থাৎ সকালে তারা শূন্য উদরে বেরিয়ে যায় আর সন্ধ্যায় পূর্ণ উদরে ফিরে আসে, তোমাদেরকেও ঠিক এভাবে রিজিক প্রদান করা হবে। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ২৩৪৪)

তবে তাওয়াক্কুল অর্থ জীবিকা লাভের জন্য চেষ্টা-পরিশ্রম ত্যাগ করে হাতগুঁটিয়ে বসে থাকা নয়। বরং যথারীতি মেহনতের পাশাপাশি ভরসা রাখতে হবে মহান আল্লাহর ওপর। আর এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, সমস্ত কিছু তার হাতেই নিয়ন্ত্রিত এবং রিজিকের ব্যবস্থা একমাত্র তিনিই করে থাকেন।

(৪) ইবাদতের জন্য ফারেগ হওয়া: অর্থাৎ স্বীয় রবের ইবাদতের জন্য হৃদয়কে পরিপূর্ণ একাগ্র করার ক্ষেত্রে অধিক যত্নবান হওয়ার দ্বারাও স্বচ্ছলতা লাভ হয়। 

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) একটি হাদিসে কুদসিতে বলেন, আল্লাহ পাক বলেছেন, হে বনি আদম! তুমি আমার ইবাদতের জন্য নিজেকে ফারেগ কর। (তাহলে) আমি তোমার সিনাকে সম্পদশালী করে দেব এবং তোমার দরিদ্রতাকে দূর করে দেব। আর যদি তা না কর তাহলে তোমার হাত (অর্থহীন) কাজে ব্যস্ত করে দেব আর লোকের কাছে তোমাকে মুখাপেক্ষী করে রাখব। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ২৪৬৬)

(৫) ধারাবাহিকভাবে হজ ও ওমরা পালন: অর্থাৎ হজ সম্পাদনের পর ওমরার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং ওমরা শেষ হলে পুনরায় হজের জন্য প্রস্তুত হতে থাকা রিজিক লাভের উপায়।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, হজ ও ওমরা একের পর এক আদায় কর। কারণ, এ ২টি দরিদ্রতা ও গুনাহকে এমনভাবে দূর করে দেয় যেমন হাপর (অগ্নি) লৌহ ও স্বর্ণ-রৌপ্যের ময়লা দূর করে দেয়। আর হজ্জে মাবরুর-এর প্রতিদান শুধুই জান্নাত। (জামে তিরমিজি: ৮১০) অতএব নিজেদের গুনাহের বোঝা এবং অভাব ও দরিদ্রতা থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে সামর্থ্য অনুযায়ী নিয়মিত হজ ও ওমরা পালন করতে হবে।

(৬) আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা: জীবিকায় স্বচ্ছলতা লাভের আরেকটি উপায় হল আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা।

আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রিজিকের স্বচ্ছলতা ও দীর্ঘজীবন পছন্দ করে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চলে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৮৫) তাই সাধ্যমত আত্মীয়দের উপকার করা এবং যথাসাধ্য অনিষ্ঠ হতে তাদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করা।

(৭) আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা: জীবিকায় স্বচ্ছলতা লাভের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে, তাকে পারলৌকিক প্রতিদানের পাশাপাশি দুনিয়াতেও প্রতিদান দেওয়া হবে। মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, তিনি তার বিনিময় দেন। (সূরা: সাবা, আয়াত: ৩৯)

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) একটি হাদিসে কুদসিতে বলেন, হে আদম সন্তান! তোমরা ব্যয় কর, আমি তোমাদের জন্য ব্যয় করব। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৩)

আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়কারীদের জন্য স্বচ্ছলতার এর চেয়ে পোক্ত প্রতিশ্রুতি এবং রিজিক লাভ করার এর চেয়ে সহজ ও নিশ্চিত মাধ্যম আর কি হতে পারে!

(৮) দ্বীনের শিক্ষার্থীদের পেছনে ব্যয় করা: জীবিকায় স্বচ্ছলতা লাভের আরেকটি উপায় হলো দ্বীনের শিক্ষার্থীদের পেছনে ব্যয় করা।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) এর জমানার ২ ভাইয়ের ঘটনা। তাদের একজন নবী কারিম (সা.) এর খেদমতে ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করার জন্য আসত এবং অপরজন জীবিকা-অর্জনের চেষ্টায় লিপ্ত থাকত। যে ভাই জীবিকা অর্জনের জন্য মেহনত করত, একদিন সে নবী করিম (সা.) এর নিকট এসে নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। জবাবে নবী করিম (সা.) বললেন, ‘হতে পারে তোমাকে তার অসিলাতেই রিজিক প্রদান করা হচ্ছে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৫)

তাই পর্যাপ্ত রিজিক লাভে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনকারী ছাত্রদের পেছনে নিজের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করা উচিত।

(৯) দুর্বল ও অসহায়দের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করা: দুর্বল, অসহায় ও নিরাশ্রয় ব্যক্তিদের প্রতি অনুকম্পা ও দয়া প্রদর্শন করাও স্বচ্ছলতা লাভের অন্যতম মাধ্যম।

আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমাদের দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তিদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার মাধ্যমে আমার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা কর। কারণ, তাদের কারণেই তোমরা রিজিক লাভ করে থাক এবং সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে থাক। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৫৯৪)

তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রদত্ত রিজিকের দরজা অবারিত করতে চাইলে দুর্বল, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের প্রতি ইহসান ও দয়া-দাক্ষিণ্য করে যেতে হবে।

(১০) আল্লাহ রাস্তায় হিজরত করা: স্বচ্ছলতা লাভের আরেকটি উপায় হলো আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা।

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, যে কেউ আল্লাহর পথে দেশত্যাগ করে, সে এর বিনিময়ে অনেক স্থান ও স্বচ্ছলতা প্রাপ্ত হবে। (সূরা: নিসা, আয়াত: ১০০) 

ইমাম রাজি (রহ.) বলেন, আল্লাহর জন্য নিজ দেশ ত্যাগ করে অন্য কোনো দেশে গমনকারী ব্যক্তি তার নতুন নিবাস-নগরে প্রভুত কল্যাণ ও নিয়ামত লাভ করবে।

বুঝা গেল আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা স্বচ্ছল জীবিকা লাভের পক্ষে সহায়ক। এটা আল্লাহ পাকের ওয়াদা। আর আল্লাহর ওয়াদা সত্য ও সুনিশ্চিত।

ইয়া আল্লাহ! আমাদের সবাইকে আপনার আদেশ ও নিষেধ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।