চাটুকারিতা নিয়ে ইসলাম কি বলে?

ক্ষমতা ও সম্পদের লোভে একে অপরের প্রশংসা করে। ভুল সিদ্ধান্তকে ঠিক বলে সহমত জ্ঞাপন করে। এতে সমাজে অন্যায় ও অনাচার বৃদ্ধি পায়।

পবিত্র কোরআনে চাটুকারদের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘জাগতিক জীবনে একদল মানুষের কথা আপনাকে মুগ্ধ করবে এবং অন্তরের কথার ব্যাপারে তারা আল্লাহকে সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করে। প্রকৃতপক্ষে সে হচ্ছে ভীষণ ঝগড়াটে ব্যক্তি।’ (সুরা বাকারা ২০৪)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, উম্মতের ব্যাপারে আমার যে বিষয়গুলোতে ভয় হয়, তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাক্পটু মুনাফিক। (মুসনাদে আহমদ ১/২২)

হজরত আবু মামার (রহ.) থেকে বর্ণিত, কোনো একদিন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে কোনো এক প্রশাসকের সামনেই তার প্রশংসা করতে শুরু করে। এতে মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা.) তার মুখমণ্ডলে ধুলাবালি নিক্ষেপ করতে থাকেন এবং বলেন, ‘রাসুল (সা.) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন চাটুকারের মুখে ধুলাবালি নিক্ষেপ করি।’ (তিরমিজি ২৩৯৩)

সাহাবায়ে কেরামের মতো বিনম্র মানুষরা মিথ্যা প্রশংসাকারীর সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করার কারণ হলো, মহান আল্লাহ ও তার রসুল সাহাবায়ে কেরামকে সর্বদা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকতে বলেছেন। আর মিথ্যুক, ষড়যন্ত্রকারী থেকে দূরে থাকতে বলেছেন।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থেকো।’ (সুরা তওবা ১১৯)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মিথ্যুকদের বর্জন করতে বলেছেন এই জন্য যে মিথ্যাবাদীদের চাটুকারিতা মানুষের মধ্যে আত্মম্ভরিতা সৃষ্টি করে। আত্মম্ভরিতার কারণে নিজের যোগ্যতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে মানুষ ভুল ধারণার শিকার হয়। এই অপগুণ অন্যকে অবজ্ঞা করতে শেখায়। মানুষ তার স্বাভাবিক বোধশক্তি হারিয়ে ফেলে এবং আত্মপ্রবঞ্চনার শিকার হয়।

যে মানুষের মধ্যে আত্মম্ভরিতা থাকে সে নিজের ভুলত্রুটি সম্পর্কে সচেতন হতে পারে না। এই অপগুণ সত্যানুসন্ধান থেকে মানুষকে বিরত রাখে। আত্মম্ভরিতা যাদের মধ্যে বাসা বাধে তারা কোনো সমালোচনাকে সহজে গ্রহণ করে না। চাটুকারদের মিথ্যা কথনে তারা প্রলুব্ধ হয়। চাটুকারদের কথায় প্রভাবিত হয়ে তারা নিরপরাধ মানুষদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। অনেক সময় নিরপরাধ মানুষদের ক্ষতিও করে বসে। চাটুকারদের কারণে পরিবারে, অফিসে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও দেশে নানা অরাজকতার সৃষ্টি হয়।

রাসুল (সা.) চাটুকারদের ধ্বংস কামনা করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অতিরিক্ত চাটুকাররা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। তিনি এ কথাটি তিনবার বলেছেন। (মুসলিম ৬৬৭৭)