• শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৮ ১৪৩১

  • || ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রবিউল আওয়ালের ফজিলত ও আমল

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

আরবি হিজরি সন বা ইসলামি বর্ষপঞ্জির ৩য় মাস হলো রবিউল আউয়াল। এটি অন্যান্য মাস থেকে বেশি গুরুত্ব বহন করে। বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মাসেই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এই মাসেই ইন্তেকাল করেন।

এ কারণে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কাছে এই রবিউল আওয়াল মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। নবিজি (সা.) জন্মগ্রহণের কারণে যেমন এই মাসের ফজিলত বেড়েছে, ঠিক তেমনি ফজিলত বেড়েছে সোমবার দিনেরও।

হাদিস শরীফে এসেছে, আবূ কাতাদা আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘সোমবারের রোজা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি, আর এই দিনেই আমাকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে (কিংবা তিনি বলেছেন) এই দিনেই আমার উপর (প্রথম) ওহী নাজিল করা হয়েছে’। (মুসলিম: ১১৬২, আবু দাউদ: ২৪২৬)

এই মাসের আগমনে মুমিনদের অন্তরে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা তাজা হয়। তাই রবিউল আওয়াল মাসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বিভিন্ন আয়োজন। আল্লাহর বড় ধরনের কোনো নেয়ামতের স্মরণে আনন্দ প্রকাশ খারাপ জিনিস নয়। তবে এগুলো শরিয়তের গণ্ডির ভেতরে হওয়া আবশ্যক।

বর্তমানে একশ্রেণির মানুষ এই মাসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রথা, রীতি-নীতি ও শরিয়ত পরিপন্থী কর্ম-কাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বীনের নামে বিদআতে লিপ্ত হচ্ছে। ইসলাম এসব কতটুকু সমর্থন করে সেদিকে তাদের বিন্দুমাত্রও ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ রবিউল আওয়াল মাসকে কেন্দ্র করে বর্তমানে যে আচার অনুষ্ঠান মেতে ওঠেন অনেকে ইসলামি শরিয়তে এসবের কোনো প্রমাণ নেই।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমাদের শরিয়তে নেই এমন বিষয় যারা আবিষ্কার করে তারা আমাদের দলভুক্ত নয়’। (বুখারি: ২৬৯৭)

রবিউল আওয়াল মাসের আমল

পবিত্র কোরআনুল কারিম ও হাদিসে এই মাসের জন্য আলাদা কোনো আমলের বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাই নিজেদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আমলের বর্ণনা দেওয়া শরিয়তে বাড়াবাড়ি এবং হারাম কাজ। তবে নবিজির সিরাত আলোচনা করা একটি বড় ইবাদত। এমনকি এটি ঈমানের অংশও বটে।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম, শৈশব, নবি হিসেবে প্রেরণ, দাওয়াত, জিহাদ, ইবাদত, আখলাক-চরিত্র, নীতি-নৈতিকতা, তাকওয়া-তাহারত, দয়া-ভালোবাসা, রাগ-ক্রোধ, হাসি, উঠা-বসা, হাঁটা, ঘুম-জাগরণসহ যাবতীয় চালচলন ইত্যাদি মুসলিম উম্মাহর সামনে উপস্থাপন করা। এগুলো সামনে রেখে আলোচনা সভার অয়োজন করা, অবশ্যই ভালো এবং প্রশংসনীয় কাজ। রবিউল আওয়াল মাসে ইসলাম সমর্থন করে না এমন কাজে মেতে না ওঠে এগুলো করা যেতে পারে।

এছাড়াও প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিজের ৩টি রোজা রাখার কথা এসেছে হাদিসে। এর প্রতি যত্নশীল হওয়া যেতে পারে।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর ইবনে আ’স (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি মাসে ৩টি করে সিয়াম পালন, সারা বছর ধরে সিয়াম পালনের সমান’। (বুখারি: ১১৫৯, ১৯৭৫)

এছাড়া প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার অভ্যাস করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ২ দিন বিশেষ রোজা রাখতেন। এ বিষয়ে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহ তাআলার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই- আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি’। (সুনানে নাসায়ী: ২৩৫৮)

নবিজির জন্মের ঘটনার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো তার জীবনাদর্শের অনুসরণ। জন্মের বিষয়টি একান্তই তার ব্যক্তিগত। কিন্তু তার সিরাত বা জীবনাদর্শ সব যুগের, সব মানুষের জন্য। বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্য। আর নবিপ্রেমের প্রথম শর্ত হলো নবীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন না ঘটলে নবীপ্রেমের দাবি অর্থহীন।

পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا

অর্থ: ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে’। (সূরা: আল-আহযাব, আয়াত: ২১)