• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ: জয়

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২১  

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ: জয়               
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি উল্লেখ করেছেন ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের’ নেতৃত্ব দেয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের আছে। আর তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ব্লক চেইন, আইওটি, ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, রোবটিকস, মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে বাংলাদেশ জোর দিয়েছে। নতুন উদ্ভাবনের পথে একযোগে কাজ করতে হবে, তাহলেই আমরা এগিয়ে যাব।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার, বিদ্যুতের ব্যবহার এবং ট্রানজিস্টর আবিষ্কার ব্যাপক শিল্পায়ন সৃষ্টির মাধ্যমে মানব সভ্যতার গতিপথ বদলে দিয়েছিল বলে ওই তিন ঘটনাকে তিনটি শিল্পবিপ্লব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এখন বলা হচ্ছে, ডিজিটাল প্রযুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবনের পথ ধরে আসছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, যেখানে বহু প্রযুক্তির এক ফিউশনে ভৌতজগৎ, ডিজিটাল-জগৎ আর জীবজগৎ পরস্পরের মধ্যে লীন হয়ে যাচ্ছে।’

‘দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বিশ্বমানের ৩৯টি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। এসব পার্কে বিনিয়োগে কর অব্যাহতি, বিদেশিদের জন্য শতভাগ মালিকানার নিশ্চয়তা, আয়কর অব্যাহতিসহ নানা সুযোগ আছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনেক ধরনের সুবিধা দেয়া হয়েছে। যারা ফ্যাক্টরি বা তথ্য প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগে অবকাঠামো সুবিধা নিতে চান তারা এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। দেশে বর্তমানে স্যামসাংসহ কয়েকটি কোম্পানি পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম কনজুমার মার্কেট, এখানে বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণি রয়েছে। এখানে স্টার্টআপদের জন্য বিশাল সুযোগ রয়েছে।

তিনি বিশ্বাস করেন, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে মেইড ইন চায়না বা ভিয়েতনামের মতো বাংলাদেশের তৈরি মোবাইল হ্যান্ডসেট, হার্ডড্রাইভে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ দেখা যাবে। বাংলাদেশের আইটি খাত একসময় পোশাক রপ্তানি খাতকে ছাড়িয়ে যাবে। ২০২৫ সালে মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের আইটি পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে ডিজিটাল বাংলাদেশ।’

ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য হলো- একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ডিজিটাল সমাজ গড়ে তোলার মাধ্যমে এর সুফল বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়া। আগামী দিনের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি সহযোগী হতে হবে। সমস্যার সমাধান ও উদ্ভাবনের পথে একযোগে কাজ করতে হবে, তাহলেই বাংলাদেশের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া অনেক সহজ হবে।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার আধুনিক রূপই মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্পে তা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করা হয়, তখন এ সম্পর্কে মানুষের ধারণা ছিল অস্পষ্ট। অনেকে এ নিয়ে হাসি-তামাশাও করেছে। তবে এর বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ধারণা বদলাতে শুরু করে। বর্তমানে মানুষের আর্থ-সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে ডিজিটাল বাংলাদেশ এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তির উন্নয়নকে সামনে নিয়ে আসেন। তিনি ১৯৭২ সালে শিক্ষা ব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করেন, যখন প্রাথমিক শিক্ষাই দেশজুড়ে বিস্তৃত হয়নি। তার সময়ে ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। ১৯৭৪ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, প্রযুক্তিবিদ্যার মাধ্যমে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব ও উন্নয়নের কথা। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন তিনি। তবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর থেমে যায় এর গতি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করলে প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হয়। তখন কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার, একচেটিয়া বাজার ভাঙতে নতুন মোবাইল ফোন কোম্পানির লাইসেন্স দেয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। এরপর ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ‘দিন বদলের সনদে’ ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের রূপকল্প ঘোষণা করা হয় এবং ক্ষমতায় এসে শুরু হয় তা বাস্তবায়নের পালা।

প্রায় শূন্য থেকে যাত্রা শুরু, সময়ের ব্যবধানে আজ তা মহাশূন্যের উচ্চতায় পৌঁছেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এখন বাংলাদেশের মর্যাদার প্রতীক। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে লেগেছে ডিজিটালের ছোঁয়া। কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে বিশ্বের অনেক দেশকেই পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ফলে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষণা দেয়া ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এখন স্বপ্ন নয়, প্রকৃত অর্থেই বাস্তবতা।

২০০৮ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৮ লাখ। তখন ব্যান্ডিউইথের ব্যবহার ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৮ গিগাবাইট (জিবিপিএস)। আর আগস্টে দেশে ২৬ হাজার ৪৯ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের রেকর্ড হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিউকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন সাড়ে ১২ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

এর মধ্যে মোবাইল ফোনে প্রায় সাড়ে ১১ কোটি ও ব্রডব্যান্ড ও পিএসটিএনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রায় ১ কোটি। ২০০৮ সালে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ছিল প্রায় ৫৬ লাখ। এখন দেশে সক্রিয় মোবাইল সিমের সংখ্যা ১৭ কোটি ৮০ হাজারেরও বেশি। তখন দেশে টু জি মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল। আর এখন থ্রি জি, ফোর জির পর চলতি বছরই চালু হতে যাচ্ছে ফাইভ জি নেটওয়ার্ক। ২০০৮ সালে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য ছিল ৭৮ হাজার টাকা।

এখন তা মাত্র ৩০০ টাকা। ইনফো সরকার প্রকল্পের ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে ইউনিয়নপর্যায়ে ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে দুর্গম ৭৭২ এলাকাকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা হয়েছে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও এখন ব্যক্তিগত যোগাযোগ থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি-শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব কিছুতেই মোবাইল ও কম্পিউটারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।

আইসিটি বিভাগের মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আইসিটি বিভাগ প্রাথমিক-মাধ্যমিক, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে।

সেগুলো সংসদ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও ফেসবুকে সম্প্রচার করা হয়। ৬ হাজারের বেশি অনলাইন ক্লাস নেয়া হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়েও ‘ভার্চুয়াল ক্লাস’ প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়। এসব কারণে করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার সঙ্গে যুক্ত থেকেছে।

করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় ৯০ লাখ পরিবারকে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে ঈদ উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত দুই ঈদে কয়েক দফায় সরাসরি উপকারভোগীর কাছে পৌঁছে যায় এ সহায়তা। করোনাকালীন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে বিচারিক কাজও চলেছে। ১৬ হাজারের বেশি জামিন শুনানির তারিখ নির্ধারণ ও ১১ হাজারের বেশি ভার্চুয়াল শুনানি হয়।

মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট পাঠানোর মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশ নতুন এক উচ্চতায় ঠাঁই করে নেয় বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশ হিসেবে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হয় বাংলাদেশ।

২০১৪ সালে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া অরবিটাল স্পটে এখন নতুন আরেকটি স্যাটেলাইট স্থাপনের কাজ শুরু করেছে সরকার। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে-১ এ ২৬টি কে-ইউ ব্যান্ড এবং ১৪টি সি ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। দেশের সব অঞ্চল, বঙ্গোপসাগরের জলসীমা, ভারত-নেপাল, ভুটান-শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া এর কভারেজের আওতায় রয়েছে। দেশের টেলিভিশন চ্যানেল ও ডিটিএইচ সেবায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করায় বছরে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।

এছাড়া হন্ডুরাস, তুরস্ক, ফিলিপাইন, ক্যামেরুন ও দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করছে। দেশে পার্বত্য, হাওর ও চরাঞ্চলে উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট-সুবিধা দেয়া হচ্ছে এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়লেও বিকল্প হিসেবে কাজ করবে এ স্যাটেলাইট।

করোনাকালীন ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। লকডাউনেও মানুষ দৈনন্দিন কেনাকাটা, অফিস-আদালত করেছে অনলাইনে।

সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের বিভিন্ন অ্যাপ ও সেবা ব্যবহার করে টিকা রেজিস্ট্রেশন, শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখা, জরুরি সহায়তা এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারও দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রস্তুতি না থাকলে বিষয়গুলো এত সহজ হতো না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনার দুঃসময়ে আইসিটি বিভাগের ৩৩৩ হেল্পলাইনটি মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে। এ নম্বরে ফোন করে খাদ্য-চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সহায়তা পেয়েছেন অনেকে। আইসিটি বিভাগের তথ্যমতে, সামাজিক সমস্যা, সাইবার ক্রাইম ও করোনা বিষয় নিয়ে এ পর্যন্ত ৭ কোটি ১৭ লাখের বেশি মানুষ এ নম্বরে ফোন করেন।

তাদের মধ্যে ১ লাখ ৬২ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা ও ৭৪ লাখ টেলি-মেডিসিন সেবা দেয়া হয়। এছাড়া পুলিশ-ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবা পেতে ৯৯৯ কল সেন্টার চালুর পর সেটিও বেশ সাড়া ফেলে। এ পর্যন্ত ৭ কোটির বেশি মানুষ এ নম্বরে ফোন করেছেন।

করোনার টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ ডিজিটাল বাংলাদেশের সক্ষমতার আরেক দৃষ্টান্ত। এ পর্যন্ত ৭ কোটির বেশি মানুষ এই অ্যাপের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া-কেন্দ্র নির্ধারণ, টিকা কার্ড সংগ্রহ- সবই হয়েছে এই অ্যাপের মাধ্যমে। এ কারণে দেশে দ্রুততম সময়ে জটিলতা ছাড়াই বিশাল জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনা গেছে।

অন্যদিকে, ই-কমার্স ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা করোনায় অর্থনীতিকে সচল রাখতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। মানুষ ঘরে বসেই কেনাকাটা ও আর্থিক লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়সহ এ চ্যানেলে মোট ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা লেনদেনের রেকর্ড হয়। প্রতিদিনের গড় হিসাবে যা প্রায় ২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।

সরকারের আইসিটি বিভাগ দেশের জেলা-উপজেলা পর্যন্ত উচ্চমানের ভিডিও কনফারেন্সিং নেটওয়ার্ক তৈরি করায় মাঠপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন সহজ হয়। প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৯৬টি ভিডিও কনফারেন্স করেন। ২০২০ সালে ৪৭৫টি ও চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত তিনি ১০ হাজার ৮৩টি অনলাইন অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

২০১৪ সালে জাতীয় তথ্য বাতায়ন চালুর মধ্য দিয়ে সরকারের সঙ্গে জনগণের সরাসরি যোগাযোগের পথ তৈরি হয়। দেশের সব ইউনিয়ন-উপজেলা, জেলা-বিভাগ, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়সহ ৫১ হাজারের বেশি সরকারি অফিসের তথ্য, কর্মকর্তাদের নাম-নম্বর ই-মেইল, সেবার ধরন-বিভিন্ন ফরম, আইন-প্রজ্ঞাপন প্রভৃতি এই ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হয়।

জাতীয় তথ্য বাতায়নে বর্তমানে ৬৫৭টি ই-সেবা ও প্রায় সাড়ে ৮৬ লাখ কন্টেন্ট রয়েছে। প্রায় ১৯ হাজার সরকারি অফিসকে একই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে।

সরকারি কাজে গতি ও স্বচ্ছতা আনতে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) পরীক্ষামূলকভাবে ই-নথি ব্যবস্থা চালু করে। ২০১৯ সালে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ই-নথিতে কাগজের ফাইলের পরিবর্তে সরকারি কর্মকর্তারা কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ফাইল নিষ্পত্তি করতে পারেন। নথি গায়েব, অসাধু উপায় অবলম্বনের পথও বন্ধ হয় অসাধু কর্মকর্তাদের।

এ পর্যন্ত ই-নথি ব্যবহার করে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি ফাইল নিষ্পত্তি করা হয়েছে। দেশের সব অফিসে ই-নথি চালুর প্রক্রিয়া চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সফরে থেকেও বিভিন্ন ফাইল এ ব্যবস্থায় নিষ্পত্তি করছেন। ফলে করোনাকালীন তার কার্যালয় বন্ধ থাকলেও কাজ থেমে থাকেনি।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের জন্য বেশ কয়েকটি আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করেছে সরকার। এছাড়া অনেকগুলো বিধি-নীতিমালা, কৌশলপত্র ও নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০০৯ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনটির কয়েকটি ধারা ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়। ২০১০ সালে করা হয় হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইন।

২০১৮ সালে ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন ও ২০১৮ সালে করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এছাড়া ২০২০ সালে তিনটি আইনের খসড়া করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- এটুআই বাংলাদেশ ইনোভেশন এজেন্সি আইন, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি আইন এবং ডাটা প্রটেকশন আইন।

৩৯টি হাইটেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক তৈরি শেষ হলে ৩ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। চালু হওয়া ৫টি পার্কে ১২০টি প্রতিষ্ঠান ৩২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আইটিতে দক্ষ ১৩ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে আইওটি, রোবোটিকস, সাইবার সিকিউরিটির উচ্চপ্রযুক্তির ৩১টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্থ হচ্ছে আগামীর উন্নত বাংলাদেশের পথযাত্রা।

ডাটা প্রটেকশন আইনটি পাস হলে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ বিদেশি কর্তৃপক্ষগুলো এ দেশে অফিস করতে এবং দেশের তথ্য দেশের ডাটা সেন্টারে রাখতে বাধ্য হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি বিভাগ মতে, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে দেশের মানুষের ১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন দিন, ৮ দশমিক ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ এবং ১ মিলিয়ন বার যাতায়াত কমেছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) চালু করায় মানুষ বাড়ির কাছেই সেবা পাওয়ায় সময়, খরচ ও ভোগান্তি কমেছে।

আমেরিকা, ইউরোপসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটিসেবা সরবরাহ হচ্ছে। এখাতে রপ্তানি ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আগামীতে ৫০০ কোটি ছাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

লেখক: হীরেন পন্ডিত, প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো, বিএনএনআরসি
সৌজন্যেঃ নিউজ বাংলা২৪