• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

পান্তা ভাত নিয়ে গবেষণা: জানুন উপকারিতা- অপকারিতা

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২২  

পান্তা ভাত নিয়ে প্রতি বছর বাংলা নববর্ষের দিনে আলোচনা হলেও এই খাবারটি নিয়ে এবার আলোচনা হয়েছে ভিন্ন এক কারণে। মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া প্রতিযোগিতার ফাইনালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক নারী কিশোয়ার চৌধুরী পান্তা ভাত তৈরি করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। কেউ ভাবতেও পারেনি যে রান্নার এ রকম একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পান্তা ভাতের মতো একটি আটপৌরে খাবার পরিবেশন করা যায়।

এই পান্তা ভাতের ওপরেই গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীদের একটি দল। ভারতের আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়, যাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন কৃষি জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মধুমিতা বড়ুয়া।

এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল পান্তা ভাতে কী আছে এবং এসব উপাদান শরীরের জন্য কতোটা উপকারী বা অপকারী সেগুলো খুঁজে বের করা। এই গবেষণার ফলাফল পরে এশিয়ান জার্নাল অব কেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত হয়েছে।

পান্তা ভাত নিয়ে সম্ভবত এটাই একমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণা। তবে মধুমিতা বড়ুয়া জানিয়েছেন, তাদের এই গবেষণা এখনও চলছে। তারা এখন জানার চেষ্টা করছেন পান্তা ভাত ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ভালো না খারাপ।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যেসব অঞ্চলে প্রচুর ধান উৎপন্ন হয় এবং যেসব দেশে ভাত প্রধান খাবার, মূলত সেসব দেশে ভাত পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার সংস্কৃতি চালু আছে।

এসব এলাকায় আবহাওয়া অত্যন্ত গরম এবং আর্দ্র হওয়ার কারণে খুব সহজেই ভাত নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু পানিতে ভিজিয়ে রাখার কারণে এই খাবার দ্রুত নষ্ট হয় না। মূলত সংরক্ষণের কথা বিবেচনা করেই এই পান্তা ভাতের চল শুরু হয়।

কিভাবে হয় পান্তা ভাত?

সাধারণত আগের দিন রাতের বেঁচে যাওয়া ভাতে পানি দিয়ে পান্তা ভাত তৈরি করা হয়। একটি পাত্রের মধ্যে পরিষ্কার পানি ও ভাত একসঙ্গে মিশিয়ে সেটি ঢেকে রাখা হয়।

এভাবে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ধরে সারা রাত রেখে দেওয়ার ফলে পানি ও ভাতের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। এ সময় পানির নিচে থাকা ভাত বাতাসের অর্থাৎ অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসতে পারে না।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পানির কারণে ভাতের এই ফারমেন্টেশন বা গাজন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। এবং পাত্রের ভেতরে এনারোবিক ফারমেন্টেশনের ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞানী মধুমিতা বড়ুয়া বলছেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় ভাতের মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট ভেঙে যায়। এ ছাড়াও ভাতের মধ্যে ফাইটেটের মতো যেসব এন্টি-নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর থাকে সেগুলোরও ক্ষয় হয় এবং ভাতটাও হাইড্রেট হয়ে থাকে’ 

কী আছে পান্তা ভাতে?

গবেষণায় দেখা গেছে পান্তা ভাতে নানা ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর খনিজ পদার্থ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিংক, ফসফরাস, ভিটামিন বি ইত্যাদি।

মধুমিতা বড়ুয়া বলেন, তারা দেখেছেন সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তা ভাতে এসব পুষ্টিদায়ক পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।

একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে আয়রনের পরিমাণ থাকে ৩.৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে তৈরি পান্তা ভাতে এর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হয় ৭৩.৯ মিলিগ্রাম।

একইভাবে ক্যালসিয়ামের পরিমাণও অনেক বেড়ে যায়। ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে যেখানে ক্যালসিয়াম থাকে ২১ মিলিগ্রাম, সেখানে পান্তা ভাতে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৫০ মিলিগ্রাম।

গবেষণায় দেখা গেছে, পান্তা ভাতে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংকের উপস্থিতিও অনেক বেড়ে যায়।

ভাতের মধ্যে ফাইটেটের মতো যে এন্টি-নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর আছে সেটা আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংকের মতো পুষ্টিকর পদার্থকে বেঁধে রাখে। ফলে ভাত খাওয়ার পরেও মানুষের শরীর এসব গ্রহণ করতে পারে না।

কিন্তু ফারমেন্টেশনের কারণে পান্তা ভাতের ফাইটেট দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তখন পুষ্টিকর পদার্থগুলো উন্মুক্ত হয়ে পড়লে আমাদের শরীর সেগুলো গ্রহণ করতে পারে," বলেন মধুমিতা বড়ুয়া।

উপকারিতা
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পান্তা ভাতে থাকা পুষ্টিকর পদার্থগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করে। দেহের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে আয়রন যেটা পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।

শরীরে হাড়গুলোকে শক্ত রাখে ক্যালসিয়াম। শরীরে নিঃসৃত এনজাইমকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম। এ ছাড়াও পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের মতো মেটাবলাইটস রয়েছে যা শরীরকে প্রদাহ বা যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে। এসব কোলেস্টোরেল কমাতেও এসব সাহায্য করে।

এছাড়াও পান্তা ভাতে রয়েছে আইসোরহ্যামনেটিন-সেভেন-গ্লুকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো মেটাবলাইটস যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
পান্তা ভাতে ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাধারণত দই-এর মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। এছাড়াও গরমের সময় পান্তা ভাত শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে।

অপকারিতা
আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় পান্তা ভাতের কোনো খারাপ দিক পাওয়া যায়নি। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এই খাবার ক্ষতিকর কীনা সেটা জানতে তারা এখনও কাজ করছেন।

মধুমিতা বড়ুয়া বলেছেন, ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ভাতের ফারমেন্টেশন হলে সেখানে অ্যালকোহলের উপাদান তৈরি হয় এবং সেই পান্তা ভাত খাওয়ার পর শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে ও ঘুম পেতে পারে।

এ ছাড়াও পান্তা ভাত যদি পরিষ্কার পাত্রে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি করা না হয়, তাহলে সেখানে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে। তিনি জানান, সেই ভাত খেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে।