• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব: মার্শা বার্নিকাট

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০১৮  

প্রতিবেদক: ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ওয়াশিংটনের দুই প্রশাসনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্কে কী পরিবর্তন এসেছে কিংবা অন্যভাবে বললে হোয়াইট হাউসে ক্ষমতার পালাবদল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কতটা প্রভাব ফেলেছে?

মার্শা বার্নিকাট: শুরুতেই আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। এখানে আসাটা আমার কাছে সব সময়ই আনন্দের। বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে আপনারা যে কাজটি করেন, আমি এটির বড় ভক্ত। আসলে ওয়াশিংটনে ক্ষমতার পালাবদলে তুলনামূলকভাবে তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না। আমাদের যে মূল্যবোধ, সেটা তো আমাদেরই। কাজেই মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অনুসরণ, বিভিন্ন সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়ানো—এ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের পরিবর্তন কোনো প্রভাব ফেলে না। আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই, নতুন মার্কিন প্রশাসন ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদের দৃষ্টিতে নানা দিক থেকে এই কৌশলের মধ্যবর্তী অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ দেশ দক্ষিণ এশিয়া ও এশিয়ার অন্য অংশের সেতুবন্ধ রচনা করেছে। আর মুক্তবাণিজ্য, একটি স্বচ্ছ এবং সবার জন্য সমান ক্ষেত্র তৈরির সুযোগের যে মূলনীতি এই কৌশলে রয়েছে, তা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পক্ষেই রয়েছে।

প্রতিবেদক: ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবস্থান কী?

মার্শা বার্নিকাট: ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি একধরনের পদক্ষেপমুখী উদ্যোগ। এটি হচ্ছে একটি শক্তিশালী ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমলাতান্ত্রিক, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য স্বার্থ সুরক্ষার পদক্ষেপ। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তি ও অবকাঠামো নির্মাণে মার্কিন বিনিয়োগের কথা বলেছেন। এই বিনিয়োগের চূড়ান্ত লক্ষ্যই হচ্ছে ব্যবসা ও বাণিজ্যের বিকাশ। তবে আমাদের বেসরকারি খাত সরকারের অপেক্ষায় বসে নেই। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশের সামিট গ্রুপের সঙ্গে আমাদের জেনারেল ইলেকট্রিকের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এই উদ্যোগে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে যুক্ত হবে জাপানের মিতসুবিশি। এটি হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির একটি উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত, যেখানে একটি নয়, যেখানে তিন দেশের তিনটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে যুক্ত হয়েছে।

প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি লক্ষ করছি। চীনের অঞ্চল ও পথের উদ্যোগ বিআরআই সম্প্রসারিত হচ্ছে। অনেকে মনে করেন, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি চীনের উদ্যোগের পাল্টা পদক্ষেপ। আপনি এটাকে কীভাবে দেখেন?

মার্শা বার্নিকাট: ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি কোনোভাবেই চীনের পাল্টা উদ্যোগ নয়। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এ অঞ্চলের সব কটি দেশ যেন দারিদ্র্য দূর করতে আর নিজেদের সমৃদ্ধির স্বার্থে সম্পদকে কাজে লাগাতে পারে। এটা কিন্তু ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যে বাংলাদেশের অনেক সামর্থ্য রয়েছে এবং এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র একা কি এটা করতে পারে? জাপানের পক্ষে কি একা এটা করা সম্ভব? চীন কি পারে? মোটেই না। আমরা চীনের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানাই। আমরা চাই চীন বৃহদায়তন এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার সঙ্গে যুক্ত হবে আর টেকসই উপায়ে অর্থায়ন করবে, যেখানে নিশ্চিত হবে ন্যায়ভিত্তিক বাণিজ্য ও পরিবহনব্যবস্থা। পৃথিবীর মোট অর্থনীতির অর্ধেকের বেশির উপস্থিতি ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি এখানে বাস করে। এই অঞ্চলে নৌচলাচল যদি অবাধ না হয়, তবে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিজাত পণ্যের পরিবহন কীভাবে হবে? তৈরি পোশাকশিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল পরিবহন করা হয় জাহাজে। সেলাই শেষে তা জাহাজে করে পাঠানো হয় গন্তব্যে। সমুদ্রপথে এই শিল্পের পণ্য পরিবহনে বিধিনিষেধ থাকাটা সমস্যার। তাই ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির মূল কথাই হচ্ছে, আমরা সবাই অভিন্ন নীতি মেনে চলব, যার সুফল আমরা সবাই পাব। শুধু একটি দেশ এর সুফল ভোগ করবে না।

প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখ করার মতো। বাংলাদেশের এই উন্নতিকে কীভাবে দেখেন? ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাগুলো কী বলে আপনার ধারণা?

মার্শা বার্নিকাট: ইতিহাসের ছাত্রী বলেই বলছি না, বাংলাদেশে কাজ করতে এসে বুঝেছি, এ দেশের মানুষের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা খুব প্রখর। উন্নতির জন্য শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াসের প্রশংসা করতে হয়। তাঁর এ কৃতিত্ব শুধু নিজের পরিকল্পনাকে এগিয়ে নেওয়াতেই সীমিত নয়। তিনি তাঁর বাবার স্বপ্নকে পূর্ণতা দিচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মহাকাশে নিজস্ব টেলিযোগাযোগ স্যাটেলাইট পাঠানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। মহান নেতৃত্ব যে অবধারিতভাবে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি করে দেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সেই নেতৃত্বের বাজার অর্থনীতিকে সফল করার মতো দূরদৃষ্টি থাকতে হয়। এ জন্যই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প আজ বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তবে আজ আপনারা যেখানে আছেন, তা কিন্তু আপনাদের পুরোপুরি মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে পারবে না। তাই কৃষি অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, হালকা ইলেকট্রনিক শিল্প, জাহাজনির্মাণ শিল্প, ওষুধশিল্প—এ সবকিছু মিলিয়েই বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ। আর অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য আপনারা যে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভর করছেন, সেটাই মূল শক্তি। কখনো কখনো বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য কৃষিকে সেভাবে কৃতিত্ব দেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন বিস্ময় জাগায়। বাংলাদেশে উৎপাদিত আম, শাকসবজি ও মাছ যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নকে বিশ্বের মধ্যে প্রথম বলে অভিহিত করে দ্য ইকোনমিস্ট-এর ২০১২ সালের বিখ্যাত সেই প্রতিবেদনসহ অনেকগুলো সূচক আমাদের সামনে রয়েছে। এটা কিন্তু কম অর্জন নয়। তবে ব্যবসা পরিচালনার বিভিন্ন সূচক, দুর্নীতির মাত্রা ও গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়া কিন্তু উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সহায়ক নয়। এ বিষয়গুলোর সমাধানে অনেক কিছু করতে হবে। কারণ, এগুলোর সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্পর্ক রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে এসে জানতে চান, এখানে তাঁরা কত আয় করতে পারবেন, আবার প্রয়োজনের সময় কীভাবে অর্থ ফেরত নিয়ে যাবেন বা প্রয়োজনে আরও বিনিয়োগ করতে পারবেন। তাঁরা আমলাতান্ত্রিক, কর কিংবা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে ঝামেলায় জড়াতে চাইবেন না। তাঁরা চাইবেন এখানকার শ্রম আইনগুলো ভালো এবং তা যথাযথভাবে মেনে চলা হচ্ছে। লোকজনের এখানে আসাটা আপনাকে সহজ করে তুলতে হবে।

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ২৩ শতাংশ মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর। আর তার অধিকাংশ হচ্ছে জ্বালানি খাতে। এ জন্য আমরা গর্বিত। আমরা আরও অনেক মার্কিন বিনিয়োগকারীকে বাংলাদেশে আনতে চাই। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে অন্তত ১৬ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বিনিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা এখানে মুঠোফোনের টাওয়ার নির্মাণ, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাই।

অনেক মার্কিন প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। প্রথমেই তারা জানতে চায়, তারা কোথায় বিনিয়োগ করবে। এখান থেকে বৈধভাবে টাকা পাঠানোর সুযোগ না থাকায় অনিয়মের সুযোগ থাকছে। এই বিষয়টার সুরাহা হওয়া উচিত। পুরোপুরি মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ভার্টিক্যাল সাপ্লাই চেইনে’ বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। যদি কোনো তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক যুক্তরাষ্ট্রের সুতা কিনে তা বাংলাদেশে আনতে চান, তাঁকে সেটা করার সুযোগ করে দিতে হবে। আমাদের বিদ্যুতের খরচ কম আর শ্রমিকের মজুরি বেশি, এ জন্য আপনাকে বেশি শ্রম দিতে হবে না। আর এর বাণিজ্যিক সুফলও আপনি পাবেন। তাই বাংলাদেশের বিনিয়োগকারী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছি।

প্রতিবেদক: বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের সময় বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হওয়ার মতো বিষয়গুলো দেখেছেন। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মার্শা বার্নিকাট: বাংলাদেশকে আমরা অংশীদার হিসেবে দেখি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। মতপ্রকাশের এবং আন্দোলনের অধিকারের জন্য আমাদের লড়াই করতে হয়েছে। আমাদের সম্পর্কের মৌলিক ভিত্তিই হচ্ছে আইনের শাসন আর গণতান্ত্রিক মূলবোধের প্রতি শ্রদ্ধা। আমরা যখন মানবাধিকার পরিস্থিতির কথা বলি, এটা ভাবার কারণ নেই যে আমরা এটা ওপর থেকে দেখছি। এর মানে এটা ভাবার কারণ নেই, বাংলাদেশ খারাপ করছে, আর আমরা সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই করছি। যুক্তরাষ্ট্রেও মানবাধিকারের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা নিজেদের যে প্রশ্নগুলো করি, সেগুলোই আপনাদের করছি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটলে তা তদন্ত করে স্বচ্ছতার মাধ্যমে জনগণকে জানিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে লোকজন বুঝতে পারে, তাদের সুরক্ষার স্বার্থে সরকার কী করছে। এটা প্রতিটি সরকারের মৌলিক দায়িত্ব।

বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নিবর্তনমূলক গ্রেপ্তার, নির্যাতন, হত্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দূতাবাস ও আমি ব্যক্তিগতভাবে বিবৃতি দিয়ে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। এ বিষয়গুলোর কারণে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমে যায় এবং তা সরকারের মূলনীতি ও সংবিধানের প্রতি সহায়ক নয়। এরপরও এসব ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রেই সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অর্জনে নাগরিক সমাজের ও গণমাধ্যমের অসাধারণ ভূমিকা রয়েছে। উন্নয়ন ও গণতন্ত্র হাত ধরাধরি করে চলে এবং তারা একে অন্যের পরিপূরক। আপনি যদি একটি মজবুত অর্থনীতি ও সমাজ গড়ে তুলতে চান, মতাদর্শ যা-ই থাকুক না কেন, আমাদের সব বন্ধুই একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চান। জনসংখ্যার আকার, ভূকৌশলগত অবস্থান—এসব মিলিয়েই বাংলাদেশের স্থিতিশীল থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। সমৃদ্ধির সঙ্গে স্থিতিশীলতা যুক্ত। তাই মানবাধিকার লঙ্ঘন স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির অর্জনকে খাটো করে। তাই আমাদের অধিকাংশ বন্ধু মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগগুলো তুলে ধরেন।

প্রতিবেদক:  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা নিয়ে সম্পাদক ও গণমাধ্যমকর্মীরা উদ্বেগ জানিয়েছেন। আপনারাও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে আপনাদের সর্বশেষ অবস্থান কী?

মার্শা বার্নিকাট: আপনাদের মতো দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রও সরকারের বিভিন্ন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় এই আইন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। সম্পাদকেরা যেসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, আমাদের এ বিষয়গুলোতে উদ্বেগ রয়েছে। গণতন্ত্রে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো জটিল। একদিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হয়। আবার অন্যদিকে জনসমক্ষে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে জনগণের সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হয়। এখানে একটি চরম বাজে দৃষ্টান্ত হিসেবে মিয়ানমারের বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। আমরা দেখেছি, ফেসবুকের মাধ্যমে মিয়ানমারে জাতিগত নির্মূল উসকে দেওয়া হয়েছে। এমনটি কোনো সমাজে ঘটুক, তা কাম্য নয়। আর অন্তর্জাল জগতের মাধ্যমে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে নারী ও শিশু।

আবার লোকজন যদি সরকারের সমালোচনা করতে না পারেন অথবা তাঁরা যা দেখতে চান, তা যদি প্রকাশ করতে না পারেন, বিশেষ করে সেই সরকারের বিপক্ষে, যে সরকার জনগণের স্বার্থে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে—তাহলে কিন্তু সেটা ক্ষতিকর। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে প্রধান উদ্বেগটা হচ্ছে এর প্রয়োগ কী মাত্রায় হবে। আমরা কী লোকজনকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া থেকে নিবৃত্ত করতে চাই? উত্তরে সবাই বলবেন, হ্যাঁ। আমরা কী চাই যে কেউ বলতে পারবে যে, সে এই সরকারকে চায় না অথবা এই সরকার নিরপেক্ষ নয়? হ্যাঁ, আমরা চাই লোকজন যাতে সেটা বলার অধিকার পায়। সরকারের করা আইন যদি দুটি লক্ষ্যকেই পূরণ করতে পারে, তবে তাকে স্বাগত জানাই। তবে এর প্রয়োগ নিয়ে লোকজনের উদ্বেগ রয়েছে। এটি অন্যায়ভাবে এবং মাত্রাতিরিক্তভাবে প্রয়োগ হতে পারে—এমন উদ্বেগ ও আশঙ্কা রয়েছে। এমন যাতে না হয়, সে জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের মতোই আমরা সরকারের কাছে আকুতি জানাই।

প্রতিবেদক: বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য কতটা সহায়ক মনে করেন?

মার্শা বার্নিকাট: প্রচলিত ধারণার কারণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনার ব্যাপারে অনেকের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। এই বাস্তবতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন, তাঁরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চান। এর পরের বিষয়টি হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে? গণতন্ত্রে সবার দায়িত্ব রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সব আইন নির্বাচন কমিশনের হাতে রয়েছে। কমিশনকে সেই আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে সক্ষম হতে হবে। সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিরোধী ও সরকারি দলসহ সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে ছোট-বড় সমাবেশ করার সুযোগ দিতে হবে। তাদের কোনোভাবেই হেনস্তা করা যাবে না। প্রত্যেক নাগরিকের ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ে যদি জনগণের মধ্যে ভয় কাজ করে, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নিরাপত্তা দাবি করার অধিকার তাদের রয়েছে। সহিংসতা এড়ানো ও সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার দায়িত্ব সব দলেরই। যদি প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশে কি ডিসেম্বরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে? উত্তর হচ্ছে, অবশ্যই। এ ধরনের নির্বাচনের জন্য পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রত্যেককে দায়িত্ব নিতে হবে।